১ম পর্ব


.................................


জলঢাকা একটি উপজেলা শহর , এই শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট একটি নদী নাম তার আওলিয়াখানা । এই আওলিয়াখানা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে একটি ছোট উপজেলা শহর জলঢাকা । জলঢাকা নামের পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে । তবে আমি সঠিক কারণটি জানার চেষ্টা করেছি ।
সেটা হলো ভারতের কুচবিহারের জলঢাকা নামে একটি নদী ভুটান থেকে উৎপন্ন হয়ে এ উপজেলায় এসে তিস্তা নদীর মূল স্রোতধারায় বাহিত হত বলে নদীর নামে এ স্থানের নাম হয় জলঢাকা। আবার অনেকে মনে করেন স্থানটিতে তিস্তা ও করতোয়া নদীর মিলিত স্রোত প্রবাহিত ছিল। জলে ঢাকা ছিল বলে নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করলে জেগে উঠা স্থানটির নাম হয় জলঢাকা।


যে কারণেই নামকরণ হোক এটি আমার জন্মভূমি। এই জন্মভূমিকে শহর বলা উচিত হলো কিনা আমি জানি না । এই শহরে অনেক নামিদামি লোক বাস করে ,আমি তাদের মতো না ,আমি সাধারন ঘরের একটি রীতিমত বেকার ছেলে ।


পকেটে সবসময় তেমন টাকা পয়সা থাকে না ,কিছু কাছের বন্ধু আছে  তারা বিভিন্ন সময় ধার দেয় তা দিয়ে চলি ,বন্ধুরা জানে কোন একদিন ফিরত পাব ,এই আশায় ধার দেয়।


আমার কাছ হচ্ছে দিনে ঘুমানো আর রাত জেগে জলঢাকার বিভিন্ন গোল চত্বরে ঘুরে বেড়ানো । জলঢাকার রাত আমার কাছে অসম্ভব ভাল  লাগে ।


এই রকম একটি গোল চত্বর হচ্ছে উপজেলা পরিষদ এর সামনে । ওখানে বসে আড্ডা দিতে খুব ভাল লাগে ,এই ভাল লাগাটা সহজে বুঝানো সম্ভব না । এত রাতে এই গোল চত্বরে
একটি দোকানও খোলা পেলাম না ,পকেটে কিছু টাকা আছে এক বন্ধুর কাছ থেকে ধার নিয়েছি ।


একটা সিগারেট খেতে হবে কিন্তু আসে পাশে কোনো দোকান খোলা নেই ,তাই কি আর করা  ঠিক
করলাম জীবনান্দ দাশের কবিতার মতো একটি হাটা দেই ,হাজার বছর ধরে আমি পথ
হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে, গন্তব্য জলঢাকার জিরো পয়েন্ট উদ্দেশ্য একটি সিগারেট
খাওয়া ।


কবিরা যে ,কিসব লিখে বুঝি না হাজার বছর ধরে কেউ কি হাটে। এই সময় যদি
জীবনান্দ দাশ বেঁচে থাকতো তাহলে মনে হয় লিখতো হাজার বছর ধরে রাজনীতি করি,কিন্তু নেতা হতে পারি না ।


এলোমেলো চিন্তা করতে করতে কখন যে জিরো পয়েন্টে এসে গেছি বুঝতে পারিনি । মনে মনে চিন্তা করলাম সিগারেটের কি নেশা একটা সিগারেট
খাওয়ার জন্য এতটা পথ আসলাম ..........চলবে



.…...................................................................


২য় পর্ব ....


এলোমেলো চিন্তা করতে করতে কখন যে জিরো পয়েন্টে এসে গেছি বুঝতে পারিনি । মনে মনে চিন্তা করলাম সিগারেটের কি নেশা একটা সিগারেট খাওয়ার জন্য এতটা পথ আসলাম।


আমি সিগারেট ছাড়তে চাই কিন্তু সিগারেট আমাকে ছাড়ে না । যথারীতি সিগারেটের দোকান খুঁজতে লাগলাম ,তখন রাত প্রায় ২ টা এই সময় জিরো পয়েন্টে তেমন
কোন দোকান খোলা থাকে না ।


কিন্তু সিগারেট তো খেতে হবে, তাই সিন্ধান্ত নিলাম আর
একটা জীবনান্দ দাশের হাটা দিয়ে তেলের পাম্প এর দিকে যাই ,সেখানে সারারাত দোকান
খোলা থাকে ।


হাটতে হাটতে  তেলের পাম্প চলে আসলাম ,এখানে অনেক দোকানদার আমার পরিচিত ।আমার এক অতি পরিচিত দোকানদার নাম আপেল মিয়া তাকে বললাম কেমন আছেন সে হাসি মুখ করে বললো ভাইজান ভাল আছি ,বুঝছি আপনি সিগারেট খেতে আসছেন এই নেন সিগারেট ।


আপেলের Intuition Power আছে বলা যায় । আপেলের Intuition Power টা একবার পরীক্ষা করা প্রয়োজন ,আমি সিগারেট টানতে টানতে পকেট থেকে একটা কার্ড
বাহির কিরে আপেলকে বললাম আপেল মিয়া এই কার্ডে কি চিহ্ন আছে বলতে পারবেন ,আপেল মিয়া হাসতে হাসতে বললো একটা যোগ চিহ্ন !


