মাননীয় সম্পাদক!
আমি দুঃখিত যে আপনার সাথে একমত হতে পারছি না।
অবশ্য সহমত হওয়াটা অতি আবশ্যক নয়।
সহমতের সাথে সর্বদা সহবাস
কিংবা জনতার মতে মত,
না না, সেটা খুব জরুরী নয়।


দুঃখিত আমি কোনো সুশীল কবি নই
কথার পিঠে কথা সাজিয়ে কথা বলা
আমার নেশা বা পেশা কোনোটিই নয়
আমি একজন নিতান্তই গেঁয়ো হাটুরে মানুষ
আপনাদের মতো দু’চার ইঞ্চি কলামে
ভারী ভারী লেখা আমার কম্মো নয়
মধ্যবিত্ত সংসারী পুরুষ যেমন মোটা দাগে
জীবনটাকে জাস্ট টেনে নিয়ে চলে।
আমার প্রতিবাদী বক্তব্যটা সেরকম সাদামাটাভাবে বলতে পারব।
অবশ্য সে আপনাদের কাগজে ছাপানো খুব ভাইটাল নয়।
সুশীলদের কাতারে দাড়ানোর গোপন লালিত ইচ্ছার স্বার্থে
এ আমার একরকম আপোষ বলতে পারেন।

গণতন্ত্রের স্বৈরাচারী মোড়ক কিংবা
স্বৈরাচারের ঔরষে গণতন্ত্রের অবৈধ জন্ম,
লজ্জায় নুয়ে পড়া লাল-সবুজ ধ্বজ্জা
ন্যুজ জাতিগত একাত্বতা, ক্রমহ্রাসমান, স্থানু সম্মিলিত বিবেক-
প্রভৃতি বিষয়ে আপনার সাম্প্রতিক জ্ঞানগর্ভ কিন্তু
নিতান্ত নিরস দায়সারা দু ইঞ্চি কলাম
আমি মেনে নিতে পারছি না। অবশ্য,
তাতে আপনার বহুল কাটতির পত্রিকার খুব সামান্যই এসে যায়।


আমি দুঃখিত মাননীয় সম্পাদক,
না, সর্বসাম্প্রতিক কোনো জাতীয় ইস্যুতে নয়
জাতিকে নিয়ে ভাবব, অতবড় মানুষ আমি নই।
সবশেষ শিশু খুনের ঘটনাটির জন্যও নয়
এমনকি ছেলের সকাশে জন্মদাত্রীর সম্ভ্রমহানী দেখেও
ওটার ঠিক-বেঠিক বিচারে আমার বড় ভয়।
প্রশ্ন ফাঁস, অতঃপর ভবিষ্যতের একজন
হতে পারত ডাক্তারের পুলিশের বুটে পিষ্ট হওয়া
অভিবাসনকামীর সলিল সমাধি
কয়লার কালো বিষবাস্পে ধর্ষনের অপেক্ষায়
আমার প্রিয় একটি বন-
না, কোনো কিছুর জন্য নয়।

আমি আসলে দুঃখিত, খুবই দুঃখিত
নগ্ন নারী আর রুপপসরার বিজ্ঞাপনের চকচকে দানবীয় লোভের কাছে
আপনার পত্রিকাটির নির্লজ্জ আত্নসমর্পনের গ্লানিতে।
জাতির সম্ভ্রম যখন শকুনের নখরে ক্ষতবিক্ষত
তখন আপনার বহুল প্রচারিত পত্রিকায়
শিল্প সাহিত্যের ক্রমবিকাশ নিয়ে দীর্ঘ কলাম
কোনো অখ্যাত কবির আদি কাব্যরসের রাসায়নিক বিশ্লেষণ
কিংবা ধার করা চটুল কবিতার স্তুপ ছাপা হতে দেখে।


অথচ, আপনি, হ্যা, মাননীয় সম্পাদক,
কথা দিয়েছিলেন উপস্থিত সুধীমন্ডলী সম্প্রকাশে
আমাদের পত্রিকা হবে আপোষহীন।
পত্রিকা হবে গণমানুষের ……. ইত্যাদি ইত্যাদি।
হয়তো বলবেন সেটা ছিল একটা কথার কথা, একটা ঠুনকো মাইথ
কথার ছদ্মাবরনে নতুন আরেকটা মিথ্যা।


বড় দুঃখবোধ হয় আপনার জন্য
যখন আপনার নির্লজ্জ দালালি
বড্ড বেমানানভাবে আপনার ভেতরটাকে বাইরে
সদ্য খোলস ছেড়ে আসা সাপের মতো নাজুক করে তোলে।
ন্যায় আর অন্যায়ের কেশাগ্রতুল্য সুক্ষ্ন তফাৎটা
যখন আপনার পত্রিকা এড়িয়ে যায় আলগোছে,
নানান যুক্তি আর নিয়মনিষ্ঠার বাতাবরনে, তখন।


অখ্যাত কোনো কবির একত্রিশটি সযত্ন রচিত কবিতা,
যেগুলো তার বহু রাত নিদ্রাহীন যাপনের ফসল।
যক্ষের ধনের মতো তিনি দীর্ঘকাল আগলে রেখেছেন
তালা ভাঙা একটা তোড়ঙ্গের সুরক্ষায়।
অশ্লীলতার অপরাধে
মুহূর্তে আপনি সেগুলো স্বাচ্ছন্দে ছুড়ে ফেলে দেন।
অথচ বিনোদন পাতায় আদী কামকলার অপর্যাপ্ত যোগান
ইশারা ইঙ্গিতে সুড়সুড়ি প্রদান।
না, এতকিছুর পরেও আপনার জন্য ঘৃনা নয়
হে প্রিয় সম্পাদক!
একটা তীব্র দুঃখবোধই শুধু বেঁচে রয়।