চলে যাবে বলে কাঁদতে বসিনি. সয়ে গেছে পেরেশানি,
আমি তো প্রতিটি ব্যর্থতাকেও শিক্ষক বলে মানি।
শিখেছি অমোঘ অমৃত বাণী: আলোতে আলোক ম্লান,
আঁধার ছাড়া তো আলোর কণিকা হয় না দৃশমান!
যে দীপ জেলেছো অবচেতনের গহন অন্ধকারে,
তাকেই কখনো উসকিয়ে দেখি প্রয়োজনে বারে বারে।
চেতন-মনের প্রাচীর ডিঙিয়ে দেখেছি ওপারে গেলে
তোমার যোগ্য মণি ও মুক্তো, হীরে-জহরত মেলে;
বসত গড়িনি ‘সুতোর ওপারে’ ক’রে কোনো পাগলামি,
দু’পারের গাঢ় সেতু-বন্ধনে ছিলাম কি দূরগামী?


এসেছো পয়ারে, মাত্রাবৃত্তে, স্বরমাত্রিকে সেজে,
ছুটেছো দীপ্ত হনুমান যেন আগুন লেগেছে লেজে।
কখনো গিয়েছো গাঢ় শীতঘুমে সরীসৃপের প্রায়,
তুষারে যেমন কাঠবিড়ালিও কোটরে লেজ লুকায়।
তখনও সুপ্ত আগুনের মতো ছাইচাপা লাল মুখ
দেখিয়েছো তুমি--আমার মতো কি তুমি ছিলে উৎসুক:
অবগুণ্ঠিত থাকার বেদনা তোমাকেও পু’ড়ে মারে?
মনোমোহিনীরা নিজেরাও প্রীত জলসায়-দরবারে!
তোমার-আমার প্রীতি-বন্ধনে উভয়ের লাভ-ক্ষতি
ভেবে কি আবার ফিরে-ফিরে এসে আমাকে দিয়েছো গতি?


চেতানা-প্রসারী চিত্রকল্পে প্রতীকে ও উপমায়
তোমাকে দেখেছি পাষানে খোদিত প্রত্ননারীর প্রায়।
হাতুরি-ছেনির যুগল-প্রয়াসে পাথরেও জাগে প্রাণ,
শব্দে-ছন্দে তোমাকে জাগাতে আমিও ধরেছি তান।
একালের শত এলো-পদাবলি রচয়িতাদের ভিড়ে
ব্যাকুল কণ্ঠে কিছুটা ডেকেছি স্বনামে শাশ্বতীরে:
মহাজনদের সাজানো বাগানে ভেঙেছিও ডালপালা:
কেউ দে’খে খুশি, কেউ-কেউ খুব করেছেও মুখ কালা।
সিন্ডিকেটেড কাকেদের ভিড়ে মুনিয়ারা আজও গায়,            
কোমর বেঁধেই সৃজনের মাঠে আছি সেই ভরসায়।
‘কা কা’ তত্ত্বের ফাঁকাবুলি শুনে উড়িয়েছি ফুৎকারে,
বয়স বেড়েছে, পচন ধরেনি মেরুদণ্ডের হাড়ে।


তুমি চলে যাবে, আজ হোক কাল আমাকেও যেতে হবে,
জানি না আমার খেরোখাতাটার কতটুকু বেঁচে র’বে!
মহাকাল যিনি হা-ক’রে আছেন খাবেন কি তার সব,
কনুই-খেলাতে এলো-পদাবলি করে যাবে কলরব?
তোমার-আমার উড়ালচিহ্ন যদি কিছু থেকে যায়
মেকিপণ্যের শ্রীতত্ত্ববিদ ম’রে যাবে লজ্জায়!
তোমার কাছেই রইলো এ-ভার: সবাইকে বলে দিও
কতটুকু এর ছিলো নগণ্য, কতটুকু বরণীয়।