মুখোশের প্রতিচ্ছবি
জহিরুল ইসলাম


খুব ছোটবেলায় আমার একদিন ভীষণ ইচ্ছে জাগে মনে,
আমি বড় হয়ে একদিন ভালো মানুষ হবো;
সেই থেকে আমি ছুটে চলেছি মানুষের কাছে মানুষের বাজারে,
একদিন বাজারে গিয়ে বিক্রেতাকে বললাম ভাই আমাকে একটা ভালো মানুষের মুখোশ দিন!
সেদিন বিক্রেতা আমাকে মিথ্যে মুখোশধারী এক ভালো মানুষের মুখোশ দিয়েছিল।
আমি ভেবেছি মুখোশ পরলেই বোধহয় ভালো মানুষ হওয়া যায় খুব সহজেই,
কিন্তু যেদিন জানতে পারলাম দোকানদারের দেওয়া সেই মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে ছিল;
এক মিথ্যে মানুষের মুখচ্ছবি সেদিন মনে মনে ব্ডড দুঃখ পেয়েছি বটে!


এরপর আমি গ্ৰাম ছেড়ে এলাম মানুষ হবার জন্য মানুষের এই শহরে,
ভালো মানুষ হবো বলে কতশত বার কষ্ট পেয়েছি কতশত বার ঠকে গিয়েছি;
তবুও নাছোড়বান্দা আমি ভালো মানুষ হবার স্বপ্ন আমায় গিলে খাচ্ছিল প্রতিনিয়ত,
হেরে গিয়েছি ভালোবাসার নিকট হারিয়ে গিয়েছি এই মিথ্যে শহরের মানুষের নিকট।
কত নির্ঘুম রাত কেটে গেছে আমার পুড়তে হয়েছে আমার সতেজ বোকা মন কারণে অকারণ,
আমি ভালো মানুষ হবো বলে পড়েছি কতশত অক্ষরের গাঁথা বইয়ের মোড়ক।
আমি ভালো মানুষ হবো বলে হয়েছি মুখোমুখি কতশত মুখোশ মানুষের নিকট,
হায় আফসোস আমার এই ইহকালে আর ভালো মানুষ হবার স্বপ্ন পূরণ হয়ে উঠে নি।


মাঝে মধ্যে ভাবি পরকালে কি জবাব দিবো আমি খোদা তায়ালার কাছে?
আমার সেই সব অপরাধের দায়ে নিচু করে থাকা কঠিন সময়ের কথা ভেবে;
ভয় হয় ভীষণ রকমের ভয় হয় আমার আমি ভয় পেয়ে ভেঙে পড়ি কান্নায়!
এত এত মুখোশধারী মানুষের ভিড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলি হারিয়ে ফেলি অস্তিত্ব,
সরল জবানবন্দিতে নিজেকে বন্দি করে রাখি বিবেকের কাঠগড়ায় নির্লিপ্ত ভাবে।


আমার বোধ জাগে মনে অনুতাপে পুড়ে ঘা হয়ে যায় আমার হৃদয়,
মাঝে মধ্যে ভাবি বেঁচে আছি মানেই হয়তো অযথাই সময়ের অপচয়।
আজকাল আয়নায় নিজের বিষাদগ্রস্ত প্রতিবিম্ব দেখে ব্ডড মায়া হয়,
কি সব বিষাদ লুকিয়ে মুখোশের আড়ালে নিজের আস্ত একটা জীবন টেনে নিচ্ছি একা একা।