না, আমি কবি নই - নিতান্তই এক সৌখিন কবিতা পাঠক মাত্র! আমি কবিতা
পড়ি মনের আনন্দে - খুব ভাল লাগে; - কবিতার মতো কে আর দেয় এত
সুখ, এত ভাললাগা! তাই, কবিদের প্রতি আমার অপরিসীম ভাললাগা, ভালবাসা,
শ্রদ্ধা আর ঋণ জমে ওঠে। এই ভাললাগা, ভালবাসা, শ্রদ্ধা আর জমে ওঠা ঋণ
শেয়ার আমার প্রতিদিনের পাঠ থেকে কিছু মনে গেঁথে যাওয়া কবিতার এই
সন্নিবেশ; - এ শুধু কোন এক অন্য অবসরে আরো একবার-বহুপাঠে কাব্যরস
আস্বাদনের আয়োজন বা প্রয়োজন মাত্র।


আজকের দশ কবির প্রতি আমার হৃদয়ের অকৃত্রিম উষ্ণতা নিবেদন! আর যাঁরা
কবি, হৃদয়-মেধা নিংড়ে কবিতা আনে এ কবিতার আসরে প্রত্যহ, যাঁরা এখানে
অবর্তমান  (‌হয়ত আমার অপ্রস্তুত পাঠাভ্যাসে), সেই সব কবি-হৃদয়ের প্রতিও
আমার ভালবাসা অন্তহীন! তাঁদের হাতেও আমার কাব্যরস পান ও প্রত্যাশা
নিরন্তর! আগামিকাল তাঁদের কবিতার মূগ্ধতায় ডুবে যেতে চাই!


কবিতা সুন্দরের প্রতিমা হয়ে আসুক, চিরন্তন হৃদয়-অনুভূতির ছবি হয়ে উঠুক,
মনন-শৈলীতে জেগে উঠুক, হয়ে উঠুক উজ্জ্বীবনের জীয়নকাঠি - এই চির
প্রত্যাশায় - সৌকপা।
--------------------------------------------------------------------
--------------------------------------------------------------------


লুকোচুরি ভ্র-ম-ন
- মুক্তি আর প্রেম মানুষের জন্যে


তোমাকে দেখতে গিয়ে -
বাঁশঝাড়ে উঁকি মেরে দেখেছি চাঁদ আর সোডিয়াম আলো গড়াগড়ি খায় প্রবল উত্সাহে
এলোমেলো সংঘাত দু-দিকে সরিয়ে আলোর বিচ্ছুরণ অতিক্রম করে এক সাগর অভিমান;
কোমর দুলিয়ে উল্টায় কুয়ার জল -দেয় ঘন অভিশাপ - নিশুতি ফুলের মাতাল সুবাস
        দোল খায় হাওয়ায় হাওয়ায়, দুঃখে, রাত বাড়লে এক রাতে -
           অচেনা ফুল খসে ঝরে পড়া ঘোলাটে-গন্ধ প্রেম-তর্কে মেখে
                           দিতো আরও অনেককিছু;
                                               ওলটপালট করে দিতো আমাকে
                                               নিজেকে মনে হতো ভীষণ রকম পরাজিত  
তোমাকে দেখতে গিয়ে -
আমি যে পথে  হেঁটেছি, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ  দুটি চোখ জ্বলজ্বলে জল-তরঙ্গের দীপ্র পায়ে
আসত ঝুড়ি-ঝুড়ি ক্ষমা আর অলৌকিক পাপ বজ্র-বিদ্যুতের ঘামে মেঘ জমিয়ে,
বৃষ্টির হাতে সজ্ঞাহীন কিছু জাদু-স্তব আমার হাতে তুলে দিত।  
জল-শোকে মোড়ানো -
এক চিত্ত নিরাশ্রিত ভালবাসা দিয়ে আমায় গ্রহণ করে নিত
                               শস্য ক্ষেতে নারীর আনাগোনা, এতটা নিমন্ত্রণ-তো  চাইনি
               যেদিন তোমার অনুরোধ অমান্য করে আমায় টেনে-হেঁচড়ে বালুচরে নিয়ে
               যেত এক দলা ভৌগলিক যন্ত্রণা,
               এতোটা যন্ত্রণা কখনো চাইনি - এজন্য অভিযোগও  করিনি


