আসুন কমরেড।
শত সহস্র অযুত বিপ্লবীর রক্ত স্নাত এই রঙ্গমঞ্চে স্থাপিত
কণ্টক আস্তীর্ণ সিংহাসনে আরামে আসীন হোন।
আসুন, এই ক্রোধোন্মত্ত জল্লাদখানায়।
এই মৃত্যুর কসাইখানায় এসে বসুন কিছুটা সময়।  
আপনাকে স্বাগত হে প্রাক্তন!
আপনারই এ সাবেক ঠিকানায়।
যেখানে কেটেছে আপনার যৌবনের অনেকটা হিরন্ময় সময়।


আসুন কমরেড।
নিজ নিজ অবস্থান নিন, নিজ নিজ দায় বুঝে নিন।
অন্যায়ের জাহান্নামে পুড়তে থাকার অবসরে,
না হয় একটু জিরিয়েই নেবেন এই প্রতিহিংসার নরক খানায়।
এখানে মৃত্যুর আবেহায়াত পরিবেশিত হয় ঘন্টায় ঘন্টায়।
এখানে কবিতা নেই, এখানে বসন্তের ন্যাকামো পূর্ণ কবিতার আবৃত্তি নেই।
নেই ভন্ডামীপূর্ণ গদ্য কবিতার ধ্যাস্টামো।
জীবন এখানে নিতান্তই উদোম, ক্রুদ্ধ প্রতিহিংসাময়।


আসুন কমরেড,
এসে পড়ুন, নেমে পড়ুন জীবনের সত্যিকারের ধান্দায়।
এখানে প্রতিনিয়ত মরতে হয়।
বেঁচে থাকার মরিয়া চেষ্টায়,
এখানে মরতে, নয়তো মারতে হয়।
সুপ্রিয় প্রাক্তন,
আপনার সশরীর কিংবা বিদেহী সদয় উপস্থিতি,
আমাদের মতো অর্ধমৃত কমরেডদের জন্য যদি
বয়ে আনে ক্ষণিকের কিঞ্চিত আনন্দ,
খানিকটা আন্দোলিত করতে পারে, নুয়ে পড়া আমাদের একদার মৃত্যুভয়হীন দুঃসাহসকে,
দিতে পারে আবার জ্বলে উঠবার মতো কিছু স্ফুলিঙ্গ,
সেটুকু চাওয়া তো নেহাতই ভিক্ষা নয়।


সব দ্বিধা ঝেড়ে, সংশয়কে পায়ে দলে,
সহাস্যে আগত হোন, হে সাবেক ও পতিত কমরেড।
আপনার সকল পাপ বা পুণ্যকে সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে ভুলে গিয়ে,
আপনাকে স্বাগত জানাই,
এই প্রজ্বলিত হিংসার, এই দৃশ্যমান মৃত্যুযন্ত্রণা জল্লাদ খানায়!
স্বাগত!
জীবন যেখানে অশেষ, সেথায় মৃত্যুকে কে ডরায়?