দারিদ্র ও বয়সের ভারে বিলীন দীপ্ত যৌবনের চিহ্ন,
কিন্তু নুয়ে পড়া শরীরের প্রতিটি রেখায় স্পষ্ট এখনো
তেজোদৃপ্ত ব্যক্তিত্বের মহিমা, দুর্বল ঝাপসা দৃষ্টিতে চঞ্চল ব্যাকুলতা,
খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে চার পাশ, খুঁজতে খুঁজতে
বিদ্যুৎ রেখা ঝিলিক দিয়ে উঠে বুকে কখনো কখনো
ঐ বুঝি আমার আজাদ! কেমন মিলে যাচ্ছে সব!
সেই নাক, মুখ... হায় আল্লাহ! আমার আজাদ ফিরছে বুঝি!
ক্ষণিকের ঝড়ে নিথর স্নায়ু, মায়া কেটে যায়
নির্বাক নদী জেগে উঠে চোখে।


অমৃতের মত শরতের সেই রাতে যুদ্ধ ক্লান্ত তাঁরা
মায়ের স্বর্গীয় কোলে ক্ষণিকের তৃপ্ত নিঃশ্বাস, হঠাৎ
আচমকা দমকা হাওয়ার মত এক দল পশু...
মায়ের সামনে অপরাধীর কাঠগড়ায় মাসুম সন্তান
নারকীয় লেলিহান শিখার উত্তাপ স্বর্গীয় ঘরে,  
একচেটিয়া অমানুষিক বিচারের সাজা......
বছরের পর বছর ধরে তিলে তিলে গড়া স্বপ্নের তাজমহল
ভিসুভিয়াসের তলায় তলিয়ে গেল নিমিষে!


মায়ের মন মানে না কিছুতেই
কেমন আছে আজাদ? কোথাই শোয় ও?
শেষ সময়ে আজাদের নরম বিছানা ছিল না, মা ও পারে না...
মায়ের বিছানা শক্ত মেঝে ও একটুকরা কাঠ মাথার নিচে...
ছেলের সর্বশেষ আবদার দু-মুঠো ভাত......
ভাত নিয়ে বসে থাকে মা, নিজে বেঁচে থাকে শুধুই দু টুকরো রুটি...
ভাত মুখে রোচে না কিছুতেই, খান খান হয়ে যায় বুক,  
পথ পানে চেয়ে চেয়ে ঝাপসা থেকে ঝাপসাতর হয়ে উঠে দৃষ্টি,
স্বপ্ন দেখে, আজাদ ফিরবে একদিন
নিজে রান্না করে খাওয়াবে খুব যত্ন করে
অভুক্ত থেকেও জমিয়ে রাখা গয়নায় সাজবে বউমা।
ঘরভরা জোছনার মত খেলবে নাতি-নাতনি.........
প্রতীক্ষার প্রহর পুড়তে থাকে সূর্যের আগুনে
পথ পানে চেয়ে চেয়ে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয় মায়ের স্বপ্ন
স্বাধীনতার জন্য ঘর ছাড়া মায়ের এক মাত্র সন্তান আজাদ
এই স্বাধীন নামের পরাধীন দেশে
স্বাধীনতার তীব্র আলো ফোটিয়ে ফিরবে একদিন..