তোমাকে ভালবাসতে গিয়ে -
চন্দ্র-সুর্যের সু-সম্পর্ক দেখে বলেছিলাম এক হাটু জলে এক চিমটি অহংকার মিশিয়ে
আমায় পূর্ণতা দাও, পাপ - তাপ - সন্ত্রাস সমগ্র উত্খাত করে
জন-মানব শূন্য বুনো জনপদ বানাবো।
যেখানে স্বর্ণকেশী কোমল আলো-ঋতু চক্র
         আমার কোলে পিঠে চড়ে বসে খেলবে,
                এতোখানি প্রেমতো চাইনি এ-জীবনে -
                     কিভাবে কি দিয়ে এ ঋণ শোধ করি বলো


তোমাকে দেখতে গিয়ে দেখেছি -
আমার কফিন খুলে ঠোকরাচ্ছে লাল পিপঁড়ে - দল বেঁধে  
ক্ষতস্থানে আলতো কামড় দিত,  
তোমার তুলতুলে আঙ্গুলের ইশারায় - কী আন্তরিক সুখ অনুভব করতাম  
একটু নড়েচড়ে উঠলে খেয়ে ফেলতো পায়ের নখ - ঘাড়, গলা,                   কথাগুলো'র শব্দ;    
শোকে থমকে যেতো শীতকালীন যোগাযোগ  


কেউ না এলে তোমার জন্যে-
থমকে যেতাম জনহীন জনপদে
                   মৌলিক ভালবাসা পেতাম কবর থেকে উঠে
                           এই-স্থানে - এখন জানিনা কে কে আছে আমার মতো


এখনো এখানেই দেখি লুকোচুরি ভ্রমন
বিজ্ঞানের রহস্য কফিন থেকে ছুটন্ত মৃত্যু চুরি করে তোমাকে রেখে যায় আমার শোবার ঘরে -তোমার আপাদমস্তক সামগ্রিক স্মৃতি-পুস্তক
মোড়কে বেঁধে দেয় একটি সাতকাহন
                                     কিভাবে এড়াই বলো।


--------------------------------------------------------------------


বেথ, মঁ এমো
- সরকার মুনীর


চিঠিটা এসেছে সুদূর প্যারীস থেকে
প্রেরকের নামও আছে তাতে -‘এলিজাবেথ’
আমার দশ বছর আগেকার ঠিকানায় পাঠানো তা
হাত ঘুরে ঘুরে ঠিকই পৌঁছে গেছে
আমার বর্তমান ঠিকানায়.।
স্তব্ধ হয়ে আমি বসে আছি চিঠি হাতে-  বিহ্বল
মন ফিরেছে দশ বছর আগের প্যারীসে-
আইকনিক আইফেল টাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে
এলিজা হাত হাতে নিয়ে বলেছিল-‘গ্রহণ কর আমায়’।
অপারগ আমি স্খলিত মন্ত্রে শুধু উচ্চারণ
করেছিলাম,’প্রতীক্ষা করতে হবে।‘
ভেবেছিলাম চঞ্চলা বিদেশিনীর ক্ষণিক ভালোলাগা
উবে যাবে সময়ের বাষ্পের সাথে মিশে
বলেছিলাম ফিরবো বছর কয়েক পর,তখন যদি হয়, দেখা যাবে।


