ভালবেসে আমায় লেখা তোমার কবিতাখানি
মুখবন্ধ নীল খামে পেলাম।
তোমার চলে যাবার বহুদিন পর
আমাদের এক পা ভাঙা টেবিলের ডান পাশের দেরাজে
চুপচাপ পড়ে ছিল, মিহি ধুলোর আস্তরণে ঘুমিয়ে যেন।
তোমার স্মৃতির মতো।
চ্যাটচেটে আঠা দিয়ে সযত্নে মুড়ে দিয়েছিলে যদিও
আমি কিন্তু তোমার সুবাস
তার ভেতর দিয়ে ঠিকই পাচ্ছি।
অসময়ের ঝরাপাতার মতো এ যেন এক মস্ত আবিষ্কার।


এই কবিতাটির জন্য কোনো ধন্যবাদ
আজ আর তোমায় দেব না।
ধন্যবাদ এই কবিতাটির যথোপযুক্ত প্রতিউত্তর নয়।
ঠিক বা বেঠিক কোনো মুল্যও নয়।
স্বার্থপর পার্থিব জীবনের কষ্টলব্ধ অভিজ্ঞতার দামে রচিত
এই কবিতাটির প্রতিদানে
আরেকটি কবিতাই শুধু হতে পারে যোগ্য বিনিময়।
ছন্দের বিনাসুতি মালা, একগুচ্ছ পঙক্তির বদলায়।
ঘোর রক্তবর্ণ রাতজাগা আঁখির স্বেচ্ছাকৃত কৃষ্ণগহবরে
নিদ্রাহীন কবির দু’ছত্র কবিতা বেশ মানিয়ে যায়,
তোমার কবিতার বিপরীতে, অবলীলায়।


তোমার বিন্দু বিন্দু ভালবাসার প্রতিদানে
কোনো ধন্যবাদ তোমায় দেব না।
ধন্যবাদ তোমার ভালবাসার কাছে কিছু নয়।
দীর্ঘ দাম্পত্যে এক ছাদের নিচে
স্বর্নলতার মতো আমায় জড়িয়ে
প্রেমের যে শেকড় তুমি গেঁথেছিলে, নিবিড় আলিঙ্গনে
শুকনো একটুকরো ধন্যবাদ তার বিনিময়ে
তোমার প্রাপ্য নয়।
বরং ভালবাসায় ধন্য আমার ভিজে ওঠা চোখদুটোর
তিরতির করে কাঁপার দৃশ্যটুকু
তুমি প্রাণভরে উপভোগ করতে পার।
শূন্যতার ওপাড় হতে
সেই বরং বেশ মানায়।


তোমার ভালবাসার দান দু’হাতে
অঞ্জলী ভরে কেবল নিয়েই গেছি চিরকাল
তোমার আমি’কে তুমি ভরিয়ে তুলেছ
একটু একটু করে
সব নৈবেদ্য দিয়ে পূর্ণ করেছ আমায়।
সে ভালবাসার প্রতিদান দেবার দুঃসাহস করি না ।
সে বড় হঠকারিতা হবে।
বরং কৃতজ্ঞ প্রেমিকের জলে চিকচিক করা
চোখের সৌন্দর্যটুকু দুর হতে দেখে নাও
সে আমার গোপন প্রনয়।


ভিখিরি প্রেমিকের তোমাকে দেবার বেশী কিছু নেই
শুধু দু’ছত্র কবিতা আর কবিতার খাতার
ভাজে রাখা শুকানো গোলাপ পাপড়ি ক;খানা
রঙচটা, সুগন্ধ বর্জিত তবে প্রাণহীন নয় মোটেই।
ওতে আমার প্রথম প্রেমের স্পর্শ জড়িয়ে আছে আজও।
সেটুকুই বরং ভক্তের প্রনামী ঠাউরে নাও
আকুল প্রণয়ের বাঁধনে আমায় আবার জড়িয়ে দাও।
ফিরে এসো আমার সখী হে,
আবার আমায় ধন্য কর, পূর্ণ কর শুন্যস্থান।