অনন্তকাল আগে, নির্ঘুম এক আঁধিয়ার রাতে,
সে হবে হয়তো কোনো বিভ্রান্ত স্মৃতিরও অতীতে,
এক দৈব কন্ঠস্বর, মেঘমন্দ্র নাদে
হঠাৎ শুধালো আমাকে, ”ওহে ঊণ মানব,
তুমি কার? কে তোমার? আছে কি জানা তোমার?
পরিচয়ের আবাহনে, তুমি কি আছ তোমার?"--------
হঠাৎ আগমনের মতো করেই সেই ভরাট কন্ঠস্বর অন্তর্হিত হল ইথারে।
জানা হয়নি তার সলুক সন্ধান। জানা হয়নি নাম।
সে রেখে গেল না তার চিহ্নমাত্র। কেবল জ্বালিয়ে গেল,
এক সামান্য ঊণ মানবের হৃদয় গহীনে জীবনের গভীরতম প্রশ্ন-
”তুমি কার? কে তোমার? জানো কি হদিস তার?”
সেই বিনিদ্র রাতের পর হতে আমি নিজেকে কেবলই প্রশ্ন করে গেছি,
নিজেকে আবদ্ধ করেছি প্রশ্নের পর প্রশ্নের অনুরননে।
নিজের কৌতুহলে নিজেই নিরুত্তর থেকেছি অকারনে।
আজও আমি জানি না, আমি কে। নিজেকে তবু প্রশ্ন করি-
আমি কি এক ঝলক বাতাস?
নাকি শরতের কালিমা মুক্ত একখন্ড আকাশ?
কখনো ভাবি,
আমি হয়তো সত্যি কোনো এক ঊণ মানুষ। কিংবা হয়তো একজন হিমায়িত লাশ।
মর্গের রক্ত হিম করা মেঝেতে পড়ে থাকা, নাম গোত্রহীন এক মনুষ্য লাশ।
বেঁচে মরে থাকার আজীবন ছিল যার আঁশ।
অথবা হবে হয়তো, আমিও সেই দৈব স্বরের মতোই একটি কন্ঠস্বর মাত্র।
যে কন্ঠস্বর শেষ বেঁজে উঠেছিল তিনশো কোটি বছর আগের পৃথিবীতে।
জলহীন, বৃক্ষহীন, প্রেমহীন সাহারার একাকী বুকে,
আদমের জন্মেরও বহু আগে,
সৌরজগতের সবচেয়ে পুরোনো তারাটার জন্মেরও হয়তো আগে,
বেঁজেছিল মেঘমন্দ্র কন্ঠস্বর। একা একা।
আজও আমি তাই একাকী এক বিমূর্ত কন্ঠস্বর।
আপন নিরবতায় নিমজ্জিত, বিবর্ণ, ধূসর। যাকে-
শোনা যায়, দেখা যায় না। যাকে-
অনুভব করা যায় অথচ অনুভূতিতে লীন করা যায় না।
আমি সেই সুপ্রাচীন, প্রাগৈতিহাসিক কন্ঠস্বর।
ইথারে ইথারে ভেসে চলা অশরীরি এক অচ্ছুৎ, অস্পৃশ্য কন্ঠস্বর।