পরে প্যারীস ছাড়ার আগে বিদায় জানাতে এসে- কেঁদে ফেলেছিল লিজা, এলিজা।
ক্রন্দনরতা বিদেশিনী লাজুক স্বরে বলেছিলো-‘মুনীয়ের,মঁ এমো’।
ঝাপসা চোখে আমি আসলে তাকে শেষ বিদায়ই জানিয়েছিলাম ,বুকে কষ্ট নিয়ে।


ল্যুভের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা স্বর্ণকেশী নারী মূর্তীটি যেন আজও
আমায় হাত নেড়ে নেড়ে এগিয়ে দেয় জীবনের পথে ,ফিরে পাবার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে।


খামের ভেতর থেকে বেড়িয়েছে এলিজার দীর্ঘশ্বাস
অপেক্ষারতা বিদেশিনীর প্রতিজ্ঞা প্রহরের যন্ত্রণা
অবশেষে মনের মানুষকে ফিরে পাবার আকুলতা।


ভাষার সংকটকে ভয় ছিলো আমার, ছিলো দুরন্ত জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা
আরো ছিলো তাকে হারানোর ভয়।
আমি বুঝতে পারিনি সে নারীকে-
শুদ্ধ ভালোবাসা পরখ করার কোন মাপকাঠি ছিল না আমার- নেইও তা কোথাও।
এখন আর নেই পরিস্থিতি সেখানে ফেরার-
তবুও খোঁজ করেছি আমি তার- নেই , কোন ঠিকানায় আর নেই বেথ।


মেঘেরা যদি প্যারীসের আকাশে যাও নিয়ে যেও আমার বার্তা
পরিযায়ী পাখীরা যদি পথ ভুলে যাও সেখানে বলো তাকে আমার কথা
“তোমাকে ভুলে বড় ভুল করেছি আমি এলিজা-
বেথ, মঁ এমো”  ।


MON AMOR ( FRENCH)= I LOVE YOU/ MY LOVE


--------------------------------------------------------------------


আটত্রিশ বছর আগে
- মুজিবুর রহমান মুনীর


সেই আটত্রিশ বছর আগে দেখা এক নদী
নদীর জল জলের ঢেউ
বুকের আরশীতে আসমানি রূপ
কলকল ছলছল উদাস-উন্মুখ
পাগলপারা দুই পাড়
কত বদলে গ্যাছে আজ
তার সে জলের ঘুঙুর কূলের কণ্ঠহার!


সেই কাশবন ঘাসবন ঝাউবন উড়ানীর চর
সেই টিটিব খঞ্জনা অঞ্জনা বালিহাসের ঝাঁক
সেই গাংশালিক মাছরাঙাদের ঘর
সেই বানজরান ভাটিয়ালী তান কবিতার বাঁক।
দুই পাড়ে ধেনু চড়া বেণু ধরা রাখালের মাঠ
এপার ওপারে গাঁ মাঝে খেয়া ঘাট।
ঘাটে নামা হাটের মানুষ দোকানীর ভীড়
দুইপাড়ে কত যাত্রী আলাপন নিভির।
জলকেলি জলভাঙা ডানপীঠে কিশোর কিশোরী
আঁচল টানিয়া গোসলরত লজ্জাবতি নারী
ভরা ঘাগরি গাঁয়ের নাগরী দোদুল দোদুল চরণ
ভেজা শাড়ী ভেজা শরীর মধুর ক্ষরণ
ফিরে যেতে যেতে পথে ছড়ায় কারুকাজ
সুন্দরতম সেই ছবি কত বদলে গ্যাছে আজ।


