সুহৃদ ও বন্ধুরা,
তোমাদের এই ইট কাঠ পাথরের কৃত্রিম নগরে
আমি ঠিক যুতসুই করে
এখনো গুছিয়ে বসতে পারিনি
পরাবাস্তব এই নির্দয় সংসারে, একজন সুপুরূষের মতো।
যতোটা তোমরা নিয়েছ বেশ।
আসমানসম মার্বেলশোভিত ঘরে
ব্যস্ত কর্পোরেটে, দামী গালিচায় সজ্জিত বহরে।
দুগ্ধ ফেনিল শয্যা, ফ্রেমে বাঁধানো রবি ঠাকুর।
হ্যাঙারে ঝোলে পিকাসো, দ্যা ভিঞ্চি
রমনীয় সুখে মোড়ানো প্রতিটি ইঞ্চি।
ঝাড়বাতির হাজার আলোয় ঝলমলে দরবার হল।
হঠাৎ দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায় ।
নাগো বাবুমশাইরা,
ওসব আমার কিছুই করা হয়ে ওঠেনি।
তোমাদের সুগঠিত সুপুষ্ট কর্পোরেট জীবনের চাকচিক্য দেখে
বড় কুন্ঠিত, বড় খেলো লাগে নিজেকে।
পাছে, কোথায় কখন শরমিন্দা হয়ে পড়ি
-সভয়ে চলি বাবুদের ওপাড়াতে। নাগরিক সমাজে।


তবু বলব বেশ আছি
সেই দশ বাই দশ কামরায়
কুচ্ছিৎ নর্দমার পুঁতিগন্ধময় গলির মাথার ঘরে।
খান কতক মলিন বালিশ আর তেল চিটচিটে সস্তা চাদরে
রাতে একফালি বাঁকা চাঁদ
দিনে বেড়ার ঘরে ফিনকি দিয়ে রবির আলো।
দিন গুজরান হয়ে যায় উঠতে বসতে।
বাবুরা হাউস করে ডাকেন ”বস্তি”।
তবে ঠিক সুখ নয়, ওর নাম স্বস্তি।
হঠাৎ পথভোলার মতো কেউ শুধায়
”কেমন আছিস”?
বলি, আছি আগেরই মতো, আগের ঠিকানায়।
গায়ে পড়া বান্ধব তবু পাল্টা প্রশ্ন ছোড়ে,
"আগে কেমন ছিলে?"
”ওইযে, আজ যেমনটা দেখলে"।


অদ্ভূৎ এ শহরে ঘুম নেমে এলে
চুপি চুপি মাঝরাতে
ক্যাঁচকেচে তক্তপোষে একা বসে
নিজেই নিজেরে যাঁচাই করি মাঝে মাঝে
ভাল আছি কি? শুধাই তৃষিত আত্মারে।।
সত্যি বলছি,
জানিনা, আসলেই কেমন আছি।
দুঃখিত আমার বাবু মশায় বন্ধুরা
আমি আজও ঠিক ”তোমরা” হয়ে উঠতে পারিনি।
ঠিক যেমনটা তোমরা নও ’আমি’।