তোমার তরতাজা, জামরসে সিক্ত, মিষ্টি ঠোঁটদ্বয়
আজও আমার ওষ্ঠাগত হয়ে আছে
মনে পড়ে
ডাচের লনে বসে কতো গল্প, কতো কথা
ডাচের হরেক রকম নাস্তার সমারোহ
কিনে আনতে স্বহস্তে তুমি
খেতে খেতে হিসেব করতে, জীবনের নানা ধারাপাত নিয়ে
সংসার নিয়ে উচ্চতর গণিতের খাতায়
অবিরাম অঙ্ক কষে যেতে তুমি
ছাত্র ছাত্রীদের অনিবার্য চলাচল
কোলাহল ক্যাম্পাস অঙ্গনে
তার মাঝে ও তোমার হিসেবের অঙ্কে
ভুল হতো না কোনো
সংসার ছেলেমেয়ে নিয়ে, তোমার অগ্রীম চিন্তায়
হেসে কুটি কুটি হতো, পার্শ্ববর্তী প্রেমিক-প্রেমিকা


শামসুন্নাহার হলের ৩২৭ নম্বর রুমে
থাকতে তুমি
কতো কষ্ট করতে তুমি আমার জন্য
আমার জামাকাপড় ধুয়ে, আয়রন করে স্বহস্তে
তুলে
দিতে আমাকে তুমি
মাঝে মাঝে মাংস ভুনা করে দিতে আমাকে
নিয়ে যেতাম
আমার হলে
২০৫ নম্বর রুম, কবি জসীমউদ্দিন হলে
বন্ধুদের নিয়ে মজা করে,আয়েশ করে
খেতাম আর অফুরন্ত আড্ডায় মেতে উঠতাম


আমার জন্য তোমার ত্যাগ, না ফুরানো প্রেম
ভালোবাসা
আজও ঋণী করে রেখেছে আমায়


মাঝে মাঝে ডাচের লনে বসি
চা কফি খেতে খেতে
তোমাকে খুঁজে ফিরি বারবার


বসার পাকা জায়গা
প্রাঙ্গণের
সবুজ ঘাসের দিকে তাকালেই
তারা বলে এতোদিন পরে এলেন?
একা কেনো?
কি দেবো উত্তর বলুন?


চরম একাকিত্ব আর শূণ্যতা ঘিরে ধরে আমাকে
হতাশায় বিবর্ণ হই,সময়ের অতলান্ত খেয়ায়
অনেক প্রেমিক-প্রেমিকার আগমন ঘটে সেখানে
সকলের দৃষ্টি আমার বিষন্ন বদনে
কি হয়েছে আমার!
দুখের ফোয়ারা পেতে বসেছি আমি
ছুটে যাই জনহীন প্রান্তরের দিকে
বিষন্ন বদনে তাকিয়ে থাকি
ভাবতে থাকি
হায়রে আমার পৃথিবীর ভূগোল,আজ কিভাবে
লেখা হলো?
অঙ্কিত হলো আমার প্রেয়সীর মানচিত্র
কি বাজে রং তুলিতে


মনে পড়ে টুপটুপ বৃষ্টিতে ভিজে
দৌড়ে লাইব্রেরী চত্বরের ঘাসবন পার হয়ে
আশ্রয় নিতাম লাইব্রেরী তে
সারাদিন কেটে যেতো, ক্যাম্পাসের কোলাহল
পূর্ণ পরিবেশে
সন্ধ্যায় ভাঙতো মিলনমেলা আমাদের
এরপর যার যার হলে ফেরার পালা
রুমে ফিরতে তুমি
আমি ও ফিরে যেতাম আমার হলে


সে কি প্রেম
সেকি তুমুল ঢেউ, বজ্রপাত,বর্ষণ সিক্ত প্রেম আমাদের
বর্ষার জলের মতো টইটুম্বুর রসালো প্রেম
আজও নাড়া দিয়ে যায় আমার মানসপটে
দোলা দিয়ে যায়
সেদিনের সে প্রেমের ঢেউ
জানি না তোমার মনে পড়ে কিনা!


এখন তুমি অনেক বদলে গেছো
সেই তুমি এখন আর নেই
হারিয়ে গেছো অন্ধকারে, একেবারে
চিরতরে, সিকিমের অপর প্রান্তে


জানি না এখন কোথায় আছো?
কেমন আছো?
গভীর রাতের নুপুর হয়ে
ছন্দের তালে কেমন আছো?