মোর বীণায় বাজিছে সাম্যের সুর—
কণ্ঠে মোর ধনী-গরীব, মজুর-মনিব নহে দূর।
যাহা বাড়ে, জন্মে, উচ্চয় ধরাধামে,
সবই মজুরের দু'হাতের কষ্ট-কামে।


মুয়াজ্জিনের আজান যব, ডাকিয়া কহেন রব,
“আমার সম্মুখে দাঁড়াইলে যারা, তাহারা সমান সব।”
মনিব-মজুর, জনাব-হুজুর, সবে এক কাতারে,
কেউ কি জানে— কে উত্তম, রব ভালোবাসে কারে?


মন্দিরের ঐ ঠাকুর মশাই, পাড়ার ঐ মুচি-মেথর,
দেবতারে পূজে, ভক্তি ভরে, হস্ত করিয়া করজোড়।
গির্জার ঐ ঈশ্বর, নহে নশ্বর, ডাকে রাত আঁধারে,
বিপদে পড়িলে লুটিয়া পড়ে, সকলি তাহার দ্বারে।


মানুষ হইয়া মানুষের মাঝে কে করিল ভেদাভেদ,
রক্তে-মাংসে, জন্ম-ক্ষয়ে, সকলি মোরা অভেদ।
ওহে পূজারি, মুমিন বান্দা, মোরা এক মানুষের বাচ্চা,
নাহি জাতিভেদ, সকলি অভেদ, এই কথাই সাচ্চা!


মানুষ যদি সকলি মোরা, রঙিন এই ধরায়—
তব কেন মজুর-মনিব চলিছে দুই ধারায়?


কর্ম করিয়া পূঁজি করে, কর্মেরে পূজিল সবে,
কর্ম বিনে দু'মুঠো অন্ন, মুখে দিয়াছে কে কবে?
কর্মী হইয়া জন্মিয়া ভুবনে, কর্ম না করিয়া শ্রদ্ধা,
নাহি পারে মানব হইতে, নাহি পারে হইতে বোদ্ধা।


কুলি লইয়া বোঝা কাঁধে, তোমারে না দিলে মদদ,
তুমি কুলীন, হইতে বিলীন, বোঝার ভারে সতত।
সেই কুলি আজি অধম হইয়াছে, উত্তম হইয়াছ তুমি!
অথচ, সভ্যতার চাকা ঘুরিয়া বেড়ায় ওদের চরণ চুমি।