আমি ইতিহাসের কাছে
জানতে চাইলাম ১৫ই আগস্টের কথা।
ইতিহাস খুলে দিল তার পৃষ্ঠাগুলো।
আর গর্ভাশয় থেকে বের করে আনল একটি বুড়ো রাত্রির
মুখবন্ধ অন্ধকার।
বললো- "নে, দ্যাখ, এই হলো ইতিহাস "।
আমি দেখলাম- ইতিহাসের গা বেয়ে গলগলে রক্ত নেমে গেছে
মানচিত্রের মাদুরে।
নব বঁধুর হাতের মেহেদি আর স্বর্ণকমল রক্ত মিলে
সেই শেষ রাত্রিটি,
একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে নিস্পন্দ পড়ে আছে ইতিহাসের পৃষ্ঠায়।
যে ভ্রূণটি আগামী ইতিহাসের
আলো দেখার সাটামাটা অথচ অনিবার্য দাবিটুকু করেছিল ইতিহাসের কাছে,
ক্ষমতান্ধ বর্বরের ছুঁড়ে দেয়া বুলেটে বিদ্ধ হয়ে-
একটি অসহায় মৃত মাতৃগর্ভ গায়ে জড়িয়ে খামচে ধরে আছে ইতিহাসের
নাভিমূল !
আমি দেখলাম- দু'টো অসম্পূর্ণ কচি হাতের সামনে বিষণ্ণ বসে আছেন
স্বয়ং ঈশ্বর !
ইতিহাসের যতিচিহ্নগুলোর মধ্যে মুখ থুবড়ে
পড়ে থাকতে দেখলাম একটি নাবালককে, তাঁর শক্ত হয়ে আসা মৃত মুষ্টিতে
দৃঢ় করে ধরেছিল মানবতাকে।
আমার বিপন্ন বোধ আর টর্নেডো আক্রান্ত সমুদ্র-ঢেউয়ের মতো
ক্ষুব্ধ চেতনার সামনে
ইতিহাস ক্রমান্বয়ে মেলে ধরছিল সেই বুড়ো রাত্রিটির হাড়-পাঁজর ।
ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া সন্তানদের মাঝে
মৃত এক মাকে শুয়ে থাকতে দেখলাম জমাট অন্ধকারে মুখ রেখে।  
আমি অবাক হয়ে দেখলাম,
তাঁর পরনের কাপড়ের ঠিক মধ্যিখানে জমাট রক্ত ; এঁকে দিয়েছে একটি
টকটকে সূর্য।
আর কী বিপন্ন বিস্ময়ে মৃত জননীকে জড়িয়ে থাকা
রক্তসিক্ত কাপড়টি
সেই বুড়ো রাত্রিটির বুকে পতপত করে উড়িয়ে দিল একটি লাল সবুজের পতাকা!


ইতিহাসের গর্ভাশয়ের
সিঁড়িতে পড়ে থাকতে দেখলাম একটি সফেদ চেতনাকে।
তাঁর ঠোঁট দু'টি তখন মাটির দিকে ধাবমান,
তার বুজে আসা চক্ষুদ্বয়ে তখন একটানা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম সাড়ে সাত কোটি
জনগণকে।
তাঁর বুকে গুটিসুটি মেরে শুয়ে ছিল বেয়াড়া বঙ্গোপসাগর,
প্রিয় পাইপ ধরা হাতের তর্জনীটি
ইতিহাসের পৃষ্ঠার দিকে নির্দেশের ভঙ্গিতে তাক করা।
তাঁর গোটা দেহটি যেন ছাপিয়ে যাচ্ছিল ইতিহাসের পৃষ্ঠাগুলোকে ; যেন ইতহাস ধরে
রাখতে পারছিল না তার দৈর্ঘ্য-প্রস্থের ক্ষেত্রফল !
আমি ধরে আসা গলায় ডুকরে উঠলাম - "এই মৃতের সৎকার হোক! "
আর তক্ষুণি খেঁকিয়ে উঠলো গোটা ইতিহাস-
"চুপ রও, বেত্তমিজ! এটা ইতিহাস!  ইতিহাস মরে না, উজবুক! "
আমি রাত্রির অন্ধকারে কলাপাতার মতো
কেঁপে উঠলাম!  
এবং বুঝতে পারলাম আমার নির্বুদ্ধিতায় আহত হয়েছেন
ইতিহাস।
আমি সমীহ-জাগানিয়া চোখে ইতিহাসকে অনুরোধ করলাম- "হে ইতিহাস , এই ইতিহাসটির কথা বলুন! "


এবং
ইতিহাস তার পৃষ্টাগুলো থেকে একটি গোটা মানচিত্র বের করে মেলে ধরলেন আমার চোখের সামনে।


আমি দেখলাম-
ঝাঁঝরা মানচিত্রের বুক থেকে গড়িয়ে যাওয়া ফোঁটা ফোঁটা রক্ত
পরস্পরের সাথে শব্দবন্ধের মতো সংযুক্ত হয়ে
ইতিহাসের পৃষ্ঠায় লিখে ফেললেন একটি দুঃখ-জাগানিয়া অবিনাশী কবিতা ; কবিতাটির নাম "বাংলাদেশ"।


>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>১৪/০৮/১৫ খ্রিঃ।
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>ঝালকাঠী।।