এডহক ইতিহাস


দিনটা কি বার ছিল ঠাহর করতে পারো,
তবে তারিখটা ছিল  ৭ জুলাই 2011
সকল প্রক্রিয়া শেষে  নিয়োগপত্র পেলাম,
পিআইও হিসেবে স্বপ্নের চাকুরিতে যোগ দিলাম।


এক মাস বুনিয়াদি প্রশিক্ষন ছিল আনন্দময়
পদায়ন হলো 84 নবীন কর্মকর্তার বিভিন্ন উপজেলায়
পোস্টিং অর্ডার হাতে নিয়ে ছুটলাম সবাই হয়ে ছাড়াছাড়ি
প্রশিক্ষনের এই একমাসে তোরা দিয়েছিলি বন্ধুত্বের হাত বাড়ি
নিয়োগটা ছিল এডহক ভিত্তিক ছয়মাসের জন্য
নিয়োমিত নিয়োগের পর আমরা চাকুরি হারা হবো গন্য
এই ভুত মাথায় চেপে করেছি কাজ সারাক্ষন
ভয়ে ভয়ে কাজের ভীড়ে আনমনা হতো মন
একমাস দুই মাস করে কেটে গেলো ছয়,
মনে হলো এইবার বুঝি চিঠি এসে যায়।
না, কর্তৃপক্ষ এই সময়ে নিয়োমিত নিয়োগ দিতে নাই পারে
তাই আমাদের মেয়াদ অতিক্রান্ত হলেও টার্মিনেশন করে নাই এবারে।
আমদের আবেদনে কর্তৃপক্ষ  মেয়াদ বাড়ানোর উদ্দোগ নেয়
পিএসসির অনুমোদন ক্রমে মেয়াদ বাড়ে আরও মাস ছয়
এভাবে দিন কেটে যায় অন্তরে নিয়ে হতাশা
ফুরায় না তবে চাকুরি হারানোর ভয় নিরাশা
ব্যক্তিজীবন ,সামাজিক জীবন, পারিবারিক জীবন
সবখানে একই কথা কি হবে তখন
ছয় ছয় একবছর , তারপরে আরও তিন মাস
চাকুরী হারানোর ভয়ে সর্বক্ষন করি হাসফাস।
এর মধ্যে উদ্দ্যোগ নিলাম  আমরা সবাই মিলে,
নিয়োমিত হওয়ার উপায় খুজতে কয়েকজন ঢাকায় এলাম চলে।
সিনিয়রদের সাথে বসে কথা বলে করনীয় হলো ঠিঅ ক ,
নিয়োমিত করার ছিল ইতিহাসে খুজি আইনের ফাক,
আবারও অতিক্রান্ত শেষের তিনমাস
কর্তৃপক্ষ আর বাড়াবেনা মেয়াদ বলে দিল খাস
কর্তৃপক্ষএ বুঝিয়ে শেষ বারের মত লেখা হলো চিঠি
পি এস সি মেয়াদ বাড়িয়ে লিখে দিল এবারেই শেষ পিআইদের মাটি ।
হতাশ তবু জাগে মনে আশা
আবারও ছয়মাস , এর পর আর থাকেনা ভাষা।
মিনিস্ট্রিকে বুঝানো হলো এডহক নিয়োমিত করণের  ইতিহাস,
তারা বুঝেও না বোঝে, করে শুধু এপাশ অপাশ।
সিনিয়রদের পরামর্শ মত দৌরাই তাদের সাথে কাধে কাধ রেখে
বিশিষ্ঠ মন্ত্রী ,এমপিদের কাছে নিলাম ডিও লিখে
ফাইল বানাই, ইতিহাস সমেত ধরনা দেই সচিব মহোদয়ের,
পি এস সির মতামতে আশায় বুকবাধি আমাদের জয়ের ।
পিএসসিতে আমার গুরুজনের কিযে দৌড়াদৌড়ি,
নিজ  চোখে দেখেছি আমরা কজনে ,কেউবা তখন করেছে আড়ি।
ডিজি হতে প্রস্তাব প্রেরণ মন্ত্রনালয়ের তরে
স্ত্রী সন্তান কে আপন করে থাকিনি বসে ঘরে।
দিনের পর দিন আইডিবিতে খেয়েছি ছাড়পোকার কামড়
ছুটেছি কাগজ নিয়ে ডিজি হতে মিনিস্ট্রি শতবার,
খেয়েছি বকা সিনিয়র স্যারের আমরা জানিনা কিছু
কিচ্ছু হবেনা তোমাদের দিয়ে ঘুরোনা পিছু পিছু।
আজ এই কাগজ নেইতো কাল আরেকটা ভুল,
সবকিছু মিলে আমরা ছিলাম ঘোড়ের ভিতর ছিলনাতো কুল।
কর্তৃপক্ষের সকল চাহিদা মোতাবেক কাগজ হলো তৈরি,
পি এসসিতে কাগজ পাঠাইতে মিনিস্ট্রী হলো বৈরী।
সে দুর্যোগের কারন  ছিলেন সম্মানিত আতিক স্যার,
কোন ঘাটতি যেন না থাকে নির্দেশ দেন বারবার।
বহুত পেরেশানি শেষে ফাইল হলো গেলো পিএসসিতে,
তাদের দেওয়া নির্দেশনা মত দিলাম কোনমতে।
এরই মাঝে কোন বন্ধু অন্য চাকরীতে গেলেন চলে
সবশেষে 64 জন থাকলাম ছলেবলে।
পিএসসি যাচাইবাছাই আইন কানুন ঘাটে,
টক ঝাল মিস্টির জন্য কেউবা তখন হাটে।
এসবের জন্য করেছি কত আপনাদের বিরক্ত
হাল ধরেছিলেন এক সিনিয়র দুহাত বাড়িয়েছেন শক্ত ।
একদিন দুদিন করে মাস পেরিয়ে যায়
সিদ্ধান্ত আসেনা বলে ভুগি হতাশায়।
ফাইলে ভুলে ভরা ছিল বললেন একদা
উপায়ও দিলেন বলে সেই মানুষটি  ছিলেন খাটি সর্বদা ।
কুর্নিশ করি আমি তারে কেউবা না করুক
ভিতরের অজানা কথা আর না বারুক  ।
নেপথ্যে যিনি নায়ক হয়ে রয়েছেন আমার মনে
আমি জ্ঞানহীন আজ আর কথা হয় না তেমন তার সনে।


