একদিন সকালে
সবার মুখে মুখে রটে গিয়েছিল যে, জগবন্ধু
না কি ফিরে এসেছে !
গিয়ে দেখা গেল,
উজার ভিটায় দু'হাঁটুতে মুখ রেখে বসে
আছে জগবন্ধু।
আমার পিতামহ একদিন বলেছিল,
তোর পরাণে কি
কোনো ভয়ডর নাই, জগা ?  তুই ক্যা মরতে
আইলি ?  
চৈত্রের দুপুর যেমন সময়ে সময়ে
খাঁ খাঁ করে ওঠে তেমনি
শূন্যতায় ব্যাকুল হয়ে জগবন্ধু উত্তর দিয়েছিল,
কী করমু কও কাকু,
মোনডা কেমন আঁতিপাঁতি করে,
বুকটা ঢেঁহির পাড়ের
লাহান ধক ধক কইর্রা ওডে। মাতাডা
ক্যামোন আউলাইয়া যায়। লেমু গাছটার কতা মোনে
পড়ে। পুকুর দুইডা
মোরে খালি ডাহে। এই ভিডা আমারে
স্বপ্নে কয়, " জগা, তুই আমারে একলা থুইয়া গেলি ক্যামনে ? "


আমি আর সইতে
পারলাম না কাকু। ঘুম নাই। নাওয়া নাই।
হাঙ্গা দিন-রাইত পাগল পাগল
লাকতো। মায়-বাপে
কইল- হুনি নাই। ফিইরা আইলাম।
এইডা মোর চৌদ্দ পুরুষের
ভিডা। মুই কোতায় যামু ?  যামু না । মরি যদি
এই ভিডায় মরমু।
দেহি মোরে কেডা খ্যাদায়। গোঁয়ার গরুর
মতো জেদ দেখে সেদিন আমার
পিতামহের চোখ আদ্র হয়েছিল কি না আমি তা জানতে পারি নি।


একদিন সকালে
গ্রামের সকলের সন্ত্রস্ত গন্তব্য হয়ে উঠল
জগবন্ধুদের
বাড়ি। সমবেত গ্রামবাসী
দেখল, প্রায় ছিন্ন-মস্তক জগবন্ধুর
শবদেহ পড়ে আছে উঠোনে।
লেবু গাছটি ফলভারে
নুয়ে পড়ে দেখলো। পুকুর দু'টো বুঝলো
কি ঘটেছে। ভিটা "জগা" বলে ডেকেছিল কি না, জানা গেল না।


তবে সমবেত
সকলের মতো সেদিন আমিও জানলাম, জগবন্ধু ফিরে এসেছিল। ।


১৭/০৩/১৫ খ্রিঃ।
ঝালকাঠী, বরিশাল।।