গান নয়, লালপতাকা মিছিল বা আন্দোলন নয়,
স্লোগানের তুফান তোলা যুবকের সাহার রগ নয়
আমি বরং,
একটি কবিতা দিয়ে জয় করতে পারি সব।
একটি সুলিখিত সনেটে প্রস্ফুট করতে পারি
তোমার অস্ফুট মনের অব্যক্ত বেদনা গাঁথা।
আবার এই কবিতা দিয়েই কাঁপিয়ে দিতে পারি
দাজ্জালের হিংসার মসনদ। যেমনটা-
দিয়েছিলাম ঊনিষশো ঊনসত্তরে।
কবিতার শানিত হাতিয়ার
ছন্দের মাধুর্যে, ঘাত প্রতিঘাতে
জীবন ও মরনের মাঝে-চকিতেই
এঁকে দিতে পারে যোজন যোজন ব্যবধান।


আমি এক চারণ কবি।
কবিতার পাঠক খুঁজছি, অপ্রকাশিত পান্ডুলিপির।
কোনো বরুণার জন্য একশো আটটি নীল পদ্ম নয়
সস্তা কাগজে ততোধিক সস্তা কলমে লেখা
আমার গোটা দুই পদ্যের।
একজন সাহিত্যের  পৃষ্ঠপোষক খুঁজছি,
খেরোখাতায় আধাআধি লেখা
প্রায় সমাপ্ত একটি মঙ্গল কাব্যের জন্য
একজন মাত্র প্রকাশকের জন্য হাহাকার করছি।


আমি একজন নেকাব্বরকে খুঁজছি
একজন নুরলদীনকে
জসিমুদ্দীনের আসমানিকে।
আমার হারিয়ে যাওয়া শৈশব, কাঁদামাটি মাখা হাটুরে জীবন
অনেকটা পড়ে অবহেলায় ফেলে রাখা
নিষিদ্ধ উপন্যাস।
সযত্নে বাঁচিয়ে রাখা গোটা দুই পাতার বিড়ি
উঁই ঢিবির মাটির মতোন
ক্রমাগত জমানো প্রস্তরিভূত স্মৃতি
ইচ্ছেমাফিক হারানো সময়ের ফসিলে
বুড়ো অশ্বত্থের বিবর্ণ পাতায়
-খুঁজে ফিরছি।


খুঁজছি আমার জীবনের প্রতিটি বাঁক,
ক্রাচে ভর দিয়ে থুত্থুরে বার্ধক্য,
হামা দিয়ে ধুঁকতে ধুঁকতে
ঘেঁষটে চলা দ্ব্যর্থ জীবনের মানে।
দ্বিচারী মনের সাথে নিয়ত দ্বন্দে
সময়ের পিঠে  গেঁথে আরাধ্য সময়।
চন্দ্রভূক অমাবশ্যায়, পূর্ণীমাসির রাতে, বিরহের সুরে
ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধে
নাড়ি পোতা আমার পুরোনো জীবন,
হারানো কয়েকটি পৃষ্ঠা,
খুঁজছি দিবানিশী, উদ্যানে, অবেলায়।
শুধু খুঁজছি আর খুঁজছি
তবু পাইনে তার খোঁজ।
আমার পরম আরাধ্য, কিছুটা সময়।


আরও খুঁজছি একটা উপযুক্ত ঠিকানা,
আমার বুকপকেটে, প্রিয়াকে লেখা প্রথম চিঠির জন্য।
কবে পাব তার খোঁজ।
দিচ্ছি, দেব করে করে ডাকে আর ছাড়া হয়নি।
অথচ জবাবের মিছে আশায়, ডাকপিয়নকে শুধোই  রোজ।
পাছে তার বিয়ারিং খাম, প্রাপক না পেয়ে বেহাত হয়
আমার দোরে মাথা কুটে মরার নেই তার সময়।