জানি তুমি যাওনি কখনো জয়নুলের স্কুলে;
শৈশবে খেলার ছলে লাল রঙ গুলে
অথবা উনুন থেকে তুলে-নেয়া কয়লাকে বানিয়ে চক
হয়তো এঁকেছো কোনো কানাবক,
আবার ফেলেছো মুছে কচিহাতে। বনগ্রাম রোডের দেয়ালে
দলবদ্ধ সঙ্গীদের সাথে কিংবা একা আপন খেয়ালে
রেখেছো কি রাখো নাই স্বেচ্ছাচারী শিল্পের স্বাক্ষর
নিজস্ব সংবাদদাতা এ-বিষয়ে লেখেনি খবর।


যতদূর জানা যায়
যৌবনেও কোনোদিন যাওনি কোনো শিল্পশালায়
একলা অথবা প্রিয় পুত্রকন্যা প্রেয়সীর হাত ধ'রে
প্রদর্শনী থেকে কিনে কোনো ছবি টানিয়েছো ঘরে?
পিকাসো কি ভ্যানগগের নাম
কোনোদিন শুনেছো কি, ছিলো কোনো ব্যক্তিগত ছবির অ্যালবাম?
রঁদা ও হেনরী মূর
তোমার চৈতন্য থেকে আছেন সুদূর,
অথচ হে নূর হোসেন, তোমার তুলনা কোনো জাদুঘরে নেই!
তুমি বাঙালির অমর ভাস্কর নাকি ভাস্কর্য নিজেই!


[ঢাকার বনগ্রাম রোড-নিবাসী এক দরিদ্র স্কুটার-চালক পিতার সন্তান, স্বল্প-শিক্ষিত নূর হোসেন ঢাকার রাজপথে পুলিশের গুলিতে নিহত হন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় তিনি ছিলেন একটি মিছিলের অগ্রভাগে। তাঁর অনাবৃত বুকে-পিঠে লেখা ছিলো "স্বৈরাচার নিপাত যাক/গণতন্ত্র মুক্তি পাক" এই স্লোগানটি। যেন প্রতিবাদের জীবন্ত রূপ তিনি, যেন এক জীবন্ত পোস্টার। স্মরণাতীতকালের শত রাজনৈতিক প্রতিবাদ আর হাজারো শহীদের মাঝখানেও নূর হোসেন এই শিল্পিত প্রতিবাদের জন্য হয়ে উঠেছেন অনন্য। নূর হোসেনের রক্তে-ভেজা লাল কারুকাজমণ্ডিত এই স্লোগান আমাদের চেতনার পরাবাস্তবে এক মহান শিল্পকর্ম, আর নূর হোসেন গণতন্ত্রের অমর ভাস্কর এবং ভাস্কর্য দুই-ই।]