সেই আটত্রিশ বছর আগের দেখা ভোর
রাত্রীর সুবাসিত বাতাস শেষ প্রহর
পাখি কাকলির কূজন মন্দিরের ঘণ্টা মসজিদের আজান
ঢেঁকিশাল ঢেঁকির পাড় ধান বানার সে কী মধু তান
পূজার ঘর শানের ঘাট উঠোনে উনুনে ব্যস্ত রমণী।
কিষাণ কিষাণীর সেঁওতিদোন খাল কাঁচা সকাল
তাজা জলে মাঠকে মাঠ নতুন ধরণী।
ঝরা আম পড়া জাম বইচি বাগান তোলপার করে ফেরা
এপাড়া ওপাড়ার উল্লসিত ছেলে মেয়ের দল
সখিনা জরিনা পার্বতীদের পাতা কুড়ানো নাড়া ভুরানো  
গোবর ঘাঁটার আনন্দ কোলাহল
মালাগাছি ডালাসাজি বিনুনী সিঁথির ভাঁজ
কত বদলে গ্যাছে আজ।


আটত্রিশ বছর আগের সেই
ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব ধান কাটার দিন
পৌষের মেলা চৈত্র সংক্রান্তি  
হাজার ব্যাস্ততা শোধিতে মহাজনি ঋণ।
সেই ঘোর দৌড় বাইসের পাল্লা ষাঁড়ের লড়াই
ঘুড়ি কাটা দড়ি টানা লাঠির বড়াই
সাপ-সাপুড়ের নাচ সাথে যাদুর বীণ
ঢাক ঢোল চমক ঠমক নর্তকীর
জারি সারি গানের পালা ঔতিহ্য বাঙালীর
হাতে ডুলা কাঁধে গামছা মুখে ভূবন ভোলা হাঁসি
দোকানী খদ্দেরে প্রাণখোলা বুলি কত ভালোবাসা বাসি
আহারে সেই সোনার মানুষগুলো এখন কই?
সেই সোনালী রোদের ভোর
সেই পূর্ব দুয়ারীর দোর
সেই পলাশ পিয়াল বকুল সুঁইচোর
সেই চাতাল রৌদ্র মাতাল অর্ধ উলঙ্গ ছেলে
সেই ঝাঁকড়া চুলের কবিয়াল
সেই ডালা সেই বালা মালির সই
এখন কই?
সেই মঠখোলা সেই বটতলাস
সেই বৈরাগী বাড়ী বইচি বাগান
বনের ঘুঙুর উদাত্ত সুর আনপথিকের গান
ফিরে কী আর পাব সই?


--------------------------------------------------------------------


প্রিয়তমা! এসো, কিছু স্বর্ণমুদ্রা কুড়াই
- ছোট কবিতা


আমি একটা মূর্তি বানাবো জীবন্ত স্বর্ণমুদ্রায় -
যে কথা বলবে বাংলায় নায়গ্রায় আর সব প্রাকৃতিক ভাষায়
যাকে দেখে মুখ লুকোবে মেরিলিন আর উর্বশীরা ভীষণ লজ্জ্বায়
যাকে স্যালুট করবে পৃথিবীর বেবাক সেনাপ্রধান
যাকে পূজার অর্ঘ্য দিতে তাবৎ রাষ্ট্রপ্রধানেরা ছুটে যাবে ফুল কুড়োতে
সুন্দরবন, আফ্রিকা, হিমালয় আর সব পৃথিবীর ঘরে-বাইরে
যার পায়ের কাছে হামাগুড়ি দিয়ে ক্ষমা চাইবে পৃথিবীর সব মাফিয়া হায়েনা


আমি একটা মূর্তি বানাবো জীবন্ত স্বর্ণমুদ্রায় -
যার কাছে খেলতে আসবে যীশু সব শিশু, চাঁদ-জোসনারা
যার কাছে  উল্কায় আসবে সমস্ত সূর্য ও সৌরহৃদয়েরা
যার কাছে বসে থাকবে সব কবিরা সারাক্ষণ একটা স্বর্ণকবিতার প্রতীক্ষায়


