আগে যা হয়েছেঃ খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীর একজন অন্যতম ভারতীয় জ্যোতির্বিদ ও গণিতজ্ঞ ভাস্করাচার্য গণনা করে জানতে পারলেন তাঁর একমাত্র কন্যা লীলাবতীর বিয়ে দিলে সে অতি অল্পকালের মধ্যে পতিহারা হবে কিন্তু আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ভাস্করাচার্য বিধির নিয়ম খণ্ডন করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন এবং গভীর গবেষণার ফল স্বরূপ আবিষ্কার করলেন বিধির বিধান খন্ডনের এক অভিনব উপায়। লীলাবতীর ইচ্ছে হল তিনি যন্ত্রটি সচক্ষে দেখবেন। আচমকাই বিনামেঘে বজ্রপাত। এরপর.....................  


                        দৈবলগ্ন: দ্বাদশ কিস্তি  
                        ~~~~~~~~~~

লীলাবতীঃ (ক্রন্দন মুখর) পিতা, পিতা, আমি সর্বনাশ করিয়া ফেলিয়াছি! (লীলাবতী প্রবলবেগে রোরুদ্যমানা)


ভাস্করাচার্যঃ কি! কি!


লীলাবতীঃ (কিয়ৎকাল পর) আমি বহুপুর্ব হইতেই আপনার গবেষণাগারে। আমি অধিক কৌতূহলবশতঃ আরো সুউপায়ে নিরীক্ষন করিবার নিমিত্ত সামান্য ঝুঁকিয়াছিলাম। সহসা আমার শিরোভূষণ থেকে একটুকরো মুক্তা খসিয়া আপনার পাত্রটির ছিদ্র বন্ধ করিয়া দিয়াছে (ক্রন্দন)।


[ভাস্করাচার্যের যেন মস্তকোপরি বজ্রপাত ঘটিল! সমস্ত পৃথিবী সহসাই লয় হইয়া যাইতেছে! সমগ্র গগনতল ভাঙ্গিয়া পড়িতেছে বোধ হইল। অযুত আগ্নেয়গিরী চক্ষু-অন্ধ করা আলোর ন্যায় ভলকে ভলকে লাভা উদ্গীরন করিতে থাকিল। ধুমকেতুর ঝলক যেন মস্তক এফোঁড় ওফোঁড় করিয়া দিতেছে ভীমরনে রণমত্ত হস্তিনীর ন্যায়। যেন সূর্যকে রাহু গ্রাস করিল। আচম্বিতে শ্বশানের নিঃস্তব্ধতা! অন্ধকার পৃথিবী! ভাস্করাচার্য প্রস্তরীভুত হইলেন]


লীলাবতীঃ কথা বলুন পিতা, কথা বলুন।


ভাস্করাচার্যঃ (সামান্য সুস্থবোধ করিলে) এ তুমি কি করিলে লীলাবতী! এ তুমি কি করিলে মা আমার! আমার পক্ষকালব্যাপি এত শ্রম, এত পরিকল্পনা, খণ্ডন বিধি, তোমার ভবিষ্যৎ সকলি সকলি ব্যর্থ হইয়া গেল, সকলি ব্যর্থ করিয়া দিলে! হে ঈশ্বর!


লীলাবতীঃ আমাকে শাস্তি দিন, আমাকে কঠোর শাস্তি প্রদান করুন পিতা।


ভাস্করাচার্যঃ (শূন্য দৃষ্টিতে স্থির) কিন্তু আমি ভাস্করাচার্য। আমাকে আমার নিয়ম পালন করিতেই হইবে। এ বিবাহ হইবে। অহিন্দ্রনাথকে আমি বাক্যপ্রদান  করেছি। আমার বাক্য বৃথা যায় না লীলাবতী। কল্য তোমার বিবাহ দিব। হা!হা!হা! অতঃপর অতঃপর অতঃপর আমার বিশ্রাম! হা!হা!হা!হা!


[ভাস্করাচার্য উন্মাদের ন্যায় হাস্য করিতে থাকিলেন। লীলাবতীর অধোবদনে প্রস্থান। একদন্ড পর ভাস্করাচার্য স্থির হইলেন, অচঞ্চল, বর্তমান দুর্ঘটনার কোন ছাপ তাঁহার উপর প্রভাব বিস্তার করিতে পারে নাই বলিয়া প্রতীয়মান হইতে লাগিল। ভাস্করাচার্য শয়ন করিলেন যেন স্থির অচল পর্বত।


[পঞ্চম দৃশ্যের সমাপ্তি]



(কাল ত্রয়োদশ কিস্তি এবং শেষ পর্ব)