এখন রাত ২.০০ টা উপজেলা শহরে এই রাতকে গভীর রাত বলা যায় কিনা ঠিক বুঝতে পারছি না, চারিদিকে অনেক অন্ধকার ঝিমঝিম করে বৃষ্টি পড়ছে, যাকে বলে কাক ভেজা বৃষ্টি।  


পৌরসভার রোড লাইটগুলো বিদ্যুৎ না থাকার কারনে আলো দিতে ব্যর্থ । সবাই এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তেমন কোনো শব্দ কোথাও শোনা যাচ্ছে না । ভীতিকর পরিবেশ এরকম পরিবেশে হাটার মজাই আলাদা ।


ভয় মনের অবচেতন স্তরের একটি নির্দিষ্ট বিশেষ মানসিক অবস্থা। ভয় নামক এ অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত নয়, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন।


মানুষ তো বটেই, সমগ্র সৃষ্টিজগতের সব প্রাণির অন্তরেই ভয় নামক এ অনুভূতি রয়েছে। তবে আমার মধ্যেও কিছুটা ভয়ের অনুভূতি হচ্ছে ,আয়াতুল কুরছি মুখস্ত থাকলে ভাল হত কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আয়াতুল কুরসি মুখস্থ নেই ,বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নিতে হবে ।


শুনেছি হাতে আগুন জাতীয় কিছু থাকলে অশুভ কিছু কাছে আসতে পারে না । তাই বিকল্প হিসাবে সিগারেট হতে পারে , আমার কাছে একটা সিগারেট আছে ।


সিগারেট ধরানোর জন্য একটা লাইটার দরকার আশেপাশে কোন দোকান খোলা দেখতে পাচ্ছি না । মনে হয় অনেকদূর হাঁটতে হবে, ঠিক এই সময়  লক্ষ্য করলাম  একটি গাড়ি আমার পাশে এসে থামল , প্রথমে কিছু বুঝতে পারিনি পরে বুঝতে পারলাম এটি স্থানীয় থানার একটি পুলিশ ভ্যান ।


পুলিশ ভ্যান থেকে একজন গম্ভীর ধরণের পুলিশ আমার দিকে এগিয়ে আসছে ,আমার সামনে এসে বলল এত রাতে আপনি এখানে কি করেন ,আমি বললাম স্যার ভূত দেখার চেষ্টা করছি , কাক ভেজা বৃষ্টির দিনে নাকি ভূতের দেখা পাওয়া যায় তাই একটু চেষ্টা করা  ।


পুলিশ গম্ভীর মুখ করে বললেন : এখন পর্যন্ত কয়টা ভুত দেখলেন , আমি বললাম স্যার ভূত দেখার সৌভাগ্য এখনো হয়নি তবে ইনশাল্লাহ দেখব। পুলিশটি গম্ভীর মুখ করে বললেন ,হাতে দেখছেন এটা কি এটা দিয়ে একটা বারি দিলে সব পাগলামি দূর হয়ে যাবে ।


বুঝতে পারলাম বেশি কিছু বলা যাবে না বললে সমস্যা হবে,স্যার লাইটার হবে একটা সিগারেট ধরাবো , ভুরু কুঁচকে পুলিশটি গম্ভীর ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কি করবে ঠিক বুঝতে পারছে না ।


বাড়ি ফেরার ইচ্ছা আপাতত নেই , কোথায় যাবো বুঝতে পারতেছি না । মেয়ে জাতি নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত কারণ এই মেয়ে জাতির জন্য পৃথিবীর সৃষ্টি ।


আল্লাহ পৃথিবীতে আদম (আঃ) কে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন নিষিদ্ধ ফল খাবার অপরাধে ,তাছাড়া এই মেয়ে জাতির জন্য একটি টয় নগরী ধ্বংস হয়েছিল । এখন প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে বিড়াল কুকুর বৃষ্টি ,এরকম বৃষ্টিতে কোথায় যাবো বুঝতে পারছি না। তারপরও জীবনানন্দ দাশের মতো হাটা শুরু করলাম "হাজার বছর ধ’রে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে " গন্তব্য কোথায় জানি না ।