আমি একটা মূর্তি বানাবো জীবন্ত স্বর্ণমুদ্রায় -
যার হাতে থাকবে একটা স্বর্ণসুন্দরের অভিধান
যার হাতে থাকবে না কোন হেন ক্ষমতার রাষ্ট্রনীতি
যার চোখে থাকবে না কোনো রাজনীতির প্রয়োজন - শুধু ভালবাসার রোশনাই
যার ঠোঁটে থাকবে না একটুও বিষ - শুধু অমৃত
যার শ্বাস-প্রশ্বাসে থাকবে না কোনো হেমলক বা বারুদের গন্ধ - শুধু গোলাপ-রজনিগন্ধা আর হাসনাহেনা
যার প্রতিটা শব্দ হবে এক একটা স্বর্ণমুদ্রা - সত্য-সুন্দর-চিরন্তন - ঠিক কালজয়ী কবিতার মতো


আমি একটা মূর্তি বানাবো জীবন্ত স্বর্ণমুদ্রায় -
এত স্বর্ণমুদ্রা আমি কোথায় পাই!
১৬১৮ টা অভিধান যথেষ্ট নয় শুধু ওর দুটি চোখের জন্য
১৬১৮ টা অভিধান যথেষ্ট নয় শুধু ওর দুটি ঠোঁটের জন্য
১৬১৮ টা অভিধান যথেষ্ট নয় শুধু ওর কালো চুলের জন্য
১৬১৮ টা অভিধান যথেষ্ট নয় শুধু ওর দুটি হাতের জন্য
১৬১৮ টা অভিধান যথেষ্ট নয় শুধু ওর দুটি পায়ের জন্য
১৬১৮ টা অভিধান যথেষ্ট নয় শুধু ওর ও হৃদয়ের জন্য


এত স্বর্ণমুদ্রা আমি কোথায় পাবো?


প্রিয়তমা!
এসো, একটু মুখোমুখি বসি - নতুন কিছু শব্দ কুড়াই - কিছু স্বর্ণমুদ্রা
এসো, একটু পাশাপাশি হাঁটি - নতুন কিছু শব্দ কুড়াই - কিছু স্বর্ণমুদ্রা
এসো, একটু ভালবাসি আরো - নতুন কিছু শব্দ কুড়াই - কিছু স্বর্ণমুদ্রা


--------------------------------------------------------------------


চরণ রাখো, চোখ
- সুশীল রায়


                ১
বুকের ভিতর সবটুকু আজ পাথর,
পাথর জুড়ে ঘাস;
ছোট্ট একটা গল্প আছে এসব কথার আগে;
               - গল্পেরও এক ছোট্ট ইতিহাস।


ঘর ছিল না, দোর ছিল না, ছিল না হেলদোল
-আজ কী হচ্ছে, কাল কী হবে;
                                -দিনকানা; তালকানা।
ইঁচড়ে পাকা, গোঁফ ওঠেনি, সমান্তরাল পথে
দোসর পেল; সন্ততিও সময়-তিথি মেনে।
কাব্য লেখার বহর ভারী, পড়ালেখায় ভালো;
ছাত্র জোটে, কপাল ফোটে,
                                দিন কাটে ধীর বেগে।


সময় লেখে ভাগ্যলিপি কাব্যলিপিকারের;
-এক কিশোরী কাজল চোখে অর্থ নিয়ে এল।


                ২
অবাধ্য চোখ যুবতি বারবার,
আকাশ জুড়ে মহাভারত শুরু,
পাগলা দাশু ছুটছে তেপান্তরে,
বৃন্দাবনে কানাই লীলাকর।


দিকে দিকে চলছে ঝুমুর গান,
বাউলমেলা, বইমেলা, পৌষালি,
অবাধ্য চোখ যুবতি বার বার,
লাল ঘুড়িতে আকাশ গেছে ছেয়ে।


                ৩
সারা দেশেই একচ্ছত্র আলো
ছড়িয়ে আছে; আলোর কণায় ভোর
লুকিয়ে আছে - ছুঁলেই ছুঁতে পারো;
- ছুটতে হবে; ছুটতে হবে দূরে ।


