আজ আর নয় কোনো কবিতা
একটা জীবন কাহিনী ও মৃত্যুই হবে আজকের লেখার
বিষয়
মাঝে মাঝে মনে হয় এ পৃথিবীর রহস্য কি!
ক্যানো কিভাবে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে মাথার ওপরে
ক্যানোই বা মেঘেরা এক দেশ হতে অন্য দেশে নিরন্তর
ছুটে চলেছে
ক্যানোই বা চন্দ্র সূর্যের জোয়ার ভাটা আর দিনরাত্রির
এ খেলা
ফুল ক্যানো ফোটে আর ক্যানোই বা সবার অজান্তে ঝরে
পড়ে অবহেলায়
যার সৌরভে মানুষ পাগল প্রেমিকা হয় খুশী তার সুবাসে
ক্যানোই বা আমাদের এ সুন্দর পৃথিবীতে আসা আবার
হঠাৎ করে সবাইকে কাঁদিয়ে ক্যানোই বা চলে যাওয়া
ক্যানোই বা অসময়ে আমাদের চলে যেতে হয় মায়ের কোল
খালি করে
ক্যানোই বা আবার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ি
ক্যানো
নয়নাভিরাম এ সব সৃষ্টি আবার ক্যানোই বা তার ধ্বংস
এ কি তোমার
খেলা হে মহান আল্লাহ হে ধরিত্রী হে নিষ্ঠুর বসুধা ক্যানো
তোমার এ নির্মমতা এ প্রশ্ন ছুড়ে দেয় যেমন শিশু
আমি ও কবি সাহিত্যিক সহ বিদগ্ধ সব সুধীজন সকলে
মেলেনি উত্তর


আশির দশকের ঢাকা ভার্সিটির তাজা প্রাণ তরুণ
ছাত্র আমরা  
কেউ হাসে গল্প করে কেউ গুনগুনিয়ে গান করে আবার
কেউ বা কাউকে একটা ধাক্কা মেরে স্যুর ওপরে পাড়া দিয়ে
অকারণে ভোঁ দৌড় মারে
কেউ কেউ আবার পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত
নানা ধরনের বন্ধুদের এক মিলনমেলা ছিলো আমাদের
ল' ডিপার্টমেন্ট
এরই মাঝে নজর কাড়ে ফুরফুরে মেজাজের সদা
হাস্যোজ্জল এক ক্ষুরধার ছাত্র
আলাপের ধারাবাহিকতায় আমার হৃদয়ে মুগ্ধতা ছড়ালো
পছন্দের মাত্রা অতিক্রম করে গ্যালো সে
য্যানো কেউ গোলাপের সৌরভ ছড়িয়ে দিলো আমার হৃদয়ে
মুগ্ধতা ছুঁয়ে দিলো আমার মন
মন জয় করে নিলো সে
হৈ হুল্লোড় আর ফূর্তির মাঝে ই আনন্দ খুঁজে পেতো সে
মজাদার মনের মানুষ ছিলো


ঢাকা শহরের বাসিন্দা হলেও ছিলো তার জীবন
সংগ্রাম
এক সংগ্রামী চেতনার নাম ছিলো আমাদের
প্রিয় বন্ধু নরেন দাস
পড়াশোনার পাশাপাশি সে সংসারের দায়িত্ব ও কিছুটা কাঁধে
তুলে নিয়েছিলো
করতো কিছু আয় উপার্জন
তাই বন্ধুদের আড্ডা ছেড়ে
কখনো কখনো ছুটে যেতো স্বীয় দায়িত্ব পালনে


ক্লাসে ভীষণ রেসপন্সিভ ছিলো সে
গভীর রাত জেগে পড়াশোনা তারপর ঢুলুঢুলু চোখে
ভোর
আট্টায় ক্লাসে উপস্থিত হওয়া ছিলো তার নিত্যদিনের
ঘটনা
টিচার জিজ্ঞেস না করলেও দাড়িয়ে প্রায় সকল প্রশ্নের
জবাব দেবার প্রবণতা ছিলো তার মাঝে
অনেক বেশী পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো সে
চেষ্টাই ছিলো তার মূল মন্ত্র মূল হাতিয়ার


চিন্তার মাঝে সুপ্রসন্ন দৃষ্টিতে ডুবে থাকতো সে আর
খুঁজে নিতো তার আপন ভূবন
খেলাধুলা পিকনিক সঙ্গীত সব কিছুতেই ছিলো তার
আগ্রহ আর সক্রিয়তা
উপস্থিত থেকে আনন্দ দিতো সে সবাই কে


চমৎকার বন্ধু বাৎসল ছিলো সে
এদিকে তার তুলনা সে নিজেই
মাঝে মাঝে আমার হলে ছুটে আসতো সে
চলতো আড্ডা নানারকম গল্পে মেতে উঠতাম
আমরা
বলতো প্রাকটিস সম্ভব না বিসিএস করে জজ
হবে সে হলোও তাই
ল' ডিপার্টমেন্টের তুখোড় ছাত্র নরেন দাস
ইংরেজি মিডিয়ামে লেখাপড়া করতো
বাস্তবধর্মী মেধাবী এ ছাত্রের বাস ছিলো সহজ সরল
মানুষের জীবনে ও হৃদয়ে
মানব মানবতা ও পরোপকারেই ব্রতী ছিলো সে


বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে সরাসরি তীব্র
প্রতিযোগিতামূলক বিসিএস জুডিসিয়াল সার্ভিসে
কৃতিত্বের স্বাক্ষর বহন করে সে
প্রবেশ করে জজিয়তি জীবনে
কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে সাফল্যের আগমনী বার্তা জানিয়ে
দেয় সবাই কে
কয়েক বছর চাকুরী করার পর ল' মিনিস্ট্রির ড্রাফটিং উইং
এ চাকুরিতে যোগদান করে
চাকুরির ক্রমোপদোন্নতির ধারাবাহিকতায় অবশেষে ড্রাফটিং
উইং এর সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে যথারীতি দায়িত্ব
পালন করে আসছিলো বন্ধু নরেন


আকষ্মিক আকাশে কৃষ্ণ কালো মেঘের ঘনঘটা
পুরো পৃথিবী অন্ধকারে ঢেকে গেলো
চোখে মুখে সরিষার ফুল দেখতে শুরু করলাম সবাই                
বন্ধু গ্রুপের মাধ্যমে বন্ধু নরেন দাসের করোনাক্রান্তের
সংবাদে নেমে এলো বিষাদের ছায়া
ঠোঁটমুখ শুকিয়ে গ্যালো আমাদের সকলের
আশঙ্কার ঘোর আর কাটে না  
    
ব্যাথিত হৃদয়ে তার জন্য মহান আল্লাহর কাছে আমরা
দোয়া করতে থাকলাম
নির্ভীক করোনায় আক্রান্ত হয়ে পিজি হাসপাতালে ভর্তি
হলো সে
ডাক্তারদের কথায় হতাশায় নিমজ্জিত হলাম সবাই
শুধু প্রহর গুণতে থাকলাম
নেই কোনো আশার বাণী আশার আলো বেদনায় বিষাদে
সিক্ত আমরা সবাই
সপ্তাহ খানেকের মধ্যে তার শারীরিক অবস্থার ক্রমাবনতি
হয়ে সে কোমায় চলে গ্যালো


আকাশ ভেঙে পড়লো স্তব্ধ হলো পাখির কুজন কলরব
বন্ধ হলো কুলকুল রবে বয়ে চলা নদীর স্রোতধারা
চোখ মুছতে লাগলাম বন্ধুরা সবাই
ব্যর্থ হলো আমাদের সব দোয়া প্রার্থনা আর্তি সহানুভূতি
সহমর্মিতা সবকিছু


নাম না জানা পাখির ডাকে সাড়া দিয়ে অবশেষে গতকাল
আমাদের সকল প্রচেষ্টা ও তার বেঁচে থাকার অদম্য
প্রয়াসকে ব্যর্থ ক'রে তার প্রিয় স্ত্রী মেয়ে ও আত্মীয় স্বজনসহ
সকলকে শোক সাগরে ভাসিয়ে চিরতরে পাড়ি দিয়ে মৃত্যুর
কোলে ঢলে পড়লো আমাদের প্রিয় বন্ধু নরেন দাস


স্তব্ধ হলো বিদায় ঘন্টা
চারিদিকে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার
আকাশ থেকে ঝরে পড়লো এক উজ্জ্বল নক্ষত্র
পতন হলো সাফল্যগাথা জীবনের অপরাজিত এক
ইনিংসের
অবসান হলো এক কীর্তিগাথা জীবনের  
  
আজীবন বেঁচে থাকা যায় না বন্ধু তাই তোকে নিয়ে
যাবার পালকি এসে দাঁড়ালো তোর দুয়ারে আর এই
সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আমাদের ছেড়ে চলে
গেলি                          
অভিমান করে চলে গেলি বন্ধু আমরা সবাই তো তোর
সাথেই ছিলাম তবে ক্যানো ফাঁকি দিয়ে এ চলে যাওয়া
বন্ধু


প্রিয়তমা স্ত্রী ও এক মেয়ে নিয়ে ই ছিলো বন্ধু নরেনের
সংসার
তার একমাত্র আদরের কন্যা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী


ভালো থাকিস বন্ধু
দেখা হবে হয়তো আবার কোনো দিন  
হয়তোবা হলে টিএসসি শাহবাগ অথবা নিউ মার্কেটে
বুক সিন্ডিকেট বইয়ের কোনো দোকানে  
    
সেদিন না হয় ল'ডিপার্টমেন্ট ও কবি জসীম উদ্দীন
হলের ফেলে যাওয়া স্মৃতিময় জীবন নিয়ে আবারও
মেতে উঠবো
কথা হবে গল্প হবে অনেক
হয়তো হাটতে হাটতে চলে যাবো টিএসসির ডাচে
খাবো ঝালমুড়ি ফুসকা চা
আর ক্লান্ত শ্রান্ত অবসন্ন দেহে শেষে ফিরে যাবো আবার
যার যার ডেরায়
ভালো থাকিস বন্ধু
ক্ষমা করিস আমাদের সব বন্ধু কে      


বাংলো
জেলা ও দায়রা জজ
সুনামগঞ্জ


প্রকাশ কাল
সময়ঃ ০৬-৩৪মিঃ
তারিখঃ২২-০৭-২০২০ ইংরেজি