খবরে প্রকাশ চৌরাস্তায়
কাল রাত হতে
একটা মানুষ পড়ে আছে হাত পা ছড়িয়ে
একটা মানুষ কিংবা বলা ভাল, একটা লাশ
প্রাণবায়ুর অস্তিত্ববিহীন মানুষকে তো লাশই বলা যায়
লাশের পাশেই একটা ঝোলাব্যাগ
যার একটা পাশ পথের ধুলায় লেপ্টে বিবর্ণ
নির্জীব থলে হতে জীর্ণ একখানা বাধানো খাতার অস্তিত্ব
লাশের পরিচয় জানান দিচ্ছে কুন্ঠিত চিত্তে। একটি লাশ
কবির লাশ। একজন সদ্য সাবেক ছন্দশিল্পীর শব।

একদল লাল পিপড়ে খবর পেয়ে
রসাল খাবারের লোভে এসে পড়েছে অনাহুত
কবির কবিতার জীর্নখাতাখানা দেখে
তারা যেন একটু কুঞ্চিত।
কবিকে বাদ দিয়ে তার ঝোলার মধ্যে আধখাওয়া
একখানা রুটির সাথে সস্তার সিগ্রেটের প্যাকেটের দিকে তাই
তাদের সব নজর। কবিকে ভালবেসে নয়
তার শবশয়ানে এই অনাহুত শবযাত্রীদের আনাগোনা শুধুই
পার্থিব স্বার্থের অবকাশে।
ক্ষুধার্ত পিপড়েদের আনাগোনা কবির লাশে।

প্রথমে একজন কলাম লেখক এলেন
তার স্বভাবসুলভ বাগ্মিতায় চারপাশ সরগরম করে তোলেন বাকচতুর কলামযোদ্ধা।
দেশ ও জাতির বিরাট ক্ষতির আশংকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে
তার সংক্ষিপ্ত বয়ান শেষ করেন লেখক।
বড্ড তাড়াহুড়ো তার।
আরো গোটা দুই সামাজিক দায়িত্বে হাজিরা আছে যে আজ।

একটা নেড়ি কুকুর লেজ নাড়িয়ে কুঁই কুঁই শব্দে
জানান দেয় তার অস্তিত্ব
চলমান তামাশা হতে তার হিস্যা বুঝে নিতে হবে তাকে।
ন্যায্য পাওনা বুঝে নেবার তাড়া তার।
একটা বুড়ি ভিকিরি অনেকক্ষন হতে কিছু বলার জন্য
তার অযত্নে নষ্ট হওয়া তুবড়ানো চেহারা নিয়ে
অপেক্ষা করছিল অস্তিরতার মূর্ত প্রতীক হয়ে।
দর্শকরা ভাবছিল কবির ভক্ত হবে কোনো
এসেছে জানাতে অন্তিম বিদায়। কিন্তু
অনেক কিছুই বাকি ছিল জানা-বোঝার।
বুড়ি আসলে তার সকালের কাচা ঘুম ভাঙানোর প্রতিবাদে
নালিশ জানাতে এসেছিল। একজন কবির মৃত্যুতে
শোকযাত্রায় শামিল হবার ফুরসত কোথায় তার।

চৌরাস্তার দৃশ্যপটে একজন মানবতাবাদী উদয় হলেন
তিনি এলেন তার বহুল চর্চিত সিঁথি করা চুল আর
মানবিকতা গিলে খাওয়া বপুর চাকচিক্য সহকারে।
বহু যত্নে কন্ঠ মানবতায় ভেজানো তার।
দরদভরা অথচ প্রাণহীন যান্ত্রিক স্বরে
মিনিট দুই ভাষণ দেন মানবতার ফেরিওলা।
আহা উহু রব করে দয়াদ্র শ্রোতারা-একজন কলাম পাপী
নেড়ি কুকুর সমেত একদল আহুত লাল পিপড়ে আর আমপাবলিক।
চৌরাস্তায় কবির লাশ, অনাদরে, অযতনে আর দর্শক মানবিক।

অতঃপর দলে দলে আসে সমাজতন্ত্রী,
চেতনালুপ্ত জাতীয় বিপ্লবী
একজন গোরখোদক, বেশ্যার দালাল একজন
পাড়ার পিশতুতো মাসতুতো সম্পর্কের সুহৃদ
একজন উঠতি নায়িকা
পাড়ার নব্য মাস্তান, পাতি নেতা
সবাই লাশের পাশে ভীড় করে তাকে
রোদের আঁচ হতে ছায়ার আড়াল দেয়।
সমাজতন্ত্রীর বিপ্লবী কবিতার ডাক দেন
কর্পোরেট বেশ্যার দালাল ভীড়ে খদ্দের খোঁজেন
কবির শবদেহ কিন্তু ভূতলের সমাধিতেই পড়ে থাকে।
হাত-পা ছড়িয়ে ধুলার শয়ানে।
নেড়ি কুকুরটা লেজ নাড়িয়ে কৃতজ্ঞতা জানায়।
মানবতাবাদীর আখিপল্লব শোকে আরো আর্দ্র হয়।
কিন্তু কবির লাশের ঠিকানা হয় না।
চারপাশের চলমান আহা উহুর ফাঁক গলে
কবি কিংবা কবির লাশ ধুলার শয়ানে পড়ে থাকে
একটুকরো মাটির অপেক্ষায়।