যিনি সৃষ্টক তার আনন্দ কেবল সৃষ্টিতেই। তবে সৃষ্টির শত আনন্দের মাঝেও এখানে বিষাদ বিরাজ করে। আজ এমনই এক বিষাদঘন মুহূর্তের কথা বলি...।
        বাংলা সাহিত্য নিয়ে আমি যখন পড়াশোনা শুরু করি তার বহুদিন আগে থেকেই আমি কবিতা চর্চা করি। তখন মূলত রবীন্দ্র ভাবধারায় কবিতা লিখতাম। আমার প্রথম কবিতা 'সাধনা' যা বর্ধমানের 'পারিজাত' সাহিত্য পত্রিকায় (২০১৭) প্রকাশিত হয়েছিল, সেই কবিতা খানিকটা ছিল রবীন্দ্র ভাবধারার। তারপর যুগের পরিবর্তনের সাথে লেখার ভাবধারারও পরিবর্তন হল। লেখায় উঠে এল আধুনিক ভাবধারা। সে সময় হঠাৎ কবিতার বই প্রকাশের ইচ্ছে বীজের অঙ্কুরের মতোই একটু একটু করে বাড়তে লাগলো। তখন বই প্রকাশের ব্যপারে কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। বিশিষ্ট কবিদের সংস্পর্শে এসে যতটুকু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে শুরু করলাম তাতে বেশ বুঝতে পারলাম বই প্রকাশের ব্যপারটা খানিকটা বিবাহের পণ প্রথার মতই। তবুও স্বপ্নের বীজ যেন ধীরে ধীরে বৃক্ষের ন্যায় বড়ো হতে লাগলো। সেই স্বপ্ন পূরণের চেষ্টায় তখন ছুটলাম প্রকাশকের দ্বারে দ্বারে। তখন কলকাতার বিভিন্ন নামি দামি প্রকাশকের সাথে কথা বললাম। সকলেই আমাকে জানিয়ে দিলেন চার ফর্মার বোর্ডবাইন্ডিং বই খরচ পড়বে ১৫০০০ হাজার টাকা। এই টাকাটা আমি বহন করতে পারলেই আমার বই প্রকাশ পাবে। না হলে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। আমি সেই প্রকাশককে কখনো দোষারোপ করিনি, কারণ আমি জানতাম সকল নবীন লেখকদেরই ঠিক আমার মতোই বিষাদঘন অবস্থা। হাজার হাজার পাঠক-পাঠিকা তৈরি করে  নামি দামি না হওয়া পর্যন্ত কোনো প্রকাশকই এগিয়ে আসবেন না। তবে আমি সেদিন পিছিয়ে আসি নি, বরং এগিয়ে গেছি বীরের মতো। বই প্রকাশের ব্যপারে যতটুকু অভিজ্ঞতা তখন অর্জন করেছি তাতে স্পষ্ট বোঝা যায়, আমার বই আমার টাকা দিয়েই প্রকাশ করতে হবে। তখন গোটা কলকাতা ঘুরে ঘুরে দমদমে একটা প্রকাশকের (দেব প্রকাশনী) সাথে পরিচয় হল। তিনি সবটা বুঝে আমাকে জানালেন "চার ফর্মার বোর্ডবাইন্ডিং বই খরচ লাগবে ছয় হাজার টাকা"। টাকার অঙ্কটা অনেকটাই কম ছিল বলেই মালদা থেকে রাতের ট্রেন ধরে আমি দমদমে পৌছে যাই। তারপর আমার বইয়ের পান্ডুলিপি তার কাছে জমা রেখে আমার মালদা ফিরে আসি। এরপর তিন মাস পর তিনি আমার কবিতার বই (একা কবিতার শহরে) প্রকাশ করেন শারদীয়া (২০১৮) উৎসবে। বইটি আইএসবিএন ছিল না। বইটি প্রকাশ পেলে আবার আমি দমদমে গিয়ে ১০০ কপি বই নিজে হাতে বহন করে আনি। তখন আমার সাথে আমার বাবাও ছিলেন। সেই দিনের আমার প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতাটা আজ তুলে ধরলাম। হয়তো আমার মতোই শত আনন্দের মাঝেও বিষাদঘন মুহূর্তকে সামনে রেখে এক একজন নবীন লেখকের প্রথম বই প্রকাশ পেয়েছে।