নদী ভাঙা মানুষ


জাহিদ হোসেন রনজু
--------------------------------------®


নদী ভাঙা মানুষ আমি
সব হারানো পথিক,
কখন কোথায় রাত্রি কাটে
নাই ঠিকানা সঠিক।


নদীর পারের মানুষ আমি
তীরেই ছিল বাড়ি,
নদীর সাথে সখ্য যেমন
ছিল তেমন আড়ি।


নদীর জলে সাঁতার কেটে
কেটে যেতো বেলা,
নদীর জলে মৎস্য ধরা
আমার ছিল খেলা।


নদীর তীরে ফসলী মাঠ
শস্য বুনে তাতে,
সারা বছর কাটতো সুখে
মৎস্য এবং ভাতে।


নদীর জলে গোসল দিতে
আসতো আমার সখি,
তীরে বসে তাহার সাথে
হতো চোখাচোখি।


মিষ্টি ঠোঁটে ভেংচি কেটে
জল ছিটিয়ে দিতো,
যাওয়ার কালে খুব লুকিয়ে
চিঠি দিতো নিতো।


নদীর থেকে শীতল হাওয়া
আসতো আমার ঘরে,
ফুটফুটে চাঁদ জোছনা দিতো
সারা রাত্রি ভরে।


নদীর জলে পূর্ণিমা চাঁদ
আঁকতো অরূপ ছবি,
ভোর বিহানে টকটকে লাল
রং বিছাতো রবি।


এসব দেখে দিনগুলো মোর
কাটতো সুখে যত,
বানের জলে নদী আবার
দুঃখ দিতো শত।


এমন করে সখ্য-আড়ি
নদীর সাথে ছিল,
সেই সে সাথী হঠাৎ করে
ভয়ানক রূপ নিল।


প্রলয় ঢেউয়ে উঠল মেতে
নদী সর্বনাশী,
মাঠের পরে মাঠকে ভাঙে
রুদ্র রোষে আসি।


চারচালা ঘর, পালের গরু
গোলা ভরা ফসল,
একটি রাতের মধ্যে নদী
কেড়ে নিলো সকল।


কোথায় গেলো ফসলী মাঠ
কোথায় বসত বাটি,
সব হারিয়ে আজকে আমি
পথে পথে হাঁটি।


খাবার ছিল, বসত ছিল
ছিল সুখের বাড়ী,
আজকে কিছু নাই যে আমার
নদী নিছে কাড়ি।


পরের বাড়ি কামলা খাটি
দিন-খোরাকী নিয়ে,
রাত্রি কাটে এথায় ওথায়
কাঁথা গায়ে দিয়ে।


চলে গেছে সখি আমার
না জানি কোন দেশে,
বাঁচার জন্য কোথায় কখন
হারিয়ে সে গেছে।


নদী ভাঙা মানুষ আমি
নেই তো ভালবাসা,
সুখ-স্বপ্ন-আশা নিছে
কেড়ে কীর্তিনাশা।।


যে নদীটা ছিল সাথী
আমার শীতলপাটি,
সে নদীটাই কেড়ে নিলো
আমার আশ্রয় মাটি।


তাই তো আমার নাই ঠিকানা
আমি বাস্তুহারা,
এ জীবনে সুখ নাহি আর
দুঃখ কষ্ট ছাড়া।


---------------------------------------------
৬ নভেম্বর ২০১৮, মিরপুর, ঢাকা।