জানালার লোহার গরাদের ফাঁকে দিয়ে আমি
চেয়ে চেয়ে দেখি ভোরের সূর্য ওঠা।
সুবেহ সাদেক শেষ হলে পূবে পশ্চিমে লাল
আভায় রক্ত আবীর ছড়িয়ে সূর্যদেব ওঠেন।
রাত ঘুমের আলস্য জড়ানো
নতুন দিনের আনন্দ আর একটা চাপা বিষন্নতা
মিলেমিশে থাকে ভোরের সূর্য রাগে
সামনের জঙলা বাড়িটার ছাদে আধভাঙা
একটা আয়নায় আমি উল্টো সূর্যকে উঠতে দেখি
উল্টো হলেও তার সেই একই আবীর রং, সেই একই তেজ।


পাশের বাড়ির আট মাসের বাচ্চাটার বোধহয় ঘুম ভাঙল।
ওঁয়া ওঁয়া কান্নায় সে জানান দেয় তার চাহিদা
বিরক্ত মায়ের আধা ঘুম জড়ানো আধা সজাগ একটা ত্রস্ত চেষ্টা তাকে থামানোর।
বাবা হয়তো পাশ ফিরে শোন, রাতের ক্ষতিটুকু আরেকটু পুশিয়ে নিতে।
একটা নাম না জানা পাখি অচেনা সুরে ডাকে
তাদের কিছু পুশিয়ে নেবার নেই শুধু জীবনকে টেনে নিয়ে চলা, অতঃপর........
বাসার ঘুলঘুলিতে সংসার পেতে বসা শালিক দম্পতির ঘুমও ভাঙে
অর্থহীন বা অর্থপূর্ন কিচির মিচির করে তারা কথা বলে
তাদের ছানার সাথে
ঝাড়ুদার মেয়েটা তরবর করে এসে পড়ে
নগরের বাবুদের জন্য রাজপথকে চকচকে করে তুলতে
সে তার নোংরা পোষাক আর সদ্য কেনা ঝাড়ুটা নিয়ে
ঘ্যাস ঘ্যাস শব্দে ঝাড়ু দিয়ে চলে সবলে
রাতের সব নোংরা সব অশুচি ঝেড়ে পুছে শহরকে
বাবুদের বাসযোগ্য করে তুলবে সে
যদিও তার নোংরা পোশাকটির অশুচি কেউ খেয়াল করবে না।
চকচকে রাজপথে অশুচি নোংরা এ্যপ্রোন।


সবারই ঘুম ভাঙে, জীবনের নিয়মিত নিয়মে
শুধু... আমারই ঘুম ভাঙে না। নিয়মমতো,
ভাঙে না কারন সে ভাঙার নয়ই।
নির্ঘুম রাতের পাহারাদারের তো ঘুম ভাঙতে নেই
সে শুধু জেগে থাকে। রাত বাড়ে, ঘুম নামে। দুরের বড় রাস্তায়
নিয়ন বাতিটাও নিবু নিবু হয়ে আসে। তারও
কি কখনো কখনো পায় ঘুম?
দুর গির্জায় প্রহরে প্রহরে ঘন্টা বেজে যায়
রাত শেষে দিন শুরু হয় নিয়মিত নিয়মে
সেই অচেনা পাখির সুবেহ সাদেক ঘোষণা, সেই একই উল্টো সূর্য ওঠা
দিন যায় রাত নামে, রাত শেষে দিন আসে
রূপকন্যারাও রাতের আঁধারে রুপ ফুরিয়ে
অবশেষে বাড়ি ফেরে।
সবই চলে ঘড়ির কাঁটা মেনে
শুধু আমার ঘুম পায় না। চোখের পাতা ক্লান্ত হয়
মনও বুঝি ক্লান্ত হয়, তবু তার ঘুম আসে না।
আমি জেগে থাকি রাত পাহাড়াদার হয়ে।
রাত জাগা পাখির মতো
যার ঘুমোতে নেই।