কবি ও কবিতার কষ্ট


জাহিদ হোসেন রনজু।
-------------------------------------®


সেদিন কবিকে একা পেয়ে জিজ্ঞেস করলুম-
পড়েছেন কি আমার কবিতাখানি?
- পড়েছি তো।
নির্লিপ্তভাবে বললেন কবি।
আমি বুঝলুম, পড়া হয়নি তার।
কেমন জানি ব্যথা করে উঠলো বুকে।
দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো মনের অজান্তে।
দুঃখ যেন সমুদ্রের ঢেউয়ের মত
ফণা তুলে
আছড়ে পড়তে লাগল বুকের গহীনে।
ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়তে লাগলো
অভিমানের পাহাড়গুলো হৃদয়ের উঠোনে-
যেখানে কবির জন্য
ঘর বেধেছিল এক টুকরো সুপ্ত ভালবাসা।


সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করলুম নিজেকে-
হয়ত সময় হয়নি তাঁর।
কত রকম কাজ থাকে মানুষের-
সাংসারিক,
পারিবারিক,
দাপ্তরিক।
আরো কত রকম কাজ-
চাল-ডাল-তেলের সংস্থান,
উত্তরসূরীদের আবদার মিটানো,
প্রিয়ার মান ভাঙ্গানো,
আরও কত কি।
সব সময় কি আর সময় হয়
অন্যের মনের খবর রাখার।
আর তিনি তো কত ব্যস্ত মানুষ, কত তাঁর কাজ।
কেন জানি তবু
কষ্টটাকে নামাতে পারি না বুক থেকে।
সান্ত্বনাটা কোন কাজে আসে না তেমন।


এমন সময় কবি চোখ তুলে বললেন- "অসাধারণ।
এই মাত্র পড়লুম। ভালভাবে পড়া হয়নি আগে।"
তারপর খুলে ধরলেন কৈয়ফতের ঝাঁপি-
এটা-সেটা, আর কত কি।
বুঝতে পারলুম, আমাকে খুশি করার চেষ্টা করছেন তিনি।
কষ্ট যেন বেড়ে গেল আরো।
পাঁজর ভেঙ্গে,
দুচোখের অশ্রু হয়ে,
শ্রাবণের ধারায়
ঝরে পড়তে লাগলো কষ্টগুলো
অঝরে নিভৃতে নিরবে।


আজকাল অল্পতেই কষ্ট হয়।
কত রকম কষ্ট-
নীল কষ্ট, লাল কষ্ট,আরো কত কি।
শুধু শুধুই কষ্ট কিনে মন।
এই যেমন-
রোজ সকালে যে পাখিটার ডাক শুনে আমার ঘুম ভাঙ্গে,
একদিন সে না ডাকলেই
আমার কষ্ট হয়।
অভিমানে অভিমানে ভরে উঠে মন।
বুঝাতে পারি না মনটাকে যে,
পাখি তার আপন মনে ডাকে।
পাখি কারো মনের কষ্টের খবর রাখে না।


কষ্টটা শুধু নিজের, একান্তই নিজের।।


--------------------------------------
১৯ ফেব্রুয়ারি,২০১৬, মিরপুর, ঢাকা।