শহরের এলোমেলো পথ কিংবা পথ-চত্ত্বরে গড়ে ওঠা অদ্ভূত জনজীবন কেবল প্রশ্নাকুল চোখে চেয়ে থাকি
এবং বিস্মিত হই কারো মুখে অনুশোচনার কোনো চিহ্ন না দেখে।
এভাবে জীবন ফুরোয়-
এভাবেই বদলে যায় মানুষ; নাম; প্রজন্ম
কিন্তু জীবন! জীবনটা কি শুদ্ধ হয়?
নাকি ইদানিং মানুষগুলো অন্ধ হয়ে জন্মায়!


শহুরে মানুষ স্বভাবজে গগনচুম্বি অট্টালিকা, আকাশ ছোঁয়া নীড়
এবং রাতারাতি গড়ে তোলে পার্থক্য দেয়াল।
কিন্তু একটি গ্রীষ্মের প্রখরতা স্বাভাবিক না হতেই ঐ ইট পাথরের প্রাসাদ থেকে খসে পড়ে কর্দমাক্ত আবরণ
এবং স্বপ্নের সোনালী ফসলে হানা দেয় কতিপয় নষ্ট কীট।


অথচ কামারশালার নিষ্প্রাণ হাতুড়িতে জন্ম নেয়া এক একটি সুখাবহ শব্দে উন্মুক্ত হয় অসংখ্য প্রাণের তোরণ-
এই কালোতীর্ণ সভ্যতা তারই স্বপ্নোত্থিত ফসল।
রিস্কার প্যাডেল, মাটির ঝুড়ি মাথায় শ্রমিক, রেলওয়ে কুলি কিংবা মাঠে রৌদ্রদগ্ধ তামাটে ঘর্মাক্ত শরীর কৃষকের;
তবুও লোকদের অপরিচ্ছন্ন মুখে কেমন আবহমানকালের হাসি,
ক্লান্তি শ্রান্তি জড়তা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে রাত্রির প্রথম প্রহরে
এবং প্রথম সূর্যের আহবানে জেগে ওঠে নতুন দিনের সূচনায়।


আর শহুরে মানুষের জীবনের জন্য ব্যস্ততা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত-নিশিদিন,
মুখস্ত করে যাবতীয় অসাধ্য সাধনের মন্ত্রপাঠ
এবং দুখের মত স্মরণীয় করে রাখতে চাই জীবনের সকল আয়োজন।
কিন্তু মানুষ তবুও ভুলে যায় ফেলে আসা হেমাতীত
যেখানে একদিন প্রবাহমান ছিল একটি শৈশব নদী
যেখানে একদিন স্থির ছিল অনাগত ভাবনার ট্রেন
অথচ গহীনের নদীতে আজ অনাদরে ভাসমান ঐ সকল বাক্সবন্দী স্মৃতি.. ..


শহুরে মানুষ কোনোদিন অরণিভ আকাশ দেখেনি
শিশিরের চোখ দেখেনি
সবুজাভ উদ্যান দেখেনি
বসন্তের আড়ষ্টতা দেখেনি
এবং দেখেনি একটি নওল কুঁড়ির ভবিষ্য প্রার্থনা।
বাস্তবিক অর্থে জীবনকে উপলব্ধির অবকাশ নেই কারো
যেহেতু অর্থই রচনা করে তাদের সমুজ্জ্বল জীবনের ভিত।