মনে আছে নীলা? কত কষ্টে আমাদের জীবন কাটতো!
মাত্র দু'রুমের ছোট্ট একটি টিনের একতলা ভাড়া বাড়ীতে
থাকতাম আমরা
বৈশাখের রুদ্র ঝড়ে মাঝে মাঝে তোমার সাজানো সংসারের
সব কিছু ওলট পালট হয়ে যেতো
গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহে ঘর্মাক্ত কলেবরে টিনের ছাদের নীচে
কতো কষ্টই না করতে তুমি
শতো কষ্টের মাঝেও এক চিলতে সুখের নীড় গড়ে তুলতে
পেরেছিলাম আমরা


অফিসের কাজ শেষে বাসায় ফিরতাম
নীলাম্বরী শাড়ী পরে আমার জন্যে কফি নিয়ে পথ চেয়ে
থাকতে তুমি
পাশে এসে যখন দাড়াতে, তখন মনে হতো কোনো অপসরি
আকাশ থেকে ফুলের ডালা হাতে নেমে এসেছে
পৃথিবীর সবচে' সুখী মনে হতো আমাকে
তোমার সলাজ চাহনি ও মিষ্টি  মুখ দেখে সব ক্লান্তি ভুলে
যেতাম আমি
রিক্সায় যেতে যেতে বাতাসে তোমার শাড়ির আঁচল আদরমাখা
মিষ্টি সৌরভে ভ'রে দিতো আমাকে
মনে আছে নীলা? নুরজাহান হোটেলে চা খেতাম
আবার কখনো বা ডিনার সেরে বাসায় ফিরতাম

এরই মাঝে তোমার কোল জুড়ে এলো আমাদের ছোট্ট
সোনামনি
নবাগতকে নিয়ে আমরা খুব আনন্দেই ছিলাম
ধীরে ধীরে অনেক কষ্টে তিন রুমের ছোট্ট একটি একতলা
বাড়ীও করেছিলাম আমরা
সারাদিন বাবু এরুম ওরুম করে খেলায় মেতে থাকতো
ফাঁকে তুমি আমার জন্যে আলু দিয়ে তাজা শিং মাছের
ঝোল রান্না করতে  
আহ! কি স্বাদ!


মনে আছে নীলা? আমাদের রুমের বাইরের অংশে চড়ুই
পাখি ও কবুতর বাসা বেঁধেছিল
পৃথিবীর সবচে' নিরাপদ জায়গা মনে করেছিল তারা
আমরা যখন ভরদুপুরে বাবুকে বুকে নিয়ে স্বপ্নের জাল
বুনতাম
তখন তারাও তাদের স্বপ্নগুলি সুরের মূর্ছণায় আমাদের
তবলায় ঝড় তুলতো
মনে আছে নীলা? ছুটির দিনে চৈত্রের অলস দুপুরে বাবু
ঘুমিয়ে পড়লে তুমি
এবং আমি যখন মধুময় প্রেমময় কাব্য রচনা করতাম
চড়ুই পাখি ও কবুতরগুলি তখন লজ্জায় লাল হয়ে বলতো  
আকাশে মেঘ নেই তবু ও কেন বৃষ্টি জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ
শুনতে পাচ্ছি
তাদের এ কথায় তুমিও লজ্জায় লাল হয়ে আঁচলে মুখ ঢাকতে

তোমার মনে আছে? আমাদের বাড়ীর সামনে একটি ফুলের
বাগান ছিল
হরেক রকম ফুলগাছে তুমি নিজের মত করে সাজিয়েছিলে
এটি
প্রতিদিন আমরা ফুলের সৌরভ নিতে বাগানে যেতাম
কি যে মিষ্টি! কি যে মুগ্ধতার এ পরিবেশ! মৃদুমন্দ মলয়
সমীরণ
আজও মনে দোলা দিয়ে যায়
ভালই চলছিলো আমাদের
হঠাৎ ডিভি পেয়ে অনেক সুখের আশায় আমেরিকা পাড়ি
জমালাম
তোমার মনে আছে? আমাদের এ ছোট্ট নীড় গড়তে কতো
কষ্টই না করেছিলে তুমি
সকালের খাবার দুপুরে কিম্বা দুপুরেও না খেয়ে অকৃত্রিম শ্রম
ও মেধায় গড়ে
তুলেছিলে আমাদের এ তাজমহল


দেশের মধুময় সুখের জীবন ফেলে আমরা এখন যান্ত্রিক
জীবনে দুর প্রবাসে আমেরিকায়
আমরা দ'জনেই এখন অফিস করি বাবু থাকে ডে কেয়ারে
আমরা অফিস থেকে রাতে ফিরি
জানো নীলা? আমরা আসার পরে না কবুতরগুলি সারাবাড়ী
ডাকাডাকি করে
আমাদেরকে বারবার খুজে ফেরে
অভিমান করে তারা একদিন বাড়ী ছেড়ে চলে যায়
আর ফিরে আসেনি
অনেক সুখের আশায় আমরা এখন দূর প্রবাসে বারবার আমরা
সুখ খুজে ফিরি
কিন্তু সুখতো আর ধরা দেয় না


নীলা তুমি জানো? আমাদের সে বাড়ীর গায়ে এখন শ্যাওলা
জমেছে
পুরো বাড়ী স্যাঁতসেতে গন্ধময় আগাছায় ভরে গেছে
মাঝে মাঝে সেখানে গরু-ছাগল বিচরণ করে
দেখার নেই কেউ সেখানে
আমাদের হাতছানি দেয় ডাকে, বলে ফিরে এসো
কিন্তু আমরা তো এখন দু:খের ঝুড়িতে হতাশার ডালি সাজিয়ে
শিকাগো শহরে বারবার সুখ খুজে ফিরি
কিন্তু হায়!
সুখ কি আর বারবার ধরা দেয়?