জাপানী আদলে বাংলা হাইকু (বিশ্বপ্রেম)-3

জাপানী আদলে বাংলা হাইকু (বিশ্বপ্রেম)-3
কবি
প্রকাশনী দ্বীপজ প্রকাশন
প্রচ্ছদ শিল্পী সাব্বির আলম
স্বত্ব লেখক
প্রথম প্রকাশ জুন ২০১৭
সর্বশেষ সংস্করণ প্রথম প্রকাশ
বিক্রয় মূল্য 200/-

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

বিশ্বপ্রেমের হাইকু কবিতা

ভূমিকা

প্রাক কথন

হাইকু কবিতা সম্পর্কে ইতিপূর্বে বহু আলোচনা হয়েছে। তবে এবারের বিষয়বস্তু একটু ভিন্ন রকমের। এ সমন্ধে কেউ বিশ্বে হাইকু কবিতা লিখেছে কিনা আমার জানা নেই। তবে জাগতিক জীবনের মূল্যবোধ থেকেই বিবেচনা করে লিখেছি। প্রেম হচ্ছে মানুষের অত্যাবশ্যকীয় একটি সম্পদ। যা বিশ্ব প্রাণের সাথে মিলিত হওয়ার প্রয়াস চিরন্তন বা শাশ্বত। এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য মানবাত্মার প্রবল আকাঙ্খা। অসীম ও অনন্তের জন্য তৃষ্ণা। অনির্দিষ্টের পানে গমনের উৎকন্ঠা ও তার পরিনাম সুন্দর মাধুর্য বিন্যাসে পত্র পল্লবে প্রষ্ফুটিত। মানুষের মনে যতদিন ঐশ্বরিক প্রেম, ভালোবাসা ও জীবনের সাথে মূল সত্তার সম্পর্ক উম্মেষ ঘটতে থাকবে, ততদিন মানুষ এক আলোকময় সঠিক পথের সন্ধান পাবে।

আমরা প্রেমের প্রতিশব্দ সম্পর্কে জানি তা হলো, প্রেম, প্রণয়, ভালবাসা, হৃদ্যতা, পিরিত, লাভ, মহব্বত, ইশ্ক ইত্যাদি। তবে প্রেম সকল চিন্তা, গবেষণা, যৌক্তিক বর্ণনা বিশ্লেষণ ও ধারণার উর্ধ্বে এবং এ প্রেম জীবনের গোপন রহস্য। বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাকার্যের ভালো-মন্দ, লাভ-ক্ষতি ইত্যাদি বিচার করে দেখে। কিন্তু প্রেমের ক্ষেত্রে এসব হিসাব-নিকাশ নেই। প্রেম স্বর্গীয়। এ দেশে প্রেমতত্ত্ব, সুফীদর্শন, পাশ্চাত্য ভাববাদী দর্শন ও ভারতীয় দর্শনের এক বিরাট অংশ জুড়ে আছে। প্রাকৃতিক বৈচিত্রের মাঝে বিভিন্ন ধরণের যে সকল প্রকাশ পরিলক্ষিত হয় তা পরম সত্তারই প্রকাশের প্রতীক। প্রেম সৃষ্টির সব কিছুর উৎস ও মূল। পরম সত্তার নিঃসঙ্গ অবস্থায় নিজেকে নিজে ভালোবাসেন। ফলে নিজেকে প্রকাশ করার বাসনা জাগে। তাই সৃষ্টির মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করেন। প্রেমই প্রেমিক ও প্রেমাস্পদ তথা মানবাত্মা ও পরমাত্মার মিলন ঘটায়। প্রেমিক তখন বুঝতে পারে সব কিছুর মূলে এক। আর তিনিই পরমাত্মা, পরম সত্তা বা আল্লাহ নামে অভিহিত। প্রেমিক যখন কোন বিশেষ আকারকে ভালবাসে তখন সে আকারের মধ্যেই আল্লাহর প্রকাশ দেখতে পায়। প্রেমই পরম সৌন্দর্য এবং সৌন্দর্যই প্রেম। প্রেম ইন্দ্রিয়াতীত আধ্যাত্মিক জগতের পরম সৌন্দর্যের কাছে মানুষকে পৌছে দেয়। প্রেম জীবনের ক্ষুদ্রতা, তুচ্ছতা ও সকল সংকীর্ণতার উর্ধ্বে ওঠাতে সক্ষম। প্রেমের আবেগে পরম সৌন্দর্যের সন্ধান পাওয়া যায়। তাতে পরম সৌন্দর্যের সাথে এক মহা মিলন ঘটে। সমগ্র সৃষ্টির মধ্য দিয়ে অনন্ত গতিতে প্রবাহিত এক মহা প্রেরণা ছুটে চলছে পরম উৎসের পানে। প্রেমের অর্থ যে বুঝে সে সৃষ্টির নিগূঢ় তত্ত্ব বুঝে। তার আধ্যাত্মিক দৃষ্টির সামনে প্রকৃত তত্ত্ব উন্মোচিত হয়। প্রেম আত্মার রহস্য যা ব্যক্তিরই অন্তর্নিহিত সত্তার ঐশ্বর্য। সত্যের পরিচয় লাভের জন্য প্রেম এক উপলব্ধি শক্তি সৃষ্টি করে এবং এ শক্তি মানুষকে মহত্ত্ব, মানবত্ত্ব প্রভৃতিগুণে গুণান্বিত করে।

