অস্বস্তিকর অনুভূতি


জাহিদ হোসেন রনজু
-------------------------------------®


কিছুতেই অস্বস্তিকর অনুভূতিটাকে
ঝেড়ে ফেলতে পারছি না


বয়সটাই যত গণ্ডগোল
পঞ্চাশ পেরুতেই অস্বস্তিটা মনের আকাশে ঘুরঘুর করছে


ফুটফুটে জোছনাতেও মনে হচ্ছে
এই বুঝি মেঘ এসে চাঁদটাকে ঢেকে দিলো


কালো পেঁচা ভূতুমের ডাক.......আজকাল
অন্ধকার রাত্রিকে আরও বেশী অন্ধকার করে তুলে
মনের গহীনে


বিছানার বাম পাশের শূন্যস্থানের দিকে
বার বার চোখ চলে যায়....
রোদসী আমার
দু'বছর আগে ঐ জায়গাটা শূন্য করে চলে গেছে
আজকাল কেন জানি মনে হয়
ডান পাশটাও খালি হতে
আর বেশী দিন বাকী নেই


বড্ড ভয় হয়
অস্বস্তিটা জেঁকে বসে মনে
পাশ-বালিশটা আঁকড়ে ধরে রাখি জোরে....সারারাত


ভাবতে ইচ্ছে করে না... এসব-


নাতিটা কত ভালবাসে আমাকে
দাদু, দাদু বলে গলা জড়িয়ে ধরে রাখে
এমন দাদুভাই যার আছে তার কী এসব চিন্তা মানায়
তবু আসে অস্বস্তিটা মনে...ঘুরে ফিরে, বারবার


আমার অনেক কাজই
এখন আর
আমি একা করতে পারি না.....
এর জন্য কতজনের কষ্ট হয়
কত কথা শুনতে হয় প্রতিদিন আমাকে


দাদুভাইয়ের জন্যই বোধহয়
তা নাহলে এতদিন কোন বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই হতো আমার


তেমন হলে অবশ্য মন্দ হতো না
এই দমবন্ধকর অনুভূতিটা আমাকে তাড়া করে বেড়াতো না
বাঁচার ইচ্ছেটাই থাকতো না তখন
বৃদ্ধাশ্রমে থাকা জলিল সাহেবের মতন নির্ভয়ে বলতে পারতাম -
যত তাড়াতাড়ি যাওয়া যায় ....


না, এখনও আমি
জলিল সাহেবের মতন
এমন করে ভাবতে পারি না-


এই বাড়ি...
এই ঘরের আসবাবপত্র...
উঠোনে লাগানো বকুল গাছটা...
আর বারান্দায় পেতে রাখা এই জোড়া বেত-চেয়ার
আমার খুব আপন
যদিও আজকাল পাশের বেত-চেয়ারটা খালি পড়ে থাকে
তবু আমি ওখানে রোদসীকে অনুভব করি
ওর গায়ের গন্ধটা পাই
মনে হয় ও বসে আছে আগের মতন....


ওদিকে
মেয়েটা আমার বিদেশ-বিভূঁইয়ে থাকে
আসবে আসবে করছে
নাগরিকত্ব পাওয়া না পাওয়ার ধম্রজালে আটকে আছে
কতদিন দেখি না......কবে যে আসবে
দেখতে বড় আনচান করে মন
অথচ
দিন যত বাড়ছে
অস্বস্তিকর অনুভূতিটা দিন দিন তত বেড়েই চলছে.......


মনে হয় বিছানার ডান পাশটা
বারান্দার বেত-চেয়ারটা শূন্য হওয়ার সময় আর বেশী নেই


অস্বস্তিটা...... প্রতিনিয়ত খচখচ করে মনে


--------------------------------------
২২ আগস্ট ২০১৯, মিরপুর, ঢাকা