ছগীর আলী শ্রাবণের আকাশের মত থমথমে মুখে ঘুরছে
এ দোয়ার থেকে ও দোয়ার, ঈদ চলে এল বলে কিন্তু হাত একদম খলি
দিন মজুর সে,  সর্বনাশা বৃষ্টি কাজ করতে দেয়নি,
মেম্বার সাহেবের বাড়িতে ধন্না দিয়েছে অনেক বার
জমে থাকা মজুরীর বিনিময়ে শুনে এসেছে মেম্বারের অভাবী অজুহাত।
জমি জমা নেই, ওকে কেউ দু পয়সা দিতে চায়না কাজ ছাড়া।
চার চারটি ছেলে মেয়ে ঘরে, বাড়ী গেলেই বায়না ধরে
"ও বাবা গঞ্জে কবে লইয়া যাইবা? ও বাড়ীর সবাই কিন্না ফেলাইল যে"
তার মেজো ছেলে পিলু বলে
"বাবা এইবার ভুইল্লারে দেহাইয়া দিমু তুমি আমারে লাল শাট কিনা দিবা
গেল বার আমার পুরান শাট দেইখা ক্ষেপাইছে, এইবার দেহাইমু অরে"
ছগীর আলী আর সইতে পারে না, কান্না চেপে বৃষ্টিকে অভিশাপ দেয় ক্রমাগত।
ঈদের আর মাত্র দুই দিন বাকি, ছগীর আলি নিরুপায়
মুখ ভার করে বাচ্চারা মাকে বলে " মা, বাবা এই বারও বুজি কিছু কিন্না দিব না"
ছগীর আলীর কষ্ট, বাচ্চাদের কষ্ট আর সইতে পারে না পিলুর মা
বাপের বাড়ীর শেষ স্মৃতি চিহ্ন এক মাত্র গয়না নাক-ফুলটি খুলে দিয়ে বলে
"গঞ্জে লইয়া যাও দেহ কিছু অয় কিনা"
বলতে বলতে অভিমানী অশ্রু গড়িয়ে পড়ে আর মনে মনে বলে
"খোদায় কেন যে গরিব বানাইছে কেন যে দুইডা পয়সা দিল না"


ঈদের দিনে তালি দেওয়া সবচেয়ে ভাল শাড়িটি পড়ে
নতুন জামা পড়ে খুশিতে আত্মহারা বাচ্চাদের দেখে
পিলুদের মায়েরা ভুলে যায় সকল দুঃখ, ভুলে যায়
কত কাল ধরে নতুন শাড়ি ব্লাউজ কেনা হয়না
ভুলে যায় অলংকারহীন নগ্ন শরীরের ব্যথা।
ছগীর আলীরাও পরম সুখে খোদার শোকর করতে করতে
পুরনো সব চেয়ে ভাল কাপড়টি পড়ে ঈদগাহে যায়।