যাই হোক , হঠাৎ 8জুলাই-13, আইডিইবিতে রাকিব ,জসিম,আমি উপস্থিত তিনজন
মেঘের গর্জন , আমার ফোনে এলো সেই মহেন্দ্রক্ষন
সেই ফোনকল , আলতাফ, মিরাক্কেল ঘটে গেছে  
আমি বললাম স্যার কোন ভাল খবর আছে?
আমি বুঝে গেলাম, চোখ জলছল,
জড়িয়ে ধরলাম রাকিব ভাই আর জসিমকে
গালবেয়ে নামলো পানির ঢল।
হাওমাউ করে কেদে আকাশ ভাড়ী হয়ে গেলো,
স্যারের ডাকে ফিরলো হুশ , চেতনা ফিরে পেলো।
মনে পড়ে কি কনফিডেন্স নিয়ে আসলেন
ফুরফুরে মেজাজ
হাতে একখানা কালো লেখা সাদা শুভ্র কাগজ
ধরিয়ে দিলেন, চোখ বুলিয়ে লুটিয়ে পড়লাম পায়ে
কি আদর আর সোহাগ মাখিয়ে জড়িয়ে নিলেন গায়ে ।  


তারপরে ইতিহাস আর নাইবা লিখি
অতীত ইতিহাসটুকু কেবল মনে রাখি।
দেখতে দেখতে ৮ টি বছর হয়েছে পার,
কেউ কারও নয় এখন প্রত্যেক্যে যার যার।


ভাল থাকিস বন্ধুরা সবাই
আমায় নাকরিস মনে
সারাজীবন আছি পাশে
থাকবো সবার সনে।।।