আটাশ বছরের মেয়ে


জাহিদ হোসেন রনজু
---------------------------------®


আটাশ বছরের মেয়ে আমি
নাম সুরঞ্জনা-
স্বামী নেই, সন্তানহীনা।


তবে তোমরা যেমন হলে বিধবা বলো
আমি কিন্তু তেমনটা নই,
আবার আমার
স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে
তেমনও নয়।


স্বামী আমার হারিয়ে গেছে
হঠাৎ করেই হারিয়ে গেছে
কোথায় গেছে কেউ জানে না।


সেই যে যখন যুদ্ধ হলো
গণ্ডগোলের বছর বলো
তোমরা সবাই
স্বামী আমার সে বছরই
হারিয়ে গেল
কোথায় গেলো কেউ না জানে


কেউ বললো- 'যুদ্ধে গেছে
মরে গেছে'
কেউ বললো-'না মরেনি
মরে গেলে খবর আসতো
বেঁচেই আছে,
আসবে ফিরে।'


তাই তো আমি বিধবা হইনি
বিয়েও হয়নি সধবা বলে
তাই তো আমি তেমনই আছি
যেমন ছিলাম তেমনই আছি


এমন করেই কেটে গেল দশটি বছর।


স্বামী আমার কোথাকার কোন যুদ্ধে গেছে
তা জানি না
তবে জানি
স্বামী আমার হারিয়ে যেয়ে
আমার জন্য রেখে গেছে যুদ্ধ ভীষণ।


যুদ্ধ করছি সুদীর্ঘ কাল - দশটি বছর।


যুদ্ধ করছি -বেঁচে থাকার
যুদ্ধ করছি -নিজের সাথে নিজে
যুদ্ধ করছি- দেহের সাথে মনের বাধার
যুদ্ধ করছি - চাহিদার সাথে সামাজিক সব রীতি-নীতির


যুদ্ধ করছি-
হারু কাকু, রাজন, পবন
রতন শেখের লালসা  থেকে
বাঁচতে রোজই।


অন্ধকার আর নির্জনতা
আমার জন্য মস্ত ভয়ের-


অন্ধকারে
নির্জনে কেউ একলা পেলেই
চায় যে আমায় কাছে নিতে
অনেক কিছুর লোভ দেখিয়ে
এটা-ওটা কিনে এনে
লুকিয়ে লুকিয়ে চায় যে দিতে সংগোপনে
প্রশংসার সব বাক্য দিয়ে সাজায় আমায়
যেন আমি রাজকন্যা এক
অচিনপুরের
রূপে-গুনে তিলোত্তমা, স্বর্গপরী
আঁধার কিংবা নির্জনতায় একলা পেলে এসব বলে


দিনের আলোয় সবার মাঝে
ওরাই আবার আমার থেকে দূরে থাকে
নিন্দা করে
নানানভাবে আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটায়
যেন আমি কোনঠাসা হই
অন্ধকারে নির্জনতায় ওদের ডাকে দেই সাড়া দেই


যদি বলি রেগে যেয়ে
এতই যখন ভাল আমি
সুন্দরী খুব...... বিয়ে করো-


তখন সবাই ধর্ম মানে পীরের মতন-
"তোর তো পরী স্বামী আছে
কেমনে করি
পাপ হবে যে''


তখন সবাই সমাজ মানে-
গাঁয়ের লোকে বলবেটা কী?
বলবে  খারাপ তোকে আমায়।


তখন সবাই ঘরকে ভাবে-
'বৌটা আমার কষ্ট পাবে,
বিশ্বাসটা তার কেমনে ভাঙ্গি
ছেলে-মেয়ের কী হাল হবে
বিয়ে দিতে কষ্ট হবে"


আঁধার হলে, একলা পেলে
কোথায় যেন ধর্ম হারায়
সমাজ-সংসার সব ভুলে যায়
আমিই তখন সকল কিছু-
ধর্ম-সমাজ-ঘর-সংসার সকল কিছু


কিন্তু ওরা কেউ ভাবে না আমার কথা
ওদের কথায় রাজি হলে
আমি হবো নষ্ট মেয়ে
ওরাই তখন মাঠে-ঘাটে উচ্চস্বরে বলবে হেঁকে-
'ধর্ম-সমাজ সবই গেলো'
ওরাই তখন সুযোগ পেলে
বিচার ডেকে
তাড়িয়ে দিবে গ্রামের থেকে


এমন করেই কাটছে সময়
লড়াই করে
আর কতকাল পারবো আমি
তা জানা নেই
মাঝে মাঝেই ক্লান্তি আসে ভীষণ ভীষণ


আটাশ বছর খুব বেশী নয়
তাও মনে হয়
আর পারি না, আর পারি না.....


সকল সময় ঘুমের ঘোরেও
হারু কাকু, রাজন, পবন
রতন শেখের লালসা ভরা চোখগুলো সব
আমায় যেন তাড়িয়ে বেড়ায়......


--------------------------------------
১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, মিরপুর, ঢাকা