প্রথমেই বলে নিই যে,
বিষয়টি নিয়ে বলার মতো পাণ্ডিত্য আমার নেই।
তবে সাহিত্যের একজন আগ্রহী ছাত্র হিসেবে কিছুটা জানাশোনাতো
হয়েইছে। সেখান থেকেই কিছু বলার সাহস করলাম।
কবিতায় ছন্দ থাকবে কি থাকবেনা ; এই নিয়ে আজও তুমুল বিতর্ক
দেখি। হয়ো এ বিতর্ক চলতেই থাকবে। তা থাকুক।
মূলতঃ ছন্দ হচ্ছে কবিতার অতিনিরুপিত একটি ফর্মেট। এই সময়েও, কবিতামাত্রেই ছন্দদোলা: এমন বিশ্বাসের পাঠকরাই সংখ্যাগুর। তার কারণও আছে। আমাদের পাঠ্যপুস্তকগুলোর দিকে তাকালেই কারণটা বোঝা যাবে। পাঠ্যপুস্তকে ছন্দোবদ্ধ পদ্যের জয়জয়কার। আমাদের শিক্ষার্থীরাও এই কারণে কবিতামাত্রেই পদ্যকে বুঝে থাকে। অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে।


শিল্পসাহিত্যের সবগুলো শাখা প্রশাখার মধ্যে কবিতাই বোধকরি
সবচেয়ে দ্রুত পরিবর্তশীল। সারাদুনিয়ার কাব্যসাহিত্য যুগের সাথে বদলে যাচ্ছে। আর তার অনিবার্য অভিঘাত বাংলা কাব্যেও পড়েছে।
ফলে গদ্যকবিতা আজকের বাংলা কাব্যে একটি বৃহৎ স্থান দখল করে নিয়েছে।


ছন্দে লেখার কতগুরো সুবিধা এবং অসুবিধা উভয়ই আছে।
ছন্দের একটি নিরুপিত রূপ বা কাঠামো আছে বলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে
ভাবনাকে ছন্দময় শব্দকাঠামোতে ফেললেেই তা কবিতাপদবাচ্য হয়ে
ওঠে। তবে সবসময় নয়। মনে রাখতে হবে পদ্য আর কবিতা সমার্থক নয়। যেমন নয় ছড়া ও কবিতা। তবে ছন্দের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল- ছন্দ শব্দব্যবহারের ক্ষেত্রে কবির স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করে দেয়। ছন্দে লিখতে গেলে অনেক সময় ভাবনা প্রকাশের জন্য প্রয়োজনীয় শব্দকে যথাস্থানে ব্যবহার করা যায় না। কারণ মাত্রাসাম্য ও অন্তমিল এই দুয়ের টানাপোড়েনে কবিকে শব্দের সীমাবদ্ধতার সাথে আপোষ করতে হয়।


আর গদ্যছন্দে কবিতা লেখা কবিকে শব্দব্যবহারের স্বাধীনতা দেয় ঠিকই ; তবে গদ্যকে কবিতায় পর্যবসিত করারা মতো দুরুহতম দ্বায়িত্বটা কবির ঘাড়েই দিয়ে দেয়। গদ্যছন্দের কোন নিরূপিত ছাঁচ নেই বলেই গদ্যকে কবিতা করা সবচে' কঠিন। মনে রাখতে হবে গদ্য আর কবিতার গদ্য এক নয়। পদ্যের বিচার হয় শ্রুতিতে- তাল-লয়-মাত্রাসাম্যে। আর গদ্যর বিচারে শ্রুত ভুমিকা রাখে ; তবে তা শ্রুবনের একদম উচ্চস্তরে।