প্রতিদিন হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের স্বপ্ন,
হারিয়ে যাচ্ছে না বলে,
বলা চলে, স্বপ্নরা চুরি হয়ে যাচ্ছে।
অবচেতনে টাল খাওয়া রিক্সার চাকায় জড়িয়ে
পিচঢালা রাজপথের তপ্ত মরিচিকার মোহজালে
স্থানু নাগরিক জীবনে, বেঁচে থাকার ফাঁকে ফাঁকে।
দু’চোখের কোলে ঢুলু ঢুলু চাউনিতে
স্বপ্নরা নেই বেঁচে,
হলুদ দুঃস্বপ্নেরা বাসা বাঁধে সেথা গাঢ় কালিতে।
স্বপ্ন দেখার অবসরটুকু কেড়ে নিয়ে
হলুদ মোড়কে পোরা ধোঁয়াশা একরাশ
দিয়ে গেছে ক্ষতিপুরনের আশ্বাসে।
কুচ্ছিত কুঞ্চিত বিবশ কল্পনা
কিলবিল করে বুক পকেটে, কোর্তার আস্তিনে


দাহকালের স্বপ্নগুলো রঙিন রোদ চশমায়
আকাশ দেখার মতো
লাল-নীল নয়, বড্ড সাদাকালো
বিধবার সাদা থানের মতো, একপেড়ে।
তবু সেই সামান্য স্বপ্ন
ও স্বপ্ন দেখার ইচ্ছেটুকুও
কেড়ে নেয়া হয় লোভের খসখসে রুক্ষ হাতে।
তিল তিল করে জমানো আমাদের স্বপ্ন
চুরি যায়। খেই হারায় সময়ের ইথারে।


একটা আকাশের সমান স্বপ্ন ছিল আমার
সমুদ্রের মতো বিশাল, পাহাড়ের মতো মৌন, স্থির।
বড় হব, অনেক বড়। মেঘকে ছোঁব দু’হাতে
দিগন্তের কপালে টিকা পড়াব একদিন-
সাগরের উর্মিকে বাঁধব বালুর বাঁধে,
সাদা ফেনার মালা পড়াব ফেনিল জলে
ঝিনুক মালা গাঁথব প্রেমের কবিতার সুঁতোয়
রাতের কোলে চাঁদোয়ার মায়ায়
হাঁটব তার হাতে হাত ধরে। দুরে বহুদুরে।


মরিচিকা বালুর বাঁধ বেঁধেছি কেবলই
ঢেউয়ে ভেসে গেছে হঠাৎ জোয়ারে।
রেখে গেছে চিহ্ন বিবশ আচ্ছাদনে।
জীবন যেথা শুধুই বেঁচে থাকা
স্রেফ বাঁচার জন্য বাঁচা,
গরলের কর্কশ আস্বাদনে
দিনের অপেক্ষায় রাত জাগা
দিবাবসানে নিশীর দেখা
স্বপ্ন সেথা অলীক কল্পনা, মিছে কথার ফানুস
কবির কবিতার ডায়রীতে হিজিবিজি লেখা
লেখা আর কাটা, কেঁটে ফের লেখা।
এ যেন এক নেশা অবিনাশি
শেষ জ্বলে ওঠার অপেক্ষায়
নিভু নিভু সলতের দপ করে ওঠা।


ধুসর রাতঘুমের ঘ্যাসঘ্যাসে ঘুনপোকা রাতে
তাই স্বপ্ন দেখিনা আর
কাষ্ঠবত শুয়ে আটপৌরে পৌষের তক্তপোষে।  
দুঃস্বপ্নের প্রেতাত্মারা হানা দেয় বারবার
নগরের হলুদ নিয়নের কোলাহলের ভীড়ে
স্বপ্ন দেখার কোথায় অবসর?
অবিশ্বাসের প্রগাঢ় হলাহল প্রশ্বাসে
বিষাক্ত ঘুর্নিবায়ু পূর্ন ফুসফুসে
স্বপ্ন নয়, হলুদ দুঃস্বপ্নরাই
ফিরে ফিরে আসে।