বউয়ের সঙ্গে মনে হয় এত রাগ করে ঠিক হয়নি , রাগ আস্তে আস্তে কমতে শুরু করছে কিন্তু অনেক দূর চলে এসেছি , প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে বাড়ি ফেরা মনে হয় সম্বব নয় ,অনেক রাত হয়েছে অসম্ভব খিদে পেয়েছে ,আসে পাশে কোন দোকান খোলা নেই ।


সামনে একটি দোকানের আলো দেখা যাচ্ছে দূর থেকে ,কিছু বুঝা যাচ্ছে না ,কাছে যেয়ে দেখতে হবে । কাছে যেয়ে যা দেখলাম তা দেখে অবাগ হলাম ,দোকান বন্ধ কিন্তু দোকানের সামনে রূপবতী একটি মেয়ে বসে আছে


দোকান বন্ধ কিন্তু দোকানের সামনে রূপবতী একটি মেয়ে বসে আছে, পৃথিবীতে এত রূপবতী মেয়ে আছে বলে আমার মনে হয় না , দোকানের সামনে কোন আলো নেই কিন্তু তারপরও আলোকিত মনে হচ্ছে ,আমার বিষয় মনোবিজ্ঞান হওয়ায় আমি ভুতকে বিশ্বাস করি না তবে হ্যা পৃথিবীতে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যার ব্যাখ্যা মনোবিজ্ঞানীরাও দিতে পারে না ।


আমার একটু ভয় ভয় লাগছে তারপরও সাহস নিয়ে মেয়েটির কাছে যেতে লাগলাম । ভাবতে লাগলাম পৃথিবীতে ভূত বলতে কিছু না থাকলেও জিন আছে । পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি জিন ও মানুষকে কেবলমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা আজ-জারিয়াত, আয়াত : ৫৬) ।


বয়বৃদ্ধদের মুখে শুনেছি আগে বিভিন্ন লোককে পরীরা নিয়ে যেত পরিস্থানে সেখানে কিছু দিন রেখে আবার বাড়িতে ফেরত পাঠাত ।


এই পরি নিয়ে কৌতুহল আমার মাথা থেকে যাচ্ছে না । ভয় ভয় লাগছে শুনেছি ভয় পেলে কোরআন শরীফের সূরা আল বাকারা ২৫৫ তম আয়াত পড়তে হয় আয়াতটি মনে পড়ছে না ,


আমার বউ জানে ,সে মাঝে মাঝে ঘুমানোর আগে আয়াতটি পরে আমার দুই কানে ফু দিয়ে দেয় তাতে নাকি অনেক ফজিলত , এবার মনে পড়েছে আয়াতটি হচ্ছে আয়াতুল কুরসী ,আমার মুখস্ত নেই মুখস্ত থাকলে ভাল হত ,ভয় কাটানোর একটা ব্যবস্থা হতো ।


বুকে সাহস নিয়ে রূপবতী মেয়েটির দিকে এগুতে থাকলাম । আমি মেয়েটির কাছে ভয়ে ভয়ে যেয়ে বললাম কেমন আছেন ,মেয়েটি বলল ভাল ,ভাল শব্ধটি স্পষ্ট শুনলাম কিন্তু তার কোন ঠোঁট নড়ল না ,বিষয়টি বুঝলাম না মেয়েটি ঠোঁট না নাড়িয়ে কিভাবে কথা বলেছে , তার চোঁখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারছি না, ভয় করতে লাগলো ।


মেয়েটি বলতে লাগলো ভয়ের কিছু নেই আমি আপনার মস্তিষ্কে ঢুকে কথা বলছি ,আমি এই পৃথিবীর কেউ নই ,এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি থেকে এসেছি , আর একটি পৃথিবী থেকে ,আমি বললাম ও আচ্ছা , আমি বিশ্বাস করতে শুরু করেছি কারণ একটি আয়াতে রয়েছে, “তিনি আল্লাহ যিনি সপ্ত আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং সমসংখ্যক (৭টি) পৃথিবীও সৃষ্টি করেছেন।” ( তালাক্বঃ ১২ )......