বিশ্ব সাহিত্যে যে কজন মনিষী আছে তাদের মধ্যে কালজয়ী চিরস্মরণীয় মরমী কবি মাওলানা জালালউদ্দিন রুমীর মতে প্রেমই সৃষ্টির আদি কারণ। বিশ্ব তাত্ত্বিক নীতি, গতি শক্তি, জ্ঞানের উৎস এবং পরমাত্মার ও মানবাত্মার মহা মিলনের মূল মন্ত্র। ইবনে সিনা প্রেম তত্ত্বের ব্যাখা প্রদান করে বলেন যে, প্রেমই বিশ্ব তাত্ত্বিক নীতি বা সব কিছুর পরিচালনা শক্তি। এ প্রেম সকল বস্তু ও সত্তাকে পরম সৌন্দর্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। পরম সত্তা অতীন্দ্রিয় জগতের সত্তা ধারণার উৎস পরম ধারণা এবং ‘রস’ বা প্রেম বিশ্বের মূলনীতি। একত্রীকরণ, মিলন, সাদৃশ্যকরণ, উন্নতি সাধন, পুনরুৎপাদন ইত্যাদি প্রেমের বিভিন্ন প্রকাশ বলে প্লেটো উল্লেখ করেন। ইবনে রূশদ তার প্রেম দর্শনে সার্বজনীন ধর্মের কথা বলেন। তিনি বলেন, সকল ধর্ম একই মহাসত্যের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। তিনি ধর্মের দুটি দিক নির্দিষ্ট করেন অভ্যন্তরীণ সত্য বা প্রেমময় দিক ও বাহ্যিকরূপ। প্রেমের অভ্যন্তরীণ দিক হলো ধর্মের প্রাণ। আর বাহ্যিক রূপ হলো তার দেহ। প্রেমের অভাবে ধর্মের বাহ্যরূপ আচার অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। তবে মাওলানা রুমীর মতে খোদায়ী প্রেমই মানুষের শ্রেষ্ঠতম সম্পদ।

প্রেমের ধর্ম হচ্ছে- প্রেমিক- প্রেমাস্পদ পরস্পর পরস্পরকে আত্মস্থ করতে আকুল হওয়া। পরস্পরের মধ্যে আত্মবিলোপে কৃতার্থ হওয়া। এ প্রেম জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার প্রেম। ইঞ্জিলের ‘যোহন’ নামক গ্রন্থের চতুর্থ অধ্যায়ের ৮ নং শ্লোকে বলা আছে- “ঐব ঃযধঃ ষড়াবঃয হড়ঃ শড়হবিঃয হড়ঃ এড়ফ, ভড়ৎ এড়ফ রং ষড়াব অর্থাৎ যে প্রেম করে না সে ঈশ্বরকে জানে না কারণ ঈশ্বরই হচ্ছেন প্রেম।” আর এ প্রেমই পারে মানুষের প্রতি অসাধারণ মমত্ববোধ, অসম্প্রদায়িকতা, অসংকীর্ণতা, উদারতা ও মানবতা গড়তে। উদারতা, প্রসারতা, মানবপ্রেমিকতায় উত্তীর্ণ করার চেষ্টা। জগত ও জীবনের রহস্য উদঘাটনে সচেষ্ট হওয়া এবং প্রেমের মহা মিলনের মাধ্যমে মানব চিত্তকে উদ্বোধিত করে এক বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক প্রচেষ্টায়রত হওয়া। এ জন্যেই মনে হয় মানুষের সমস্ত স্থুল চিন্তাকে উৎখাত করে মানুষের স্বরূপে প্রেমের উৎস সন্ধানে ব্যাপৃত হন।

পরিশেষে বলবো মানুষ যদি মূল উৎস খুঁজে ঐশী প্রেমের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়, তাহলে আজকের বিশ্বে সমস্যাতাড়িত, সন্ত্রাস কবলিত, শতধা বিচ্ছিন্ন মানবজাতি অখন্ড ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে এবং এ পৃথিবী যুদ্ধের আশংকামুক্ত একটি শান্তির নীড়ে পরিণত হতে পারবে। এ সকল দিক বিবেচনা করেই বিশ্বপ্রেমের হাইকুগুলো লেখার ক্ষুদ্র প্রয়াস। এই প্রচেষ্টা কতটুকু সার্থক বিবেচিত হবে সেই বিচারের ভার আপনাদের কাছে রইল। আমার এ প্রেম সর্ম্পকিত তৃতীয় হাইকু কবিতা গ্রন্থটি যদি আপনাদের হৃদয়ে এতটুকু দাগ কাটে তা হলে ধরে নেব আমার প্রচেষ্টা সার্থক বিবেচিত হয়েছে। সবাইকে ধন্যবাদ।

উৎসর্গ


উৎসর্গ
হাঁড়ের শেঁকলে বাঁধা যে অন্তর
দুঃখ-সুখের ¯্রােতে খুঁজে ফিরে নিষ্কন্টক প্রেম...
কূলে আছড়ে পড়ে মরমী আশার ঢেউ...
সে দরদীয়া সহধর্মীনি
শিরিন আক্তারকে....