আমি কিছু বললাম না । আমার আবার মানুষের
Intuition Power পরীক্ষা করার অভ্যাস আছে আমি মাঝে মাঝে এই পরীক্ষাটি বিভিন্ন মানুষের উপর চালাই । তবে আপেল মিয়ার Intuition Power অসম্ভব ভাল ,আমার পকেটে চারটা কার্ড ছিল, যার মধ্যে যোগ,বিয়োগ,গুন ও ত্রিভুজ চিহ্ন ছিল আপেল মিয়া সঠিক
কার্ডের সঠিক চিহ্নটি বলতে পেরেছিল কিন্তু আমি আপেল মিয়াকে বুঝতে দেইনি ।


পৃথিবীতে খুব কম সংখক মানুষের Intuition Power থাকে তার মধ্যে আপেল মিয়া একজন ।


গত কয়েক দিন থেকে জলঢাকায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে খুব আলোচনা চলছে ,অনেকে নাকি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছে । অনেকে কানাঘষা করছে এসব সনদ নাকি বাতিল হবে।


আমি এই সব বিষয় নিয়ে কর্ণপাত করি না তারপরও কৌতুহল হলো ,একবার আপেল মিয়াকে জিজ্ঞাসা
করি এদের  ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ভবিষ্যৎ কি । তাদের সনদ কি বাতিল হবে ?


সিগারেট খাওয়া আমার শেষ হয়েছে, তাই আপেল মিয়াকে বললাম আর একটা সিগারেট দেন ,আপেল মিয়া সিগারেট দিল।


আমি আবার সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললাম
আপেল মিয়া  জলঢাকার লোকজন যে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আলোচনা করছে তাদের ভবিষ্যৎ কি?


আপেল মিয়া বললো ভাইজান এরা সবাই এক সময় বাতিল হয়ে যাবে ।আমি তাকে কিছু না বলে আবার হাটা
শুরু করলাম এবার আমার গন্তব্য নীলসাগর এর ব্রীজ সেখানে বসে আকাশ দেখবো ................চলবে ।



৩য় পর্ব
...........................................................


এবার আমার গন্তব্য নীলসাগর এর ব্রীজ সেখানে বসে আকাশ দেখবো । কিছুক্ষন হাঁটার
পর নীলসাগর এর ব্রীজে এসে পড়লাম। নীলসাগর একটি কৃত্রিম নদী দেশ স্বাধীন হওয়ার
পর ১৯৭৯ সালে তিস্তা ব্যারেজ নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং ১৯৮৫ সালে সৌদি
উন্নয়ন তহবিল ও ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং আবুধাবি উন্নয়ন তহবিলের
প্রায় ২,৫০০কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা ব্যারেজসহ সেচ যোগ্য কৃষিজমি ও জলকাঠামো
নির্মাণ শুরু হয়। ১৯৯০ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় এবং একই বছর ৫ আগস্ট এর
কার্যক্রম চালু হয়। এর মোট নির্মাণ ব্যয়ছিল ১৫শ কোটি।এ প্রকল্পটি নীলফামারী,
রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ৫ লক্ষ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করে।


যে এই প্রকল্পটির পরিকল্পনাকারী সে সত্যিকার অর্থে একজন মেধাবী ও মহৎ মানুষ ।
জলঢাকার মানুষ অনেক অভাবী ছিল এই প্রকল্পের ফলে জলঢাকায় তেমন একটা আর অভাব দেখা যায় না ।


রাত এখন অনেক হয়েছে আসে পাশে কোন শব্দ নেই ,তাই নিরিবিলি আকাশ দেখার মজাই
আলাদা।


আকাশ আজকে অন্য সব দিনের চেয়ে বেশি পরিস্কার, আকাশে অসংখ নক্ষত্র দেখা যাচ্ছে । আমাদের সকলকেই সৃষ্টির রহস্য নিয়ে ভাবা উচিত ,তাহলে আমাদের মধ্যে যে
লোভ,হিংসা,অহংকার মানুষের এই সহজাত প্রবৃত্তিগুলো কিছুটা হলেও কমে যেত।


