উবে গেছে প্রত্নমূল্য, আগ্রাফোর্টে প্রাণ পেলো বিরান নাচঘর
আনারকলিকে কারা সাজিয়েছে বহুযত্নে এতদিন পর!
পর্যটক এই আমি সমাবিষ্ট শাহজাদা সেলিমের বেশে,
পাশে নেই আলম্পনা, অন্যরাও ব্যস্ত ঝুঝি কর্মব্যপদেশে।
অথবা আমিই নিজে ইচ্ছে করে তাড়িয়েছি অন্যসব চোখ,
আজ তাকে একা চাই, তবে কিনা থাক কিছু বাদনের লোক:
সারেঙ্গী-সেতারে-ঢোলে খোলে ভালো নূপুরের সুমিষ্ট ঝঙ্কার,
নিজনিজ যন্ত্র নিয়ে মগ্ন ওরা, নৃত্য দেখে সাধ্যি আছে কার?।


বার থেকে সদ্যফেরা রক্তে ছিলো তরলের অবশিষ্ট ঘোর,
আনারকলিও নিজে সাগ্রহে বাড়িয়ে দিলো তার বাহুডোর!  
প্রেম নয় নিষ্কলুষ, মূলে আছে লিবিডোর গূঢ় রসায়ন,
নাচে দেখি উরু-নাভি, প্রস্ফুটিত নর্তকীর আধ-খোলা স্তন!
যে দেখে না মিথ্যে বলে, ধর্মের যাজক থেকে শ্বেতশুভ্র নান
প্রতিটি মানুষ কোনো অনিবার্য মিলনের প্রকৃষ্ট প্রমাণ।


জ্বী, আমি সেলিম বলছি বহুগামী পুরুষের যোগ্য বংশধর,
আমারও দেহের কোষে সগৌরবে বহমান আরেক আকবর?
গোস্তাকি করুন মাফ, জাঁহাপনা, মহামতি মুঘল-ই-আযম,
নন্দিত প্রেমিক হয়ে আপনিই কীকরে হন প্রেমিকের যম ?
পত্নী-উপপত্নীভরা অবিভাজ্য হেরেমের ওয়ারিশান আমি
কী এমন ক্ষতি হবে হই যদি আরো এক সুন্দরীর স্বামী?


... ... ...


অথবা সেলিম নই, ধরো আমি মধ্যবিত্ত নব্য শাহজাদা,
তোমাকে ছুঁয়েছি আজ, ধন্যবাদ প্রিয়তমা, দাও নাই বাধা!
লোকে বলে বাউণ্ডুলে, ভ্রমণপিপাসু এক বাঙালি প্রেমিক
তোমাকে একান্তে চেয়ে পেয়ে গেছি, হোক ছোঁয়া পরাবাস্তবিক।
ফুটন্ত যৌবন যার টসটসে পারসিয়ান আনারের দানা
সেলিম ছাড়াও যারা আগেভাগে লুটে খেলো তারা কি বেগানা?
অবশ্য যুক্তির কথা তর্কের খাতিরে সে তো মানতেই হয়:
মন ছাড়া দেহ দিলে তাকে কেউ কোনোকালে ভালোবাসা কয়!
নারীর মনের চেয়ে মাননীয় অন্য কোনো নীতিশাস্ত্র নাই:
আয়ান মন্ত্রের স্বামী, রাধিকার শুদ্ধ পতি ব্রজের কানাই।
সবাই নায়ক তবে খল না যথার্থ জানে কেবল নায়িকা;
হৃদয় মানে না কোনো ‘সোনালি কাবিন’ কিবা কেতাবের ফিকা।


... ... ...


পশ্চিমে তাকিয়ে দেখি বেলে লাল পাথরের সূর্য হচ্ছে গাঢ়--
আনারকলিকে বলি: এবার কবরে যাও, কথা হবে আরো !
আবারও আসবো ’খন, হয়তো সহসা নয়, অন্য কোনোদিন,
কালের কামড়ে যদি নাহয় বিলীন এই হেরেমের চিন।