প্রিয় বরকত,
কেমন আছ? ভাল নিশ্চই?
তোমাদের নামে নামাঙ্কিত হস্টেলের কাছ দিয়ে
নগ্নবক্ষা নায়িকার পোষ্টার সম্বলিত
দিশি সিনেমার পোষ্টারে ছাওয়া দেয়ালের পাশ কাটিয়ে
কপোত কপোতিদের প্রকাশ্য
অসংকোচ প্রেম বিনিময়ের মাঝে
তোমাদের স্মৃতির মিনারে পৌছাতে পেলাম।
রাজপথগুলো ৫২’র চেয়ে
আজ অনেক বেশি কালো হয়েছে।
কৃষ্ণচূড়াগুলো আরেকটু গাঢ় লাল
কংক্রিটের মিনারে সাদা চুনকামে
শোক নয়, আভিজাত্য ঠিকরে বেরোচ্ছে।
ভুল কিছু ভাবছি নাতো?
হয়তো শহীদের চেতনা এমনি করেই হতে হয়।
এমনি ঝকঝকে হ্যান্ডমাইক
নতুন কুর্তা, বেনিয়া স্পন্সর্ড পথনাটক
কোকের আধখালি বোতল
বহুল চর্চিত শোকমুখের উপস্থাপিকা
নিরাপত্তার ঘেরাটোপ
এসবই একুশের অতি আবশ্যকীয় চেতনা।
হয়তো আমিই ভুল।
কে জানে, হয়তো তোমরাও ছিলে।
আমি কে?
তা জানতে চেয়ো না।
সেদিন
১৮ তারিখের মাঝ দুপুরের একটু আগে।
ক্রূদ্ধ মুষ্টি উঁচিয়ে তোমরা যখন স্লোগান দিচ্ছিলে
আমি তোমাদের একটু পেছনেই ছিলাম।
অতটা সাহসী ছিলাম না।
তাই হয়তো দু’চারটা স্প্লিন্টারের আঘাত নিয়ে হলেও
বেঁচে গিয়েছিলাম।
তিনটে অবনত মস্তক কংক্রিট বেদী
তোমাদের রুধিরের স্রোতের উপর
গড়ে তুলেছিলাম এই আমি এবং আমরাই।
তোমাদের লুটিয়ে পড়তে দেখে
সেই দুর্যোগ মুহূর্তেও
করণীয় নিয়ে
ক্ষণিকের তরে কিঞ্চিত বিভ্রান্ত হয়েছিলাম।
আজ মোটেই নই।
আজ আমি স্থিরচিত্ত,
আজ আমি পরিণত।
।।
প্রিয় রফিক, জব্বার,
বেদীগুলো আজও তেমনি মাথানত করে আছে।
কতকটা তোমাদের শোকে, সম্মানে, শ্রদ্ধায়।
কতকটা অবশ্য এই বিশ্বাসঘাতক জাতির,
এই ক্ষয়ে যাওয়া প্রজন্মের নির্লজ্জ বদলে যাবার পেষণে।
আজ আমি তোমাদের মৃত্যু
কিংবা আত্নদানকে
স্রেফ আত্মহত্যাই বলব।
পাগল ঠাউরুলে আমায়?
এসো তবে আর একবার
ঘুরে যাও তোমাদের প্রাণের বিনিময়ে
মাথা তোলা মিনারে
তিনটে কংক্রীট স্তম্ভ সসংকোচে দাড়িয়ে।
আজও তোমাদের সাহসিকতা নিয়ে
আত্মদান নিয়ে, মাথা না নোয়ানো তেজ নিয়ে
আমরা দু’টো চারটে কবিতা ঠিকই লিখি
তোমরা প্রাণ দিলে বলেই আমরা
আধো কর্পোরেট ঢঙে
পুস্তক বিকিকিনির মেলা করি
প্রাণের মেলা নাম দিয়ে।
তাতে হরেক পদের সস্তা চুড়ি ফিতা হতে
দামী সেন্ট সুরমা সবকিছুরই পশরা নিয়ে বসি।
দামী মেকআপের রমনীকুল
আধো শোক আধো বিনোদনের খোরাক বয়ে আনে।
তোমাদের প্রাণ বিসর্জন উপলক্ষ্যে
সর্বদা শশব্যস্ত কর্পোরেট পুরুষ
পেয়েছে আরেকটি বাড়তি ছুটির দিন।
একুশ এলো বলেই না
আমরা নতুন সাদা কালো কুর্তা
বর্ণমালায় রাঙানো রমনীর ফর্সা মুখ
লকলকে কর্পোরেট স্বার্থের নানা আলোচনা অনুষ্ঠান
আরো কত কী পেয়েছি?
প্রাপ্তির খাতায় স্থান সঙ্কুলান দিতেই হিমশিম
ভাষা অফিসের কেরানী।
।।
বলতে সংকোচ নেই শফিউর,
আমাদের প্রাণের ভাষা
প্রিয় বর্ণমালা, ধর্ষিত হয় প্রতিনিয়ত
একুশের ক্যালেন্ডারে
ফাল্গুনের মাসে
চেতনার আড়ালে প্রাণ পায়
বিজ্ঞাপন সংস্কৃতি
বিলিতি হাঙর সংস্কৃতি
গিলে খায় আমার পতাকাকে
আড়মোড়া ভেঙে জাগে পুস্তক কারবারি
নিশিকণ্যাদের আনাগোনা বাড়ে
অবচেতন পুরুষত্বের আগ্রাসনে
তবু,
অপ্রকৃতস্থ কাকে বলবে?
বুলেটের আশির্বাদ হতে
দুর্ভাগ্য কিংবা
সময়ের হেরফেরে বেঁচে ফেরা আমাকে?
ক্ষয়ে যাওয়া চেতনালুপ্ত এ শহরকে?
কিংবা ভাসমান ভাষা চেতনার গোটা জাতিকে?