বিজয়ের মাস ডিসেম্বর এলে ইতিহাস খুলি,
কত কবিতা কিংবা গানে শহীদদের তুলে ধরি।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর বিজয় উল্লাসে,
ব্যানার ফেস্টুনে ভরে যাই দেশ,
রাজপথ থেকে মেঠোপথে প্রতিযোগীতার খেলা
জমে উঠে বেশ।
অর্থ আর ক্ষমতার মোহে হয়ে যাই সবাই অন্ধ
কে আগে ফুল দিবে, এটা নিয়ে শুরু হয় তুমুল দ্বন্দ্ব।
মুক্তিযোদ্ধারা আসলে কি চেয়েছিল, এমন একটা দেশ?
ভাবলাম এটা জানাটা আমার জরুরি বেশ।


অতঃপর কোন এক কাটপোড়া রোদ্দুর দুপুরে, কুয়াশা জরানো ভোরে কিংবা
লাম্পপোষ্টে নিয়ন আলো গায়ে মেখে,
নগরের প্রান্তিকে আমি হেঁটেছি, হেঁটেছি বহুবার, ক্ষনিক দাঁড়িয়ে শুনেছি, ভাঙা ইটের স্তুপে আত্নার চিৎকার।
কানের ভিতর গরম সিসার মত ভয়ংকর চিৎকার।


ছিচল্লিস বছর আগের,
বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিল মুক্তির সংগ্রামে,
ঘর -বাড়ি, স্ত্রী, সন্তান, স্বজন, পরিজন দিয়েছিল সংযমে।
সেদিন দীপ জ্বালিয়ে রেখেছিল
ত্রিশ লক্ষ প্রাণের প্রদীপ!
ঝড় এসেছিল নেভাবে বলে-
দুই লক্ষ আঁচল আগলে রেখেছিল শত্রু হাওয়ার গতি;


দুইশত ছেষট্টি দিনের যুদ্ধের ইতিহাস লিখা হয়েছে
কিন্তু যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি!
এখনো বাতাসে খুজে পাই বারুদের গন্ধ,
উলঙ্গ ক্ষতবিক্ষত যুবতীর লাশ পানিতে ভাসে
এখনো দিন গুলো রাতের মতোই অন্ধ।
এখনো ধানক্ষেতে মানুষের লাশ পচে,
কাক শকুনেরা ফেটে পরে উল্লাসে।
এখনো সন্তান হয় নিরুদ্দেশ, গুম হয় দিনে রাতে
কালো মেঘ জমে মায়ের আকাশে।


আমি সেদিন  সাভারে গেছি, সৃতিশোধের পাশে,
মুক্তিযুদ্ধের এিশ লক্ষ শহীদ আত্নার খুব কাছে।
শুধু যেন তারা চিৎকার করে বলেতে থাকে,
কেন নুর হোসেন আজোও পথে মরে?
কেন এখনও রাজপথ খুনিদের দখলে?
নরপিশাচের কলঙ্কিত হাতে কেন পতাকা উড়ে?
নিরহ মানুষ গুলোকে কেন রাস্তায় গুলি করে?
পানির ট্যাঙ্কে কেন গলিত লাশের গন্ধ?
আজো হরতাল ডেকে কেন জীবন করে স্তব্ধ?


তাদের চিৎকার যেন কারো কানেই পৌঁছায় না,
অহংকারের পাহারে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে।
অতঃপর, শত ধিক্কার তোমাদের এই সভ্য জাতিকে
অবশেষে ব্যাবসার পুজি করায় মুক্তি শহীদেরকে!


রচনাকাল : ১০-১২-২০১৭