এক,
আমি কি আদৌ একজন মানুষ ?
নাকি সময়ের শূন্যতায় হারিয়ে যাওয়া এক অচেনা মুখ—
যার স্বপ্ন জেগে ওঠে, আবার ঘুমিয়ে পড়ে
দুপুরের জ্যোৎস্নাহীন ক্লান্তিতে।
আমার প্রেম ছিল এক খরস্রোতা নদী—
যার উৎস পাইনি, গন্তব্য জানিনি।
সে এসেছিল এক দুপুরে, চোখে বিষণ্ণ অস্থিরতা,
আর চলে গিয়েছিল—
যেন রাষ্ট্রীয় নোটিশ,
সাক্ষর ছাড়া।
আমার স্বপ্ন—
একটা বিস্মৃত ফাইলের মতো পড়ে আছে মন্ত্রকের ধুলোর নিচে,
যেখানে প্রত্যেক লাইনে লেখা
"বাতিল", "অনুপযুক্ত", "অযোগ্য",
আর কোথাও লিখে রেখেছে—
"আপনার চিঠি বিবেচনা করা যায়নি।"
আমার আশেপাশে ঘুষের গন্ধ,
দূর্নীতির দামি পারফিউম ছড়ানো টেবিল,
নেতাদের হাসি—পাথরের তৈরি,
তাদের চোখে জনগণ মানে ভোটার আইডি,
নয়তো পেছনের দরজা।
আমি প্রশ্ন করি—
"আমার অপরাধ কী?"
রাষ্ট্র বলে, "তুমি একা",
প্রেম বলে, "তুমি দেরি করেছো",
স্বপ্ন বলে, "তুমি যথেষ্ট সাহসী নও।"
আমি এখন কোনো গল্পের নায়ক নই,
বরং গল্পহীন এক চরিত্র,
যে প্রতিদিন লিখে, মুছে, ফের লিখে—
নিজেকেই বোঝায়, “সব কিছুই ঠিক হবে একদিন।”
তবুও, কোনো এক ভোরে,
একটা কাক ডাকে অচেনা ছাদে,
একটা শিশুর কান্না ফোটে পাশের গলিতে,
একটা আলো পড়ে দেয়ালে—
তখন বুঝি, অন্ধকার শুধু গহীন নয়,
অন্ধকারও জানে—
আলো জন্মায় নিরুদ্দেশ থেকেও!
দুই,
"ঘরের ভেতর একটি দরজা খোলা ছিল"
আমি জেগে উঠি—
না, ঘুম ভাঙেনি…
জেগে থাকাটাই যেন এখন ঘুমের সমান বোঝা।
ঘরের ভেতর একটি দরজা খোলা ছিল—
কেউ ঢোকেনি।
তবুও দেয়াল বলছিল,
"আজকে তুমি আবার ভুলে গেছো তুমি কে।"
আমি আয়নার দিকে তাকাই।
চোখের নিচে কালচে ছাপ,
ভেতরে ক্লান্ত একটা প্রশ্ন:
"এই দেশ কি আমাকে এখনও চেনে?"
একসময় আমি মিছিল করতাম,
চিৎকারে আকাশ কাঁপতো,
পেছনে ছেলেমেয়েরা শ্লোগান তুলতো—
"ঘুষখোরদের জুতা মারো!"
আজ সে ছেলেমেয়েরাই
প্রকল্প পাস করাতে গিয়ে
চা বিলের ফাইল বানায়।
আমার প্রেম?
সে এখন গাছপাকা আমের মতো স্মৃতি—
টক, মিষ্টি আর পচনশীল।
তাকে নিয়ে কিছু লিখিনি বহুদিন,
লিখলে ব্যর্থতাও লজ্জা পায়।
আজকাল স্বপ্নও ক্লান্ত…
একটা গ্যাসবাতির মতো,
যে আর জ্বলতে চায় না,
তবুও জ্বলে, কারণ নিভে গেলে আর কিছুই থাকবে না।
কেউ একজন বলেছিল—
“ভালোবাসা হারিয়ে গেলেও, বিশ্বাস হারিও না।”
আমি বলিনি, কিন্তু মনে মনে ভেবেছিলাম—
“যখন চারপাশে কেবল স্বার্থ,
তখন বিশ্বাস শব্দটা নিজেই এক রকম বিলাসিতা।”
তারপরও…
দরজাটা খুলে রেখেছি,
হয়তো কেউ ফিরবে…
হয়তো কোনোদিন
এই রাষ্ট্র নিজেই লজ্জায় মাথা নত করবে।