আগে যা হয়েছেঃ খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীর একজন অন্যতম ভারতীয় জ্যোতির্বিদ ও গণিতজ্ঞ ভাস্করাচার্য গণনা করে জানতে পারলেন তাঁর একমাত্র কন্যা লীলাবতীর বিয়ে দিলে সে অতি অল্পকালের মধ্যে পতিহারা হবে কিন্তু আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ভাস্করাচার্য বিধির নিয়ম খণ্ডন করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন এবং গভীর গবেষণার ফল স্বরূপ আবিষ্কার করলেন বিধির বিধান খন্ডনের এক অভিনব উপায়। লীলাবতীর ভবিতব্যে সেই আশার জলাঞ্জলী হল। ভাস্করাচার্য প্রস্তরীভুত হলেন।  শেষাংশ ........................


[শেষ দৃশ্যারম্ভ]


কাল - রাত্রি ২য় প্রহর
স্থান - নিযুত তারকাখচিত সুবিশাল গগনের তলে উন্মুক্ত ছাদ


ভাস্করাচার্যঃ হে ভগবান! হে চিরারাধ্য পিতা মহেশ দৈবজ্ঞ। তুমি কি আছ? যদি এই সুবিশাল গগনের কোনস্থলে বিরাজমান থাক, আমায় গ্রহণ কর। ক্রন্দনধ্বনি শুনিতে কি পাও? হ্যাঁ ক্রন্দনধ্বনি। ভাসিয়া আসিতেছে কোন এক নিভৃত গৃহকোন হইতে। কাঁদিতেছে আমার লীলা। সে বিধবা! সদ্য পতিহারা! হে ভগবান তুমি তোমার বিধানে এই শাস্তি নিরূপণ করিয়াছিলে! কিন্তু এ ভারি কঠোর, ভীষন কঠিন। তুমি আমার পত্নীকে হরণ করিয়াছ, একমাত্র পুত্রসন্তানকেও হরণ করিয়াছ, শেষে কন্যাটিকেও বিধবা করিলে! এ তোমার কি লীলা! হে আমার আরাধ্য দেবতা, ঐ ক্রন্দনধ্বনির প্রতিটি কনা আমার কর্ণে শূলসম বিদ্ধ হইতেছে, আমি যে আর সহ্য করিতে পারিতেছি না। আমার সমগ্র জ্ঞান, গণিতশাস্ত্র, অধ্যয়ন, জ্যোতির্বিদ্যা সকল সকল ব্যর্থ! অ্যাঁ! আমি ... আমি ভাস্করাচার্য .... আমি পরাজিত হইলাম! সত্যই হারিয়া গেলাম! ভগবান এ কষ্ট সহ্যাতিরিক্ত! পৃথিবী দুলিতেছে, দোদুল্যমান চন্দ্র, শতসহস্র তারকারা একে একে সকলেই নামিয়া আসিতেছে ধরণী অভিমুখে। ঘুর্নায়মান সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড! আঃ!


[ভাস্করাচার্য ঘুরিয়া পড়িয়া গেলেন। তাঁহার আত্মা নশ্বরদেহ ছাড়িয়া মিশিয়া গেল দূর দিগন্তে]


                                             [সমাপ্ত]


পাদটিকাঃ


ক) জ্ঞানী ও গণিতবিদ ভাস্করাচার্য বৈদিক শাস্ত্র গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছিলেন। গভীরভাবে অধ্যয়ন শেষে তার মনে ভাবনা জাগল এই পৃথিবী ও ভিন্নগ্রহগুলি একে অপরের সাথে কেমন আকর্ষনে আবদ্ধ আছে। ১২০০ শতকে তিনি এ সকল ভাবনা ও বৈদিক শাস্ত্রের নির্ভুল তথ্যের সাহায্যে রচনা করলেন “সিদ্ধান্ত শিরোমনি' নামক গ্রন্থে। এই গ্রন্থে তিনি পরিপূর্ণভাবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কথা প্রথম উল্লেখ করেন এবং ব্যাখ্যা করেন। এখানে ১ম ঘটনাটি আমাদের অনেকেরই জানা কিন্তু ২য় ঘটনাটি হয়ত আমাদের অনেকেরই জানা নেই। অর্থাৎ নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আবিষ্কারের অন্তত ৫০০ বছর পূর্বেই ভাস্করাচার্য তা ব্যাখ্যা করেছেন বৈদিক শাস্ত্র থেকে।


খ) লীলাবতী ছিলেন অসামান্য ধীমতী এক মহিলা। তার জন্ম খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে। প্রাচীন ভারতের অদ্বিতীয় জ্যোতির্বিদ ভাস্করাচার্য তাঁর একমাত্র কন্যা লীলাবতীর ভাগ্যগণনায় জেনেছিলেন যে, তার অকাল বৈধব্য ঘটবে। আর সে কারণেই তিনি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে লীলাবতীর বিয়ের শুভক্ষণ স্থির করেছিলেন। কিন্তু লীলাবতীর অসাবধানতায় তার পিতার কাল নির্ণয়ে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটেছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বিয়ের কিছুদিন পরই লীলাবতীর স্বামী মারা যান। ভাস্করাচার্য কন্যাকে নিজের বাড়িতে রেখে পরম যত্নে বিদ্যাশিক্ষা দিতে লাগলেন। তার উদ্দেশ্যও সফল হলো। 'সিদ্ধান্তশিরোমণি' নামে ভাস্করাচার্য যে বিখ্যাত গ্রন্থটি রচনা করেন, তার তৃতীয় খণ্ডটি রচনা করেছিলেন লীলাবতী নিজে। আর এজন্য ভাস্করাচার্য গ্রন্থটির নাম দেন 'লীলাবতী'।


কাল থেকে ৩টে কবিতার সেতু পেরিয়ে এ কবিতার আসরে পা রাখতে চলেছে আমার ২৫০ তম কবিতা ‘হৃদমাঝারে’।