বাসর রাতেই, উচ্চকিত কন্ঠে, কেঁদে
উঠলে তুমি
হঠাৎ করে, ডুকরে কেঁদে উঠলে
আকাশ ছোঁয়া কান্নার রোল বেজে
উঠলো
তোমার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়াতে
থাকলো অনর্গল
কোনোরূপ কারণ ছাড়াই
আকাশ ভেঙে পড়লো আমার মাথায়
ঠিক ঘনিষ্ঠ হবার আগ মুহূর্তে
তোমার হৃদয়ে মেঘের ঘনঘটা
চোখে মুখে তোমার বিষাদের ছায়া
অঝোরে শুরু হলো বর্ষণ,তোমার
চোখে
অশ্রুজলে ভেসে গেলো তোমার মুখ
অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে আমি
তাকিয়ে হিজল গাছটা
ডুমুরেরফুল আর অশত্থের পাতা
আমার চোখে
নিরুত্তর তুমি !
আজ আকাশে মেঘ করেছে
তুমুল বর্ষণ হবে আজ
আকাশে আজ সাজ সাজ রব
ভিজিয়ে দেবে পুরো বসুন্ধরা
অথচ তোমার কান্নায়, মন খারাপ
হলো মেঘেদের
ঘোর অন্ধকারে
অমানিশায় কেটে গেলো রাত
হতাশা আর শূন্যতাকে ঘিরে, শুরু
হলো ভোরের পাখির ডাক
আকুল করলো আজানের ধ্বনি
এরপর থেকে, তুমি হলে এক, ভিন্ন
মানুষ
তুমি হলে চির অচেনা এক নারী
সদৃশ নারী
তোমাকে খুব অচেনা মনে হতে
লাগলো, খুব বেশি অচেনা
তুমি পৃথক বিছানা গড়ে তুললে
ভিন্ন রুমে, আমাকে ছেড়ে
আপন ভূমে পরবাস হলাম আমি
ধীরগতির ট্রেন চলতে থাকলো
এলোমেলো, ঠেলেঠুলে
ইতোমধ্যেই ঘর আলো করে ভূমিষ্ট
হলো তোমার রক্তের অধিকার
মায়াময় এ পৃথিবী
মায়ার চাদরে মোড়ানো হৃদয়ে
তখন কতো কথার অনুরণন
ধ্বনিত হতে থাকলো আমার বুকে
ভুলে গেলাম আকস্মিক নিজেকে
ঘর আলো ক'রে কোল জুড়ে আসা
সন্তানকে নিয়েই চলতে থাকলো
আমাদের ইটকাঠ পাথরের জীবন
এ-কে কোনো জীবন বলে নাকি?
যে নারী
কখনো পরিব্রাজকের মতো হাঁটেনি
আমার শরীরে
পরিযায়ী পাখির মতো উঁকি ও মারেনি
কোনোদিন স্পর্শ করেনি আমার মুখের বাম পাশের তিলটিকে
কথা বলেনি, ভুলেও আমার শরীরের সাথে
কোথাও কোনো নিভৃত রাতে
ধরেনি হাত, আঙ্গুল, মাথা, নাক,কান,গলা, স্কন্ধ
ও যার ওষ্ঠ সমর্পণ করেনি
আমার ওষ্ঠে কোনো কালে ও মনের
ভ্রান্তিতে
অসার দেহ নিয়ে লাশের মতো পড়ে
থেকে
কাটিয়ে দিলে হাজার বছর, পৃথক
বিছানায়
আকাশের কৃষ্ণ বর্ণের মেঘে যখন
ঢেকে যেতো আমার মুখ
তখনও কি হয়েছে, বলে জিজ্ঞেস
করেনি যে নারী
সে কিনা আমার জীবন সঙ্গীনি
আমার সহ-ধর্মিণী!
এমন সময় 'চিল উড়ে চলে গেলো
কুয়াশার প্রান্তরের দিকে'
বলে গেলো,শোনো কবি, এ নারী
আর যে-ই হোক
হতে পারে না তোমার জীবন সঙ্গীনি
তোমার প্রিয়তমা সহধর্মিণী
প্রিয় কবি বন্ধুরা আপনারা কি বলেন! না ঠিকই তো!
আমার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
আমার চোখ, মুখ, নাক,কান, গলা
সবই আন্দোলনে শরীক হলো
আমার সাথে
কেনো এ অবিচার, কেনো এ অন্যায়
এ তুমি কেমন পুরুষ?
এ-তো কোনো জীবন নয়
কিন্তু না!
আমার রক্তের স্বত্বাধিকারীর আদর
মাখা মিষ্টিমুখের আলোকিত হাসির
কাছে পরাজিত আমি
এরপর থেকে কেটে গেলো হাজার বছর
তোমার আমার জীবনে
হোলোনা তো দেখা দু'জনার
এক বিছানায় আর এ জীবনে
ফুটলো না বাগানে ফুল
এ জীবনে আমার যেনো
সবই ছিলো ভুল
একই নিবাসে ভিন্ন ভিন্ন রুমে দু'জন
দু'জনের পৃথক বিছানায়
কেটে গেলো কেটে গেলো হাজার
বছর, ভালো আছি এই নিশানায়
বিষন্ন, বিষাদগ্রস্ত মনের আকাশে
আমার
উঁকি মারোনি কখনো তুমি
প্রশ্ন করোনি তুমি কখনো
কি হয়েছে তোমার?
কখনো বলোনি এই শার্টটা, এই
পাঞ্জাবিতে
এই টিশার্টে, তোমাকে ভালো মানায়
এটাই পরো তুমি
আজও কাঁদে
আমার বিছানা, বালিশ, বিছানার
চাদর, মশারী
জানালার কার্নিশে বসে থাকা
পাখিটি
মৃত্তিকার ঘ্রাণে মাতোয়ারা, ঝ'রে পড়া রজনীগন্ধার পুষ্প পল্লবটি
তুমি-ই নারী
তুমি-ই নারী কুলের শিরোমণি!
তোমাকে নিয়ে তাই কাটিয়ে দিলাম
তন্দ্রাহীন চোখে,হাজার বছর,পৃথক
বিছানায়
কিন্তু নারী!
এতো বিষাদ, বিষন্নতা, হাহাকার,
হতাশা আর শূন্যতা নিয়ে, কেনো
বিয়ে করেছিলে তুমি নারী?
কেনো বিয়ে করেছিলে আমাকে?
একবার বলো
শুধু একবার বলো, নারী!