হাতে গরম! হাতে গরম!
                             - চাকরি জুটে গেছে।
চাকরি ভালো। চাকরি ভালো লাগছে না
                                           নির্বোধ!
কাব্যকারের ভাগ্যে অশেষ দুঃখ অলংকার;
অবাধ্য চোখ যুবতি বারবার।


       ৪
অবাধ্য চোখ অবাধ্য চোখ অবাধ্য চোখ,
নতুন পাতার গন্ধে আরও কলম তীব্রগতি,
-ধর্মপত্নী আপন মনে কর্মপটীয়সী।


        ৫
মেঘের ঘরে চাঁদের আনাগোনা;
আবছা রকম প্রাকৃত জ্যোৎস্না
সাগর জলে ভাঙলো হীরকদ্যুতি,
কলম-গানে ফুল বাগানে জাগে না স্তুতি
হার মেনেছে, হার মেনেছে, হার ।


        ৬
যুবক-ঝড়ে সাগর আস্ফালনে
কাঁপল ভূধর; বেরিয়ে এলো লাভা;
জমাট লাভা পাথর কঠোরতম,
পাথর জুড়ে  ঘাস;


ঘাসে তোমার চরণ রাখো, চোখ।
-চোখে তোমার পাথর; দীর্ঘশ্বাস।


--------------------------------------------------------------------


গনতন্ত্র
- মুস্তাফা গোলাম


গনতন্ত্র যেখানে হাতের কড়ের হিসাবে
একের সাথে এক গুনে দুই হওয়ার নিয়মে!


দ্যাখ তোরা নিজের চক্ষে, দেখা সারা বিশ্বকেঃ
এই আমার আর্ধেক দেশ কিম্বা তারও বেশি!
আমি, তুমি, তোমরা কিভাবে একে অস্বীকার করব!
নাকি, আমি, তুমি, আমরা আমাদের চোখ উপরে লাগিয়েছি-
হলুদ কাওরানবাজারি একচোখা চোখ!
আর তার উপরে গাঢ় কালো দামি সানগ্লাস!


যে কলম ছড়ায় বিদ্বেষের কালিমা সারা বাংলাদেশে- তাকে আমি ঘৃনা করি!
যে প্রাজ্ঞ জ্ঞানের বাহারি বেসাতি বেঁচে টাকার দামে - তাকে আমি ঘৃনা করি!
যে গনতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, করে পরিবারিক সিলসিলায় - তাকে আমি ঘৃনা করি!
যে বিশ্বাস রাঙ্গায় আপন মহিমা ভাইয়ের খুনে - তাকে আমি ঘৃনা করি!


এই যে আমার শিক্ষা, এই যে আমার এ আলোর ভুবন ,
আর এই যে আমার এ বুক ভরা শ্বাস-
এ সবি তোর জন্য হে স্বাধীনতা!
আমার বাপের খুনে, আমার ভাইয়ের রণ হুংকারে
আর আমার বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে তুই যে আমার হলি,
হে স্বাধীনতা!


উদার ঐ স্বাধীনতা সাদা কাফেলার যাত্রীদের নিঘুর্মা রাতের পদব্রজে!
উদার ঐ স্বাধীনতা শাহবাগের ডাকে ফসলের মাঠ ছেড়ে আসা ঐ কৃষকের হাসিতে!
উদার ঐ স্বাধীনতা অতিদূর সীমান্তে ফসলের মাঠে অবলার অবাধ বিচরণে!
উদার ঐ স্বাধীনতা স্বাধীন বাংলায় স্বতঃস্ফুর্ত ঐ সবার মত প্রকাশে!


তোরা আরও সহনশীল হ!, তোরা আরও সহনশীল হ!
তোরা নিজের মতের বাহারি রঙে সাজাতে চাস্‌ না আরেক জনায়!
স্বাধীনতার পৌঢ়ত্বে এসে এ আমাদের প্রাণের দাবী! তোদের কাছে!


