গর্ভে তোমার জড়সড় ছিলাম ঘুমিয়ে, মাগো-
ধরারটানে উত্তেজিত, যেন প্রথম আন্দোলন,
তুমি গর্ভে ধরেছ মাগো, তবু জগতের মায়া বড়
সরো সরো, জায়গা করো যেন করি জন্ম গ্রহণ।
পরম আদরে মাগো ধরেছিলে আমায় জঠরে
বিদ্রোহী আমি, থাকিনি সেই আধাঁর কোঠরে-
তবে কি করে মানবো পৃথ্বীর সব বাঁধা
যে বিদ্রোহের জন্ম মাগো তোমারি দেহের ভিতরে।
আপন গন্তব্যের অন্তে পৌছুতে মাগো
করিনি গর্ভধারিণী তোমারও কষ্টের ওজন;
আমি নিঠুর, আমি পাষণ্ড বড়,
ধরাতে এসেই ওয়ানা রবে করেছি বিদ্রোহেরই ঘোষণ।
নিজেকে গড়েছি মাগো সে চেতনায় অনুক্ষণ-
ক্রুদ্ধ মেজাজে মনকে বলি, তোমার সে কষ্ট বক্ষে বিঁধে যখন-
বল মন;
আমিও অধিকার আদায়ে সোচ্চার, বিদ্রোহী একজন।
বল, মায়ের অন্ধকার জঠর ভেদী-
বল, ধরাতে আসার আট সেন্টিমিটারের রাস্তা ছেদি-
বল, ওয়ানা রবেতে পৃথিবীতে তুলতে সুরের ঝংকার!
বল, এনে দিতে মায়ের খুইয়ে যাওয়া সে পদালংকার-
বল, তৃষিত ধুলিস্যিত করতে দুঃখ পর্বত প্রমাণ
বল মন,
এসেছি অবনি পড়ে আমি সেই বিদ্রোহী একজন।


বল, তমশার কুয়াশা স্বহস্তে ছেঁকে-
বল, অকুতোভয়; দুরাশার অমানিশা দেখে,
বল, আস্তাকুড়ে বস্তা ভরা পড়ে থাকা ঐ ছিন্নমুলগুলি-
বল, রাস্তা জুরে মোরে মোরে সস্তা প্রতিস্রুতির কেন এতো বুলি?
বল, রোজ সকালে পানতা ভাতে কাঁচা মরিচের কি স্বাদ;
বল, ঘুসের করালে যোগ্যতা হারালে মানে না মনের বাঁধ।
বল, রিকশার প্যাডেলে মানবতা হারালে উন্নত থাকে না শির
বল, পেষণির যাতাকলে সুসাহস গেলে ম’লে জন্মে না কোন বীর।
বল, লাভ কি আছে খুলে ফেলে রেখে মহা ঐ উদ্যান
বল, একতা না থাকে যদি ব্যর্থতায় বইবে নদী, নষ্ট জীবনের মান।
তবু পুষ্টতায় চাই,সৎ সাহসের বড়াই, নেতৃত্ব এমন;
বল মন-
ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় এসেছি আমি সেই বিদ্রোহী একজন।


বল, ভাঙা চালে কেন আকাশ দেখা ঐ ফুটা
বল, দিনের মজুরী প্রাপ্তিতে কেন কিছু ক্ষুদ-ঘাঁটা?
বল, ছ’হাজারি বাবার ছ’বছরি মেয়ের চাহিদায় কিছু চুরি
বল, কাচারি বাজারে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ মায়ের আহাজারি।
বল, ভিক্ষার থালা হাতে ঘুরে ফেরা আশি বছরি পিতা,
বল, শিক্ষার অধিকার বঞ্চিত শিশু ইট ভাটায় পোড়াচ্ছে চিতা।
বল, ষোড়শী যুবতীর যৌতুকের দায়ে সর্বস্বান্ত বাবা মা
বল, সাত খুনের দায়ে দাগী আসামি কি করে পায় ক্ষমা?
বল, নৈতিকতার নিম্ন সীমাটাও কেন আজ বিলীন?
বল, হাসি হাসি যায় আমার বোন, ফেরে কেন মুখটি মলিন?
চাই যে দিবে সব উত্তর এমন সাধু জন-
বল মন-
সকল জিজ্ঞাসার সুরাহায় এসেছি আমি সেই বিদ্রোহী একজন।


