ডাক্তার কবিতার ধারাবাহিকতায়-


চিকিৎসা


জাহিদ হোসেন রনজু।
-----------------------------------®


অসুখটা হয় যদি আজকাল কারো,
সময়টা যাই হোক তার বাজে বারো।


ডায়গোস্টিক সেন্টার, ডাক্তার, ক্লিনিক,
জোট বেধে লুটে আজ ছড়ায়ে প্যানিক।


আজকের ডাক্তার যে চিনে শুধু টাকা,
চিকিৎসার নামে করে পকেটটা ফাঁকা।


'ডায়গোস্টিক সেন্টার' ভয়াবহ আরো,
স্বীকৃত 'প্যাথলোজিস্ট' নাই তো কারো।
থাকলেও বিশটির এক সেনাপতি,
নাই কোন সরঞ্জাম নাই কোন গতি।
কম্পিউটারে সাজানো 'গৎ বাধা ডাটা',
প্রিন্ট করে দিয়ে দেয় -' মরগে যা বেটা'।
এক রোগের দু'খানে সে টেস্ট করালে,
দু' রকম ফলাফল জুটে তার ভালে।


ক্লিনিকের কথা আর বলবো কি ভাই,
থানা, জেলা বা শহরে কোথা বলো নাই।
বড় বড় ডাক্তারের নাম লিখে গেটে,
ব্যাঙের ছাতার মত গঁজিয়ে তা উঠে।
থাকেনা সে ডাক্তার প্রায়গুলাতেই,
নাম থাকে টানানো যে রোগী ভুলাতেই।
কমিশন দিয়ে লোক ভাড়া করা আছে,
ভুল ভাল বলে তারা রোগী নিয়ে আসে।
ক্লিনিক তো নয় যেন টাকারই মেশিন,
উপরেতে ফিটফাট ভিতরে সঙ্গীন।
রোগ সারানোর নামে বাড়িয়ে যে দিন,
শত শত টাকা তারা নেয় প্রতিদিন।
সারাদিন পাবে না যে ডাক্তারের খোঁজ',
কখনো ডাক্তার নামী আসে 'এক রোজ'।
বাকিটা চালিয়ে দেয় 'হাতুরে' দিয়ে
বড় বড় ডাক্তারের নাম ভাঙ্গিয়ে।


এখন তো নরমাল নয় ডেলিভারি,
'জটিলতা খুব'- বলে নেয় তাড়াতাড়ি
অপারেশন টেবিলে অন্তঃসত্বা মাকে,
মনে হয় ধরেছেন বড় মাছটাকে।
অপারেশন টেবিলে রেখে বধুটিকে,
ডেলিভারি চার্জ বড় অগ্রীমটা হাঁকে।
উপায় আর না দেখে অভাগা স্বজন,
রোগীকে বাঁচাতে ভয়ে সম্মত তখন।


যদি হয় নাম করা সে হাসপাতাল,
তাহলে তো আরো বেশী পুড়ে যে কপাল।
অপারেশন শেষে মা বিশেষ কেবিনে,
শিশুটিকে রাখে তারা কৃত্রিম মেশিনে।
টাকা আর টাকা চায়, চায় আর চায়,
সে টাকা জোগাতে রোগী হিমসিম খায়।


হাসপাতালটা কোন সরকারী হলে,
গজমতি বিহারে তা ঢিলে তালে চলে।
নামেই যত ডাক্তার, খোঁয়াড়েতে কম,
আছেও যে কয়জন বিরক্ত চরম।
ইচ্ছে তার হলে আসে না হলে যে নাই,
আসলেও পরে তারা করে যাই যাই।
দায়সারাভাবে রোগী দেখে যেনতেন,
রোগী দেখা কাজ নয়, ঝামেলা যেন।
গিজগিজ করে রোগী বেহাল যে দশা,
চিকিৎসা পাওয়া যেন মরিচিকা আশা।
ঔষধও দেয় নাকো বাজেটে যা আছে,
খায় সেসব রাঘব বোয়ালও মাছে।
হাসপাতাল না যেন দালালের বাড়ী,
রোগী এলেই এখানে চলে কাড়াকাড়ি।
চারিদিকে নোংরা আর ভাঙাচোরা সব,
তেলাপোকা মশারই চলে যে উৎসব।


সারাদেশে সুচিকিৎসার নাই তো সুযোগ,
চিকিৎসা করাতে যেয়ে জুটছে দুর্ভোগ।
তাই তো ছুটছে আজ রোগীরা সবাই,
দেশ ছেড়ে সিংগাপুর নয়তো সাংহাই।
রোগী যায় বিদেশেতে অসুখ সারাতে,
সেই সাথে টাকা যায় নিজ দেশ হতে।
আজ যদি ভাল হতো চিকিৎসাটা দেশে,
টাকাগুলো থেকে যেতো দেশে অবশেষে।
দেশেরই হতো লাভ হতো যে কল্যাণ,
মানুষও বেঁচে যেতো পেতো পরিত্রাণ।


-----------------------------------®
১৩, জুন ২০১৬, মিরপুর, ঢাকা