--------------------------------------------------------------------


উঠোনের ইচ্ছা বেলাভূমির স্বপ্ন
- মৄত্তিক মাসুম


একদিন উঠোনে আসিস, আমি তোকে ভিজিয়ে দেব ভীষণ ইচ্ছায়
সমস্ত দিন সমস্ত রাত শুধু খেলবি জোসনায় - বুনোচাঁদ হেসেছিলো জানালার পর্দা সরিয়ে - সেই কবে
তারপর শুক্লপক্ষ হেঁটে গেছে, কৃষ্ণপক্ষও যায় যায়
বারবার ছুটে যাই জানালায় - কেউ নাই - কেউ আসেনি, কেউ খুলে দেয়নি তালা
এই চোখ এখনো উঠোনের স্বপ্নে ডুবে আছে!


স্বপ্নের জরায়ুতে আরো কত স্বপ্ন ডুকরে মরে - জল পাবে কি! বেলাভূমি ডাকবে কি এবার!


--------------------------------------------------------------------


এলিয়েনের ছা ( ছোটদের ছড়া)
- রোদের ছায়া


চমকে উঠে বাবলু ভীষণ ঘরে দিয়েই পা
দেখে কোণের তাকের কাছে এলিয়েনের ছা
কখন এলো কি সমাচার,কিছুই জানা নেই
হঠাৎ  রাতের ঘটনা এক পড়লো মনে যেই
বুঝতে বাকি রইল না আর ঘটতে যাচ্ছে কি
কে রে তুই?নাম কি রে তোর ?এলিয়েনের ঝি ?


পড়লো মনে বাবলু আর রতন মিলে কাল
কোত্থেকে এক ''সময় যন্ত্র '' পেয়েছিল লাল ।
দেখতে ঠিক বলের মতো,ছোট্ট আর আদুরে
ফল ভেবে তা কামড়ে ছিল নিম গাছের  এক বাদুড়ে ।
দেখতে পেয়ে বাবলু  রতন  তুলে নিয়ে যতনে
ঘরের কোণে লুকিয়েছিল , ভীষণ রকম গোপনে ।


এখন তবে কি করা যায়, নিয়ে এই  ভিন গ্রহচারী
ছোট্ট সেটা , ভিতু যে খুব, বিপদ হল ভারি !
থাকবে কোথায় ? খাবে টা কি ?কোন ভাষা যে জানে ?
ভাবতে ভাবতে দুই ভাইয়েরই ভিজল মাথা ঘামে  ।
চিঁ চিঁ করে কি যে বলে,বুঝে না  ছাই কিছু ,
ধাতব একটা ভোঁতা  আওয়াজ ছাড়ছে না যে পিছু ।


ঠিক তখনি বাবলু যেন, কেঁপে উঠে থরথর
মায়ের ডাকে ঘুমটা ভেঙ্গে উঠে বসে ধরমর ।
কচলে দুচোখ কোণের দিকে তাকিয়ে দেখে, হায়!
লাল রঙের ফুটবলটা  যে পড়ে আছে ঠায় ।


--------------------------------------------------------------------


খুব মনে পড়ে
- সৈয়দ জাহেদ হোসেন


খুব মনে পড়ে
হাড় কাঁপানো কনকনে শীতের ভোরে,
তোমার আমার ছিল প্রথম দেখা,
স্মৃতিতে যা আছে আজো আঁকা,
সবুজ একটা তাঁতের চাদর,
বিস্কুট রঙের ফতুয়া গাঁয়ে দিয়ে
তুষারাবৃত ফুটপাত পাড়ি দিতে গিয়ে,
কয়েকবার পিছলে পড়েছিলে তুমি।
সেই সুযোগে তোমার হাত ধরেছিলাম,
আর, আরও সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম।
শুরু হল প্রথম দেখার প্রথম পর্ব তোমার সাথে।


