সূর্য কেন ওঠে?
অমিতাভ ভট্টাচার্য


সূর্য হঠাত্ নোটিশ পাঠায়,
কাল ধর্মঘট,
এই মাইনেয় পোষায় না যে--
আর ডিউটি নট ।
এই গোলাতে সন্ধ্যে হলেই
ভাবছ আমার ছুটি,
আমি তখন ঐ গোলাতে
অরুণ হয়ে উঠি ।
কাল থেকে সব নিজের দমে
জোগাড় করো আলো,
কম পয়সায় খাটাচ্ছ খুব
পেয়ে আমায় ভালো ।


বিশ্বের সব মাতব্বরে
রাতেই ডাকে সভা,
সূর্য ব্যাটার ক্যাদরানিতে
ঘুমের দফারফা ।
কেউ বলল স্ট্রাইক ভাঙো
বড্ড কাজের ক্ষতি
এই বয়েসে সূর্যবুড়োর
হয়েছে ভীমরতি,
কেউ বলল, মাইনে কাটো
বদলি করো দূরে,
ধর্মঘটের খেয়াল ব্যাটার
কোথায় যাবে উড়ে ।
হোমরা বলে, ডিমান্ডগুলোয়
চোখ বুলিয়ে নাও,
একটি টাকা চাইলে পরে
চারটি আনা দাও ।
মাতব্বরে তর্ক করে
একরাত্তির জুড়ে,
ভোর হয়ে যায়, আকাশ তো লাল
হলো না রোদ্দুরে ।


রাত থাকতেই উঠে পড়ে
হলুদ পাখির ছানা,
কাল থেকে তার মনের মাঝে
বিরাট উত্তেজনা ।
এসছে সুযোগ তার কাছেতে
বিরাটই সম্মান ।
ফুটলে আলো গাইতে হবে
তাকেই প্রথম গান ।


লাল ফুলেরই ছোট্ট কুঁড়ি
মরছে মাথা কুটে,
প্রথম আলোয় আজ যে তাকে
উঠতে হবে ফুটে ।
সময় হলো, কোথায় গেল
নরম আলোর ছটা,
ছোট্ট কুঁড়ির হবে না কি
কুসুম হয়ে ফোটা ?


ভোরবেলাতেই শিশুর দলের
মনটি বেজায় ভারী,
আজকে ছিল শহর জুড়ে
তাদের প্রভাত ফেরি ।
বিজলি আলোয় জমবে কি আর
ওদের কলতান,
কেমন করে গাইবে তারা
সূর্য ওঠার গান ?


কুঁড়ি পাখি মানবশিশু
একসঙ্গেই বলে,
'সূর্য ওঠো, তোমায় ছাড়া
আমাদের কী চলে?
বাড়লে বয়েস অন্ধকারেই
চোখ সয়ে যায় জানি,
কিন্তু কচির দরকার হয়
ঝলমলে রোদখানি ।
প্রথম গান, পাপড়ি ফোটা
প্রথম প্রভাত ফেরি,
সূর্য ওঠো, তোমার আলো
ভীষণই দরকারি ।'


শিশুর দলের সে-প্রার্থনা
ছড়াল দশদিক,
সেই আকুতি শুনতে পেল
সূর্য সেদিন ঠিক ।
শিশুগুলোর কান্না শুনে
সূর্যর মন ভার,
বাইরে আলোর তেজ দ্যাখালেও
তরল হৃদয় তার ।
ধীরে ধীরে সূর্য সেদিন জ্বালল
নিজের আলো,
মনে মনে বলল শুধু
একটু দেরি হলো ।
আলো দেখে সবার মুখে
আবার ফোটে হাসি,
সূর্য বলে, ঐ হাসিটাই
দেখতে তো রোজ আসি ।