আমার সীমাবদ্ধ জ্ঞানে,আমার কথার সপক্ষে হয়তো কোন শক্ত যুক্তি দাঁড় করতে পারব না।তবে সাহিত্যের একজন ছাত্র হিসাবে আমার বার বার মনে হয়েছে এবং আমি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি,কবিতা কখনোই বিশ্লেষণের বিষয় নয়।কবিতা সব সময় উপলব্ধির বিষয়।


এবার আসি কবি-র বিষয়ে।কবি জীবনানন্দ দাশ তো স্পষ্ট করে বলেই দিয়েছেন,
"সকলেই কবি নয়,কেউ কেউ কবি।" অর্থাৎ কবিতা লিখলেই কবি হওয়া যায় না।কবিকে কবি হতে হয়।কবিত্ব শক্তিকে অর্জন করতে হয়।


এক সময় কবি শব্দের অর্থই ছিল--জ্ঞানী।অর্থাৎ জ্ঞানী মানুষকে কবি বলা হতো।পরবর্তীতে কবি শব্দের বিকৃতি ঘটানো হলো।আমাদের সমাজে লম্বা চুল,এলোমেলো দাঁড়ি, আঁতলামো মার্কা কথাবার্তা যে ব্যক্তি বলেন,তাকে কবি বলা হতো।কবি হতে গেলে নেশা অর্থাৎ মাদক দ্রব্য সেবন করতে হবে।লম্বা পায়জামা পাঞ্জাবি পরিহিত হয়ে কাঁধে একটা শান্তিপুরী ব্যাগ ঝুলিয়ে,চোখে মোটা লেন্সের চশমা পড়ে কবিকে পথ চলতে হবে।এসব কথা কি ঠিক?
নিশ্চয়ই ঠিক নয়।  
তবে নানা কারণে কিছু মানুষের বদ্ধমূল ধারণা হয়েছে যে,কবি হতে গেলে এমনই হতে হয়!
কবিতার কবিতা হয়ে ওঠা। কবি-র কবিত্ব শক্তি।দুটোই কিন্তু অনেক সাধনার বিষয়।কবিতার সৃষ্টি রহস্য বহুকাল ধরে  অনেক রহস্যময়!আসলে যে কোন সৃষ্টিই তো একটি  কষ্ট সাধ্য বিষয়।তবে সৃষ্টিশীলতার সর্বক্ষেত্রেই একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, জনপ্রিয় হওয়া এক বিষয় আর কালোত্তীর্ণ কিংবা মানোত্তীর্ণ হওয়া ভিন্ন বিষয়।কোন কবি কি আজ পর্যন্ত নিজেকে বলতে পেরেছেন,তিনি কালোত্তীর্ণ কিংবা মানোত্তীর্ণ?

বিধিতার সৃষ্টি যেমন রহস্যময়,তেমনি ভাবে যে কোন সৃষ্টিই সব সময় রহস্যময়!অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে,কোন কবি একটি মাত্র শব্দ  দিয়েই একটি মহৎ কবিতা সৃষ্টি করে ফেলেছেন!


পক্ষান্তরে বলা যায়--- শক্তি চট্টোপাধ্যায়,শামসুর রাহমান,নির্মলেন্দু গুণ কিংবা আবুল হাসানের কবি হয়ে ওঠা তো একদিনের বিষয় ছিল না।বহুকালের,বহুরাত্রির,বহুদহনের ফসল তাঁরা...।
এ কারণে তাদের সৃষ্টিগুলো মহোত্তম সৃষ্টির মর্যাদা পেয়েছে।তাঁরা প্রকৃত কবি।


অপর দিকে চলচ্চিত্রের নায়ক ওমর সানি,নায়িকা মৌসুমীর  হঠাৎ ঔপন্যাসিক হয়ে ওঠা কিংবা হিরো আলম কর্তৃক বই প্রকাশিত হওয়া মোটেই দোষের কিছু নয়।তবে বর্তমানে সময়ে একজন প্রতিষ্ঠিত কবির  কবিতার বই এক এডিশনে পাঁচ হাজার কপি প্রকাশিত না হওয়াটাই ভীষণ দুঃখজনক।


বস্ততঃ এই যান্ত্রিক সময়ে,আমাদের বহুমাত্রিক সমস্যার জীবনে আমাদের পাঠ্য সিলেবাসের বাইরে,পাঠকের কবিতা পাঠের সময় কোথায়?
তাই বলে কি কোন কবি তার কবিতার সৃষ্টি বন্ধ রেখেছেন?থেমে কি আছে?...
সৃষ্টি তো থেমে নেই।সৃষ্টি তো চলছে।


আজকের আলোচনাটিকে আমি আর দীর্ঘ করতে চাচ্ছি না।রুঢ় বাস্তবতা হচ্ছে,আমাদের সমাজে দিন দিন পাঠকের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।পাঠক না থাকলে সৃষ্টির মূল্য কোথায়?


প্রকৃত পক্ষে শিল্প-সাহিত্যের এই বন্ধ্যা সময়ে মূলত কবি-রাই কবিতার পাঠক!


আমাদেরকে এখান থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে।
-------
----
২০;০৯;২২