আমার পুরোনো কবিতার খাতা, আজ খুঁজে পেয়েছি আবার।
হাজারটা অহেতুক কাগজ, ও ব্যস্ততার স্তূপের নিচে চাপা পড়ে,
রীতিমতো অচ্ছুৎ, ধূলিধূসরিত এক জঞ্জাল হয়ে পড়া,
আমার নীল মলাটে বাঁধানো, কবিতার খাতা।
তোমার সেই ছোট্ট নিজস্ব রকম উপহার, এক অ-কবিকে একদা উপহার দেয়া,
সাদা প্যাপিরাসে, নীল অবয়ব খাতা।
ভুলে পড়া কোনো এক সুন্দর বিকেলে, তোমার সেই ক্ষণিকের আবেগের উপহার।
তোমার চোখে হঠাৎ হঠাৎ ভর করত যে অদ্ভুত বিষন্ন আবছায়া, হয়তো তারই মতো।
জানি না, তুমি কী ছিলে-কায়া? নাকি নেহাত ই মায়া।
আবার আমি খুঁজে নিয়েছি ওর পাতার ভাঁজে লুকোনো, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লেপটে থাকা স্মৃতি।
সময়ের ভাঁজে ভাঁজে যেমন জমে থাকে বলা, না বলা-কত কী।
খাতার হলদেটে এগারোটি পাতায় তোমাকে নিয়ে লেখা,
এগারোটি অসম্পূর্ণ কবিতা, আনাড়ি হাতে, ভুল বানানের ছড়াছড়িতে একাকার,
বাকিটা কেবলই সাদা, ধূ ধূ শূন্যতা।
সেই অসম্পূর্ণ রচনা, সেই শূন্যতার রুদ্ধ আবেগ, আবার আবিষ্কার করেছি,
দলিত, মথিত, ও, আহত আবেগে।
নতুন কোনো আকুলতায়, সতেজ এক মাদকতায়।
শুনতে পাচ্ছ কি তুমি?
ওগো নীরবতার ঘুণ, ওগো নির্জন আঁধার, তুমি শুনতে পাও কি?
আমি আবারও ফিরেছি কবিতাকে আবর্তন করে অবিরত চলা আমার নিজস্ব ভুবনে।
কবিতা-আমার প্রিয় অজ্ঞাতবাস, আমার নিজস্ব রঙ্গমঞ্চ, আমার প্রিয় ব্যস্ততা,
আমার প্রিয় দুঃখ বিলাসের আলস্য মাখা একটুকু সুখ।
কবিতা আমার চৈত্রের তপ্ত দুপুরে, সামান্য হাওয়ার তরে হৃদয় উন্মুখ।
আমার ছন্নছাড়া, বাউণ্ডুলে নিত্য দিনে, আমার এলোমেলো বোধে,
কবিতা এক পশলা প্রশ্রয়, কবিতা দ্রোহে, কবিতা প্রতিশোধে,
আমি তাকেই আবার হাতে তুলে নিয়েছি পরম নির্ভরতায়।
আশ্রয় করেছি নিরাশ্রয়ের মতো, সে কী বিপুল মোহময়তায়।
দীর্ঘদিন, হ্যা, সুদীর্ঘ অনেকগুলো দিন,
যারে সরিয়ে রেখেছি দূরে, অকরুণ আলস্যে,
অথবা নিদারুণ অবহেলায়।
তোমাকে পাবার একদা আনন্দে, যাকে দূরে ঠেলে দিয়েছি অবলীলায়।
তাকেই আবার করেছি একান্ত আপন, নিবিড় ও প্রচ্ছন্ন আশায় ।
আমি কবিতার মাঝেই আবার খুঁজে নিয়েছি নিজের আমিকে।
আমি সেই কবিতাতেই ফিরে যাচ্ছি, কবিতায় ফেরাতে চাইছি,
আমার সবটুকু কল্পনা বিলাস, আমার একদা র স্বপ্নাবিষ্ট ভুবন,
আমার, তোমার যুগপৎ বিস্মরণ।