ভাবতে শুরু করলাম মহাজাগতিক ঘর্ষণ বা বিগ ব্যাং ঠিক কত বছর আগে হয়েছিল, অর্থাৎ
মহাবিশ্বের সৃষ্টি ঠিক কত কোটি বছর আগে হয়েছিল । ভাবতে ভাবতে চোখ পড়লো
সপ্তর্ষিমন্ডল এর দিকে সপ্তর্ষিমন্ডল দেখতে প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতো ,ইংরেজি
ursa major বা Great Bear।  দ্বিতীয় শতকের জ্যেতির্বিদ টলেমি কর্তৃক প্রনীত
৪৮টি তারামন্ডলের একটি।  সাতটি তারার সমন্বয়ে গঠিত নক্ষত্রপুঞ্জ ।


উত্তরগোলার্ধ থেকে সারা বছরই এই তারামন্ডলীকে দেখা যায়। উপমাহাদেশের
জ্যোতির্বিদগণ সাত জন ঋষির নামে এই সাতটি তারার নাম করণ করেন তাই এই
নক্ষত্রপুঞ্জ সপ্তর্ষিমন্ডল নামে পরিচিত হয়। সাতটি ঋষির নাম:ক্রতু , পুলহ ,
পুলস্ত্য ,অত্রি ,অঙ্গিরা , বশিষ্ঠ, ও মরীচি ।


ভাবতে অবাগ লাগে একটি নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে কিছু উপগ্রহ ঘুরছে ,সূর্য একটি
নক্ষত্র এরকম অসংখ্য নক্ষত্রব্যবস্থা নিয়ে গঠিত হয় একটি ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি।


আর মহাকাশে অসংখ্য ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি আছে আমরা যে গ্যালাক্সিতে বাস করি তার
নাম Milky way বা আকাশগঙ্গা অথচ বিজ্ঞান এখনো সৌরজগত নিয়ে পরে আছে ।


এইসব চিন্তা করতে করতে হঠাৎ একটা লাঠির শব্দের আওয়াজ শুনলাম ,তাকিয়ে দেখি একটি
পুলিশ ভ্যান সহ কয়েকজন পুলিশ ।একজন পুলিশ আমার সামনে এগিয়ে এসে বললো এই ব্যাটা
এত রাতে এখানে কি করিস ,পুলিশের আবার একটা স্বভাব হল সবাইকে তুই তুই করে কথা
বলা ।


আমি বললাম রাতের আকাশ দেখি ,ফাজলামী হচ্ছে রাতের আকাশ দেখা না এখানে বসে
ছিনতাই করার পরিকল্পনা হচ্ছে ,তুই জানিস দুই দিন আগে এখান থেকে দুইটা
মোটরসাইকেল ছিনতাই হয়ে গেছে ,আমি বললাম জি না স্যার আমি জানি না ,পুলিশ বললো
জানিস না থানায় চল জানতে পারবি এই বলে আমার গালে একটা থাপ্পড় মারলো ,আমি কিছু
বললাম না ।


আমাকে টানতে টানতে পুলিশ ভ্যান এর কাছে নিয়ে যেয়ে আর একজন পুলিশকে
বলল স্যার একজন ছিনতাইকারী ধরেছি,ব্যাটাকে একটা থাপ্পড়ও দিয়েছি , ভালো করেছি
না স্যার ,যে পুলিশটিকে স্যার বলছে সে মনে হয় এসআই পদবির হবে ,আমাকে পুলিশ
ভ্যানে উঠানো হলো ,আমি একজন পুলিশকে বললাম স্যার একটা সিগারেট হবে ,সিগারেট এর
নেশা উঠেছে একটা সিগারেট পান করতাম,  আমার কাছে কোন সিগারেট নেই তো একটা যদি
ধার দেন তাহলে পরে ফিরত দিব,ভুরু কুঁচকে পুলিশ বলল ব্যাটা আগে থানায় চল কতগুলো
সিগারেট খাবি তখন খাস ।


আমাদের বাঙ্গালীদের ভাষাগত একটা সম্যসা তা হলো চা
,পানি, সিগারেট খাই বলি ,আসলে বলা উচিত পান করি ,অন্য ভাষাতে এরকম কোন ভুল নেই
।আপেল মিয়ার কথা খুব মনে পড়ছে ,ওকে যদি বলতাম আপেল মিয়া আজকে আমার কোন বিপদে
পড়ার সম্ভবনা আছে কি না ,তখন হয়তো সে কিছু একটা বলে দিত।


আমাকে জলঢাকা থানায় নিয়ে আসা হলো ,তখন অনেক রাত থানার একটা ঘরের কোনে বসে আছি ,এই ঘরে আর একজনকে
দেখতে পাচ্ছি শুয়ে আছে।ঘরের মধ্যে মশা রাজত্ব করছে ,ভাবছি ছোট একটা প্রানী
কিভাবে মানুষের রাতের ঘুম হারাম করে দেয় ।শুয়ে থাকা লোকটা এখন উঠে বসলো আর
আমার দিকে তাকিয়ে বললো ভাইজান কি চুরি করেছেন ,এখনো আপনাকে জামাই আদর করেনি
,আমি কিছু না বলে লোকটাকে বললাম একটা সিগারেট হবে ......চলবে ।