তবু জেগে থাকে বেতফল ম্লান নক্ষত্রের মত


জাহিদ হোসেন রনজু
------------------------------------------®


অনিরুদ্ধ কোথায় তুমি?
কি করছো?
সারাদিন খুব বেড়ালে?
খুব আনন্দ করলে বুঝি একা একা?
একা একা খুব ঘুরছো।
আমাকে একবারও বললে না-
'এসো রোদসী, তুমি আর আমি ঘুরে আসি।'
জানি, আমার চেহারা সুন্দর নয় বলে
তুমি আমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চাও না।
আর আমাকে নিবেই বা কেন।
তোমার কত সুন্দরী ভক্ত আছে।
দেখি তো ফেসবুকে তোমার কবিতায়
কত আবেগ মাখা মন্তব্য করে।
তবে আমি  যাবো একদিন।
তুমি বুঝবে রূপ আর অর্থই মূল্য পাওয়ার মানদন্ড নয়
মনের সৌন্দর্য্য এবং ভালবাসার মানদন্ড অনেক বড়।
দেখো সেদিন তুমিও আমাকে নিবে।।


অনিরুদ্ধ,
এখন কেমন আছো তুমি?
শরীরটা কেমন? জ্বর সেরেছে?
ইদানিং তুমি শরীরের প্রতি নজর দিচ্ছো না।
অবশ্য তুমি তো- 'চির সবুজ'।
তবুও খেয়াল রেখো
আজকাল তোমার শরীর মাঝে মাঝেই খারাপ হচ্ছে।
বয়স তো আর কম হলো না।


এই দেখো কখন যে দুপুর হয়ে গেলো
একেবারেই খেয়াল করিনি।
কি করবো বলো-
তোমার সাথে কথা বলতে থাকলে
আমার সময়ের কথা মনেই থাকে না।
খাবার সময় তো হয়ে এলো। খেয়েছো?
কখনই বা খাবে। আমার বকবকানি  শুনতে শুনতেই তো
তোমারও সময় চলে গেলো।
খেয়ে নাও।
আর শোন
প্রতিদিন রাত্রি বেলা তুমি খুব দেরী করে খাচ্ছো।
এটা ঠিক নয়।
এখন থেকে তাড়াতাড়ি খাবে। ঠিক আছে?
মনে থাকবে?
জানি মনে থাকবে না তোমার।
আচ্ছা আমিই মনে করিয়ে দিবো।


আচ্ছা অনিরুদ্ধ  দুদিন হয়ে গেলো
তুমি তো নতুন কোন কবিতা আমাকে দিলে না।
লেখনি?
ঠিকই লিখেছো।
অথচ আমি কবিতা ভাল বুঝি না ভেবে
আমায় দাওনি।
ঠিক আছে আমাকে দিতে হবে না।
যারা বুঝে তাদেরকেই দিও।
কিন্তু তুমি জেনে রাখো
আমি অন্য কারো কবিতা কতটুকু বুঝি বা না বুঝি
তোমার প্রতিটি কবিতা আমি বুঝি
তোমার প্রতিটি কবিতা আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
তুমি যখন আমার কাছে থাকো না
তখন আমি তোমার কবিতাগুলো বার বার পড়ি।
তোমার কোন কোন কবিতা আমি চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বার পড়েছি।
বিশ্বাস করো তোমার কবিতা আর তুমি
আমার কাছে একই রকম প্রিয়।


অনিরুদ্ধ,
কাল রাতে তুমি আবার রাত জেগেছো?
মিথ্যে বললে সুবিধা হবে না।
কাল রাতে আমার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল।
আর ঘুম আসছিল না।
তোমার কথা মনে পড়ছিল।
তাই তোমাকে খুঁজতে ফেসবুক, ওয়াটস এ্যাপ, ম্যাসেঞ্জারে এসেছিলাম।
দেখলাম
তুমি রাত আড়াইটা পর্যন্ত ফেসবুকে ছিলে।
এভাবে রাত জাগা ঠিক নয়।
শরীর খারাপ করবে।
আর দোষ হবে আমার।
বলবে আমার জন্যই তোমার ঘুম হয় না।
তাই শরীর খারাপ করে।
কথায় বলে না যত দোষ নন্দ ঘোষ।
আমার হয়েছে সেই দশা।
কিন্তু মশাই,
কাল রাতে তো আমি তোমাকে ঘুম পারতে দিয়ে
সকাল সকাল চলে এসেছিলাম।
তাহলে রাত জাগলে কেন?
এভাবে আর রাত জাগবে না লক্ষ্মীটি।


দেখো আমারও বয়স হয়েছে, তোমারও।
কিন্তু তুমি যখন 'এই মেয়ে' - বলে আমায় ডাকো
জানো অনিরুদ্ধ,
তখন আমি যেন সত্যি সত্যি পনের-ষোল বছরের কিশোরী হয়ে যাই।
ভালবাসার মনে হয় আলাদা একটা অদৃশ্য শক্তি আছে।
মনের বয়স কমিয়ে দেয়।


পাগল না হলে কেউ এমন করে।
আমার ছবি নিয়ে তুমি কেটে কেটে কত কি যে করো
কখনো পূর্ণিমার চাঁদে বসাও
কখনো ঝরনার জলে
কত রকম ফ্রেমে কতভাবে বন্দী করো আমাকে
আস্ত পাগল তুমি।
ভালবাসলে মনে হয় পাগলামিটা আপনাতেই ঘাড়ে এসে ভর করে।
জানো অনিরুদ্ধ তুমি পাগলামি করো ঠিক
কিন্তু আমার অন্তরে এক অনাবিল আনন্দের সুর বেজে ওঠে।
আমি মনে মনে বলি- 'আই লাভ ইউ অনিরুদ্ধ, আই লাভ ইউ।'
অনিরুদ্ধ সত্যি আমি তোমাকে ভালবাসি ---অনেক অনেক


কারো বলা এসব কথা-
কথার কথা, আরোপিত কথা ছিল,
ভাবতে বড় কষ্ট লাগে।


রোদসী,
যদিও তুমি আছো আজ আমার থেকে বহু দূরে
তবুও তোমার কথাগুলো আরোপিত কথা
ভাবতে কষ্ট হয়
খুব কষ্ট হয়।


রোদসী,
তোমার খেলাঘরের পুতুল-অনিরুদ্ধ
হাত-পা ভাঙা আজ, তবু
প্রতীক্ষায় থাকে,
তার চোখ খুঁজে ফিরে ওয়াটস এ্যাপ, ম্যাসেঞ্জারের পাতায়
কখন আবার সেই হৃদয় ছোঁয়া
শব্দগুলো ভেসে উঠবে-
কি করছো?
কেমন আছো অনিরুদ্ধ?


অমানিশার রাত, কোথাও আলো নেই, আঁধার।
তবু দূর বেতফল ম্লান নক্ষত্রের মত
হাত-পা ভাঙা পুতুলের দুটি চোখ জেগে থাকে, অসীম অন্ধকারে।
-----------------------------------------
২৫ নভেম্বর ২০১৮, বাস, খুলনা টু ঢাকা।