আমি বড্ড একা হয়ে যাই
ফাঁকা ফাঁকা লাগে বুকের ডানপাশটা
চাপা চিনচিনে একটা ব্যথা
জানান দেয় তোমায় অস্তিত্বের অনুপস্থিতি।
নৈশব্দ গ্রাস করে চারপাশ
অথচ তুমি আছ পাশেই
ধরে আছ আমার তিনটি আঙুল
কাজল লাগানো টানা টানা চোখে
দেখছ আঙুলের শিরা উপশিরায়
প্রবহমান প্রগাঢ় অনুরাগ
তোমার প্রতি আমার।
ওইতো তুমি নতুন একটা ভাঁজ না ভাঙা
শাড়ি পড়ে এসেছ,
গত বছর তোমার তেইশতম জন্মদিনে,
আমার দেয়া সুগন্ধির কড়া সস্তা উগ্র ঝাঁঝটা ছাপিয়েও
আমি তোমার গায়ের গন্ধ পাচ্ছি
অনুভব করতে পারছি তোমার অস্তিত্ব
এবছর তুমি চব্বিশ
কাটিয়েছি তোমার সান্যিধ্যে আরো বারটি মাস,
পূর্ণ একটি বছর
তবুও বড্ড একা আমি।


এই দেখ, আমার সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে
অনুভব করতে চাইছি আমি তোমাকে
মনের পোট্রেটে এঁকে নিচ্ছি।
অপটু হাতের এলোমেলো তুলির আঁচড়ে
আধো ঘুমে আধো স্বপ্নে,
তুমি ফিরে ফিরে আস আমার কল্পনায়
এতটা জুড়ে আছ তুমি আমায়।
তবু কোথাও একটা তার ছিঁড়ে গেলে যেমন
বীণার বিষণ্ণ কেটে যাওয়া সুর
বেসুরো লাগে ভক্তের কানে
তোমার প্রেমময় চাহনী আবেগ জাগালেও
আজকাল তার স্থায়িত্বটুকু বড্ড ক্ষণস্থায়ী
ক্ষণেক ভাটিতে তো ক্ষণেক উজানে।


তোমার ভেলভেট মসৃণ আদর
নেলপলিশ লাগানো নিখুঁত দশটি আঙুল,
লেকের পাড়ে বিকেল পাঁচটায়
দু’টাকার বাদাম খোসার মোড়ক ছাড়িয়ে
টুকটাক করে খাওয়া, দু’একটা আলবোলা কথা
অখ্যাত নাম না জানা নদীর পাড় ধরে
জেলেদের নাঁয়ের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া হাত ধরাধরি করে-সব,
সবকিছু বড় বেশী একঘেঁয়ে ঘ্যানঘ্যানে মনে হয় আজকাল
ক্ষণিকের জন্য ভাল লাগলেও
মনে দাগ কাটতে না কাটতেই রেশটুকু মিলিয়ে যায়।
আমার নির্বান্ধব একাকিত্বের কাছে সেটা কিছুই নয়।


তোমার উষ্ণ স্পর্শ
প্রলুব্ধ করার সেই মোহিনী হাসি
প্রশ্রয়ের আহবান, নারীর চিরাচরিত রহস্য চাহুনী
আগে থেকে না জানিয়ে হঠাৎ হোস্টেলে এসে পড়ার চমক
ফুটপাতের সস্তা দোকান হতে কেনা
চুড়ি পড়ে বারবার আমায় দেখানো নানা ধরনে, নানা ঢঙে
আঁশটে গন্ধময়, ফাঙাস বিবর্ণ স্মৃতি হয়ে
অ্যালবামেই ফ্রেমবন্দী হয়ে রয়।
অস্তিত্বশীল আবার উপস্থিত নয়।
কোনো কিছুই আজকাল কেন যেন আর
টানে না চুম্বক আকর্ষনে। বিকর্ষণ কিন্তু ঠিকই করে।
কোনো মায়াই আমার
দিনের পর দিন একাকিত্বের
রুক্ষ তৃষিত মাঠে সঞ্জিবনী জল বর্ষে না।
হ্যাঁচকা টানে নৌকার তালি দেয়া পালে
হাওয়ার দমকে ধুমকেতু গতি আনে না।
বুকের উষর নির্জন মরুতে লু ঝড় তোলে না।
আর মন? সে একাই থাকে।
বড্ড একা লাগে।