বল, গাইতি হাতে সভ্যতা গেঁথে কি পেয়েছি আমি
বল, কোদালের বাটে, শনি বাড়ির ঘাটে শেষাংশটাও চুষে নিয়েছ তুমি।
বল, গ্রীষ্মের দাহে রৌদ্র পিঠে সহে চষি তোমার জীবন-
বল, কি অপরাধ, দাদনের দোষে, আহা! মহা রোষে আমার কেন মরণ?
বল, মাথার ঘাম পায়েতে শুকিয়েও শ্রমিকের নাই দাম-
বল, কলের চাকায় বিলাসিতা বানাই আপন কষ্টে অবিরাম।
বল, রেলের চাকায় তেল দিতে করি আমি কুলিগিরি
বল, একটু ভুলেতেই কেন কিল ঘুসি আর নিচ্ছ বস্ত্র ছিঁড়ি?
বল, সর্বচ্চ শিক্ষা শেষেও কেন আজও আমি বেকার?
বল, দুর্নীতিবাজেরা দেশটা চালায় এইকি ছিল দেখার?
বল, সকালে উঠে সারাদিন ভাল হয়ে চলা ছিল যেই ছেলেটার পণ
বল, তার হাতে কেন উঠল বোমা নিতে নিরীহের জীবন?
বল মন-
শিষ্টের রক্ষণ, দুষ্টের দমনে এসেছি আমি সেই বিদ্রোহী একজন।


বল, ঊষা ফোটার আগে, সবার আগে জাগে ঘুম হতে দুটি চোখ
বল, ঝলসানো বাহুর কর্মে পুষ্ট বলবান ঘামে ভেজা আমি সেই যুবক।
বল, ভয় করিনা, ভীত নই পরের জোরে দেয়া তোমার গলার হুংকারে-
বল, মিথ্যা অহঙ্কার যাবে মিটে বিদ্রোহীর তরবারি ঝংকারে।
বল, প্রগতির পানে, চলি আপন তানে, নত নই চির উন্নত শির,
বল, আঁধার কেটে আলো ফুঁটালো, আমি সেই মহাবীর।
বল, বুকের রুধিতে রঞ্জিত করেছি কতবার ঐ রাজপথ
বল, তিরিশ লক্ষবার শহীদ হয়েছি তবু ত্যাগীনি মুক্তির শপথ।
বল, আমার রক্তরাগে, লাল সূর্যটা জাগে দিকের শেষে আজ
বল, হায়েনায় কাড়ি নিয়েছিল ছিনি, আমিই এনেছি সেই তাজ।
বল, গভীর রজনী, জাগি একাকিনী শক্তি দাও হে মহান
বল, যে নিষ্ঠা আজ জেগেছে চিত্তে করো আরও বলিয়ান-
বল মন-
সালাহউদ্দিন, আমি আইয়ুবি; ধরিত্রীর বুকে সেই বিদ্রোহী একজন।


বল, ধর্মান্ধ আমি, মৌলবাদী; মুলের রক্ষায় ভীষণ গোঁড়া
বল, বিজয়ের নিশান উরিয়ে আমি বখতিয়ারের ঘোড়া।
বল, থরথর মহা দুর্গ কাঁপিয়ে দীর্ঘদেহী শেরে আলী,
বল, যে মাটিতে জন্মেছি, সংগ্রামে আজ মুষ্ঠিতে তার বালি।
বল, দিনের শুরু লুটায়ে কপল ঐ সুমহান মালিকের পায়
বল, ভয় করি শুধু তাঁকেই আজ, কে রুখবে তবে আমায়?
বল, পাপিষ্ঠের রুধিতে রঞ্জিত আজ আমার হাতের তরবারি
বল, যে শান্তি হরণ করেছ তুমি, জয়েতে তাই এনেছি কাড়ি।
বল, ভীত হও নত হও আমার পদব্রজের প্রতিটি আওয়াজে
বল, অন্যায়ের সাথে আপোষ নেই, দৃঢ়তা কথায় এবং কাজে।
বল, সৎ সাহস, স্বদিচ্ছা আছে হৃদয়ে তোমার অনুক্ষণ
বল, স্রষ্টা দিল করুণাতে নষ্ট করবো না সে জীবন
বল মন-
নশ্বর ধরাতে অবিনশ্বর আদর্শ প্রতিষ্ঠায় এসেছি আমি সেই বিদ্রোহী একজন।


বল, তমশা আজ থাকবে না আর
বল, পূর্বাশার আলো পুনঃজ্বলবে আবার,
বল, মুক্তির দুয়ারে পৌঁছাতে পাড়ি দেব বাঁধার অগ্নিগিরি
বল, সুখের পর্বতের চুড়ায় উঠতে আমরাই রচিব সিঁড়ি।
বল, সাহারার বুক ভরিয়ে দিব সবুজের ঘন অরন্যে
বল, আপনার বুকটা পেতে দেব অপর ভাইটার মুখটা রক্ষার জন্যে।
বল, কুনীতি ক্ষইয়ে সুনীতি আনিবো ওড়াবো শান্তির নিশান
বল, মায়ের সম্মানে মাটির জন্য লড়বো, খুশীতে নাচবে কৃষাণ।
বল, ভক্তি সকলি সেই মায়েতে যার গর্ভে প্রথম আন্দোলন
বল, তার মুখেতে হাসির জন্য হাসতে হাসতে দিয়ে দিবো জীবন...।।
বল মন...
বল মন..
বল মন...
আমার অধিকার আদায়ে আমি তেজস্বী সেই বিদ্রোহী একজন।