রাত বারোটা বাজে
হঠাৎ ঘুম থেকে মা ডেকে তুললেন
রেডি হতে বললেন
কি জন্য মা? তোর বিয়ে
আকাশ থেকে পড়লাম
নির্বাক নিস্তব্ধ হ'য়ে গেলাম একেবারে
কিছুই বুঝে ওঠার আগেই লোকজন জড়ো হ'য়ে গ্যালো
বিয়ের ধুম প'ড়ে গ্যালো গভীর রাতের আঁধারে
মাত্র নবম শ্রেণির ছাত্রী আমি ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল
বরের বয়স চল্লিশ
পছন্দ অপছন্দের সুযোগ নেই বিয়ে করতেই হবে
মোল্লা ডেকে বিয়ে পড়ানো হলো


শুরু হলো আমার সংসার জীবন
দশ বারো জনের সংসার
তিনবেলা রান্না করি খাবার দিই সবাই খায়
কখনো তরকারি থাকে কখনো থাকে না
সবাই খেয়ে চ'লে যায়
কেউ জিজ্ঞেস করে না খেলাম কি খেলাম না


ঘরের একমাত্র মুরুব্বি মহিলা ও মা না হ'য়ে
পুরোদস্তুর শ্বাশুড়ি ব'নে গ্যালো


সারাদিন জলন্ত উনুনে কই ভাজা হই আমি
পরিশ্রমের চোরাপথ পেরিয়ে বিড়ালের পায়ের শব্দের
মতো
আমার শরীরে সন্ধ্যা নেমে আসে
নেতিয়ে পড়ি বিছানায়
গভীর রাতে ইদুরের ঠোঁটের কামড়ে ঘুম ভেঙে যায়
আমার শরীর ছুঁয়ে ধানের শিষ নিয়ে ইদুর গর্ত খুঁজে
পায়
চলে ঠোকাঠুকি এভাবেই রাত পেরিয়ে যায়


আবার ক্লান্ত শরীরে আমার ভোর নেমে আসে
আজানের সুরে মোরগের ডাকে পাখির কলকাকলীতে
থালাবাসন ধুই রান্না করি
গোয়াল পরিস্কার করি গোরুকে খাবার দেই
বুড়ো বরের হুঙ্কার শুনি "মাগি এখনো রান্না হয়নি"
শ্বাশুড়ি বাতাস দেয় ছেলের কথায় "আরে হবে আবার"
"পোড়ামুখীরে বিয়ের পরে সংসার তো শেষ 
ঝেটিয়ে বিদায় কর্ ওরে। "


এভাবেই কেটে যায় আমার দিন আর রাত
এদিকে বুড়ো বর আমাকে দশ দশ-টা সন্তান উপহার
দিয়েছে
ছাত্রী খারাপ ছিলাম না
সৎ মায়ের ধাক্কায় হঠাৎ বসতে হলো বিয়ের পিড়িতে
সংসারের চাকায় সেই যে জ্বলে পুড়ে ছাই হওয়া শুরু
আজও আমি চোখের জলে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাই
আমি যে এক হতোভাগী
কেউ নেই দেখার এ পৃথিবীতে আমার