শৈশব
    ✍-উজ্জ্বল সরদার আর্য


আমি ভুলে যাইনি হে শৈশব, ভুলে যাইনি তোমায়।
জীবনের তরি বেয়ে যত দূরেই যাই,
পিছু ফিরে খুঁজতে হয় স্মৃতি মিশ্রিত তোমার
অনন্ত-কালের অনন্ত-প্রেম।
নির্জনে-নীরবে তোমার ভাবনায় অযুত বছর পরেও
তোমাকে দেখি সদ্যোজাত ফটো ফুলের মত পবিত্র,
এবং মনের স্পর্শে করি সেই অতীতের সৌন্দর্য অনুভব।
হে-শৈশব, প্রভাতের রং ঝরানো অন্তরীক্ষে অরুণের মত
তুমিই উদ্ভাসিত, তুমি অমর-আমার গৌরব।


আজও ইচ্ছা করে মায়ের আঁচল ধরে কোমল চরণে
পিছু হেটে যাই, আর হোঁচট খেয়ে রক্তাক্ত হয়ে
ক্রন্দিত নয়নে দেখি মায়ের আকুতি।
তারপর আদর খেয়ে কোলে ওঠা, গলা জড়িয়ে চুমু-
চুম্বনের দৃশ্যপট এঁকে,আনন্দে অধরে স্মিত হাসি ফুটিয়ে
খুঁজে নেই অফুরন্ত ভালোবাসা।


আজ মা হারিয়ে গেছে, হারিয়ে যাবো সময়ের স্রোতে
ভেসে আমিও একদিন। কিন্তু ভুলিনি তোমায়,
আর ভুলবো না কোনদিন।
বিরহের ভারাক্রান্ত মনে অশ্রু ঝরে যায় নয়নে,
তবু শান্তি, জাগে প্রীতি, মনে পড়ে বন্ধন তোমাকে ঘিরে।
বাবার হাতটি ধরে মিষ্টি ভাষায় কত কিছু করেছি আবদার,
বাধ্য ছেলের মত এনে দিয়েছে দুর্লভ বস্তু কেউ
মুখ বুঝে শত কষ্ট সয়ে আমার অনুরোধে।


পাঠশালা শেষে গোধূলি বেলায়, এই পথে কত
হেঁটে গিয়েছি দুজনে একসাথে!
অজানা কে জানার ইচ্ছা নিয়ে, গল্প আর সংস্কৃতির
রসায়নে ডুবে করেছি কত অবুঝের মত প্রশ্ন।
আজ আর কেউ উত্তর দেয় না, প্রশ্ন করা হয় না কতদিন,
আমার শিক্ষা-জ্ঞান, জানা-অজানার ক্লাস থেমে গেছে।
শুধু হেটে চলি নিঃসঙ্গ ভাবনায়, অশ্রুসিক্ত চোখে
বিদায়ের গান গেয়ে।


হে-শৈশব, আজও বর্ষা আসে জলে প্লাবিত হয় ধরণী,
তবু কাগজের নৌকা আর ভাসানো হয় না।
কদম ফোটে, ঝরে-ও যায় কোন এক গোধূলিতে,
তবু আর মালা গেঁথে তোমায় পরানো হয় না।
ওগো আজ হারিয়ে গেছে বন্ধু, হারিয়ে গেছে খেলার সাথী।
লালফ্রক পরে, বাবরি দোলানো চুলে, বাটা চটি পায়ে
কেউ কাছে এসে হাত বাড়িয়ে সঙ্গ দিয়ে চুপিচুপি
বলে যায় না ‘আমি তোমায় ভালোবাসি’।
তবু শৈশব জীবিত আছে স্মৃতির পাতায়, কবিতায়,
আবেগের অশ্রুজলে।
আর চিরদিন জীবিত থাকবে তুমি আমার অন্তরে।



✍-উজ্জ্বল সরদার আর্য
রচনাকাল, ১৩ জুলাই ২০২০ সাল,
বাংলা- ২৯ আষাঢ় ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, সোমবার।
দাকোপ খুলনা, বাংলাদেশ।