খুব মনে পড়ে
দুই কাপ কফির সামনে আমরা দুই জন,
বেয়ারা মেয়েটিকে প্রশ্ন করেছিলাম,
আমার বউটা কেমন লাগলো?
সোনালি রঙ এর চুল আর সাদা ধবধবে চামড়ার মেয়েটি ফিক করে হাসি দেয়।
আমার খুব চিনি খাওয়া দেখে
তোমার চকচকে সুন্দর চোখ দু'টোর ভ্রু কুঁচকে বলেছিলে
এতো! এগুলো চলবে না।


খুব মনে পড়ে
চেয়ারে বসতে গিয়ে তুমি যখন উপুড় হচ্ছিলে
সেই ফাঁকে এক পলকে দেখে নিলাম
অন্তর্বাসে ঢাকা তোমার সুন্দর বুক
আর নিয়ে নিলাম যৌবনের কিছুটা নির্যাস।
তুমি কি বুঝেছিলে?
হয়ত বুঝেছিলে, হয়তবা না।
আবার মনে হয়,
না বুঝলে ওভাবে কি কেউ আড়ষ্ট চোখে বুকের কাপড় ঠিক করে?


খুব মনে পড়ে
তারপর দুজনে, একান্ত নিরজনে,
রোদহীন দুপুর বেলায়
কফি শেষে সোজা দোতলায়,
কত কথা জীবনের, কত স্বপ্ন দুজনের,
ইতালিয়ান রেস্টুরেন্টে জানালার কাছে,
আমার কি আর সেদিকে মন আছে?
খাবার শেষে বিদায়ের ক্ষণ,
যখনই উঠে দাঁড়াবে,
আমার লোভাতুর দুচোখ কি আর সুযোগ হারাবে?
আর দেখেই নেই ফতুয়ার নীচে তোমার নাভির টগবগে যৌবন।


খুব মনে পড়ে
বিদায় বেলায় তোমার দেওয়া কথা,
রাতের বেলায় হবে ফোনে সব কথা।
আর এখন, ফোনে কোন কথাই হয় না রাতে,
তার চেয়েও বেশি কিছু হয় তোমার সাথে।


--------------------------------------------------------------------
১০


মহুল-বনের গাঁথা
- মহারাজ


বুরুঙ্গের ব্যাথার বাঁশী এখনও কাঁদে, ফুলুরানির দুঃখে...
বুক ফাটে সে আর্তনাদে; জল আসে দু-চক্ষে,
এখনও কাঁদে ফুলুরানির দুঃখে...!
আকাশ কাঁদে, বাতাস কাঁদে, কাঁদে জংলা নদী-
কাঁদে পাহাড়, শালের বন... ব্যাকুল নিরবধি!


কানপাতলেই শুনতে পাবে, সেই ভালোবাসার গান-
পাহাড়, নদী, জঙ্গলেই, আজো মিশে তাঁদের প্রাণ...
মন হারালেই দেখতে পাবে, নিস্পাপ সে অভিমান-
কানপাতলেই শুনতে পাবে, সে ভালোবাসার গান!


পথ হারানো কোন জংলা ঝোরার বাঁকে...
শেষ বিকালের সোনালী আলোর ফাঁকে?
অচেনা সেই মহুল বনের বাঁকে...
বুরুঙ্গের বাঁশী আজও হাতছানি দিয়ে ডাকে!
বুরুঙ্গের বাঁশী আজও হাতছানি দিয়ে ডাকে!


প্রাণের সে টান আজও জলে বাতাসে মিশে...
প্রেমিক হৃদয় আজও পথ হারায় মহুল বনের দেশে, ফুলুকে ভালবেসে!


কানপাতলেই শুনতে পাবে, সে ভালোবাসার গান-
পাহাড়, নদী, জঙ্গলেই, আজো মিশে তাঁদের প্রাণ...
মন হারালেই দেখতে পাবে, নিস্পাপ সে অভিমান-
কানপাতলেই শুনতে পাবে, সে ভালোবাসার গান!


--------------------------------------------------------------------