একটু ধাক্কা দাও


জাহিদ হোসেন রনজু
-------------------------------®


আমার চাওয়াটা,
আমার ছোট্ট একটু চাওয়া
তোমরা একটু মিটিয়ে দিবে?
এই এতটুকু....এইটুকু।


তোমাদের তো অনেক আছে -
অনেক বড় বড় দালান আছে,
আসবাবপত্রে ভরপুর ঘর আছে।


না, ভয় পেয়ো না।
আমি তোমাদের মতন মস্ত দালান চাই না।
আমি শুধু ছোট্ট একটু শোবার জায়গা চাই -
এই এতটুকু....
খুবই সামান্য - পা থেকে মাথা অবধি


প্রখর রোদে একটু ছায়া পাই,
ঝড়-বৃষ্টির আঁচ থেকে আড়াল নিতে পারি-
এমন একটু জায়গা।


আর একটি পাটি হলেই হবে।
না, আমার কোন বালিশ লাগবে না।
আমার হাতের উপর মাথা রেখে আমি দিব্যি ঘুমাতে পারি।


একদিন
আমার এই এতটুকু চাওয়ার কথা
তোমাদের মতন একজনকে বলেছিলাম।
মস্ত বড়লোক।
দশ-বারোটি বাড়ি,
গোটা পাঁচেক গাড়ি,
ব্যাংক ভর্তি টাকা আর টাকা।
সৌম্য-ভদ্র চেহারা।
একেবারে যীশুর পবিত্র মূর্তির মতন।
দেখলেই শ্রদ্ধায় ভক্তি চলে আসে এমন চেহারা।


যীশুর মহানুভবতার কথা মনে পড়ে যাওয়ায়
হৃদয় ভরা ভরসা নিয়ে
তাকে বলেছিলাম আমার এই ছোট্ট চাওয়ার কথা।


বলেই বুঝেছিলাম
খালি চোখে যা দেখা যায় তা সব সময় সত্যি নয়।
তিনি আমার কথা শুনে ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন-


'শোন, কুঁজোর চিত হয়ে শোবার শখ থাকতে নেই"।


বলেই চলে গিয়েছিলেন তিনি
শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের দরজা ঠেলে ভিতরে


তার সেই কথা শুনে তার চারপাশের মানুষগুলো হা.হা.হি.হি করে হেসে উঠেছিল
আমি একেবারে কুঁকড়ে গিয়েছিলাম।


শুধু
ওদের মধ্যে ব্যতিক্রম ছিলেন
ম্যানেজার বাবুটি
তিনি আমার এই কুণ্ঠিত অবস্থা দেখে
হাত ইশারায় কাছে ডাকলেন,
কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে বললেন-
'রাস্তায় বড় বড় ট্রাক বাস চলে
তুই ওগুলো একটির নীচে পড়ে মরে যা,
দেখবি এইমাত্র তুই যা যা চেয়েছিস
সব পেয়ে যাবি, সব-
এই যেমন
পা থেকে মাথা অবধি জায়গা
রৌদ্র থেকে বাঁচার ছায়া।
ঝড়-বৃষ্টির আঁচ তোর গায়ে কোনদিনই লাগবে না
আর তুলতুলে নরম মাটি পাবি, জাজিমের মত
পাটি, বালিশ এসব কিছুরই দরকার হবে না....


ম্যানেজার বাবু অন্যদের মতন
অসভ্যদের মতন খিলখিল করে হেসে উঠেননি
ম্যানেজার বাবুর ঠোঁটে মিহি এক টুকরো হাসি লেগেছিল


কতদিন না খেয়ে থেকেছি
কত রোদ-বৃষ্টিতে পুঁড়েছি, ভিজেছি
কত গলাধাক্কা খেতে হয়েছে জীবনে
কষ্ট পেয়েছি, আবার ভুলেও গেছি নিয়তি ভেবে


কিন্তু ভুলতে পারিনি
যীশুর মতন দেখতে মানুষটির সেই ব্যঙ্গ
আর
ম্যানেজার বাবুর ঐ হাসি
আজো আমাকে পোড়ায়
ঐ ব্যঙ্গ, ঐ মিহি হাসি আমাকে ঘুমাতে দেয় না


আমি চলন্ত বাসের সামনে যেয়ে দাঁড়িয়েছি
দাঁড়িয়েছি ছুটে চলা ট্রাকের সামনে
ম্যানেজারের দেখানো সেই এক টুকরো জায়গার জন্য
ঐ ব্যঙ্গ,
ঐ মিহি হাসি ভোলার জন্য


কিন্তু আমার পাওয়া হয়নি
আমার যাওয়া হয়নি
পা থেকে মাথা অবধি ছোট্ট জায়গাটায় আজো


বার বার বাস-ট্রাকগুলো সর্বশক্তি দিয়ে আমার সামনে এসে থেমে গেছে
চালক, হেলপারের খিস্তি-খেউড় শুনেছি
কিন্তু গন্তব্যে যেতে পারিনি।


তাই আজ আবার এসেছি তোমাদের কাছে
আমার ছোট্ট একটু চাওয়া নিয়ে
এই এতটুকু....এইটুকু


না, আজ আর তোমাদের কোটি টাকা মূল্যের
জমির অংশ থেকে
আমার এই ছোট চাওয়াটুকু তোমাদের মিটাতে বলছি না
বলছি একটু ধাক্কা দাও
ছোট একটু ধাক্কা দাও
যাতে আমি ট্রাক বা বাসের নীচে পড়তে পারি
এই এতটুকু.... এইটুকু চাই


তাহলেই আমি আমার জায়গাটুকু পেয়ে যাই।


একটু ধাক্কা দাও,
একটু ধাক্কা দাও...তোমরা... আমাকে একটু ধাক্কা দাও


-----------------------------------------
৪ মে ২০২০, মিরপুর, ঢাকা