অাচ্ছা, অঙ্ক থেকে আতঙ্ক, নাকি আতঙ্ক শব্দ থেকে অঙ্ক শব্দটির সৃষ্টি? তা না হলে কেন অঙ্কের নাম শুনেই কচি কচি মুখগুলো আমসত্বের মতো শুকিয়ে যায়? স্কুল বা কলেজ-এর অঙ্কের মাস্টারমশাইকে মনে হয় যেন এক একজন সুপারম্যান? আসলে অঙ্কের মধ্যে কোনো গল্প বা ওই জাতীয় রসালো কিছু পাইনা বলে অঙ্ক শিখতে এতো অনাগ্রহ। তবে অঙ্ক সাবজেক্টটার প্রবতর্করা নিশ্চয়ই খুব রসিক ব্যক্তি ছিলেন. কারণ এই অাপাত ভয়াবহ খটমট সাবজেক্টটাকে নিংড়ে ‘রস’ বের করে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া তো আর সাধারণ বেরসিক লোকের কাজ নয়।


যাক এবার আসলে প্রসঙ্গে যাবার আগে একটা পশ্চাৎপট উন্মোচনের প্রয়োজন অাছে। বাল গঙ্গাধর তিলক প্রমুখ অনেক পন্ডিত ব্যক্তি প্রমান করে দেখিয়েছেন যে যীশুখৃস্টের জন্মের অন্ততপক্ষে পাঁচ হাজার বছর আগের থেকে বৈদিককাল শুরু। আর শুনতেও ভালো লাগবে যে সবার পান্ডিত্যকে হাসি মুখে মেনে নিয়ে ও নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে অঙ্ক ব্যবহারের সবচেয়ে পুরনো প্রমান আমাদের ভারতীয় সভ্যতাতেই পাওয়া গেছে। অথচ বৈদিকযুগের মুনি ঋষিদের কথা ভাবলেই - তপোবন, যজ্ঞকুন্ড, আগুন জ্বালিয়ে ঘি ঢালা, গাছের তলায় ধ্যান ইত্যাদি মনে ভেসে ওঠে। তাদের ঐ জাতীয় অবয়বের সঙ্গে বৈজ্ঞানিকসুলভ চেহারাটা মিলিয়ে দেওয়া বেশ কষ্টকল্পিত মনে হতে পরে। তবে একথা সত্যি যে যাগ-যজ্ঞের সময় যজ্ঞবেদী এবং তার পরিমিতি, ছক ইত্যাদি যেন সঠিক মাপের হয় সেজন্য মুনি ঋষিরা জ্যামিতি এবং অন্যান্য শুক্ষ্ম তত্ত্বের ব্যবহার করতেন। তাঁরা সব বিদ্যার ওপরে স্থান দিয়েছিলেন অঙ্ককে। হাজার হাজার বছর আগে লেখা “বেদাঙ্গ জ্যোতিষ”-এ পরিষ্কার লেখা আছে-“ময়ুরের মাথার ঝুঁটির মতো, সাপের মাথার মণির মতো সমস্ত বেদাঙ্গ শাস্ত্রের সর্বোচ্চে অঙ্কের স্থান।” বিরাট বিরাট সংখ্যা নিয়েও তারা হিসেব নিকেশ করতেন। যজুঃ বেদ এক থেকে পরার্ধ পযর্ন্ত সংখ্যার উল্লেখ আছে। মেধাতিথি, গৌতম, গৃভসমদ প্রমুখ মুনি ঋষিরা এই সমস্ত বড়ো বড়ো সংখ্যা বহুবার ব্যবহার করেছেন। রামায়ণে লেখা আছে বালির স্ত্রী তারার বণর্না অনুযায়ী রাবনের সৈন্য সংখ্যা ছিলো -


                        (১০)১২ + (৩৬.১০)১৪ + (১০)৫
                 (১০ টু দি পাওয়ার ১২ - এইভাবে পড়তে হবে)


আজকের অ্যালজেবরা বা বীজগণিত তখনকার দিনেও প্রচলিত ছিলো। গোড়ার দিকে একে বলা হত “কুট্টক গণিত” । পরে নাম পাল্টিয়ে হয় “অব্যক্ত গণিত”। তবে আরবীয় পন্ডিত আল খারেজিমী ভারত থেকে শেখা নানারকমের অঙ্কের পদ্ধতি লিখে একটি বই আকারে প্রকাশ করেন। তার নাম দেন “আল-জাবর ও আল মুকাবালা” - কথাটার মানে হচ্ছে যোগ করা এবং বিয়োগ করা। পরে এই বইটি লাতিন ভাষা-য় অনুদিত হলে এর নতুন নামকরণ হয় “Lunduse alzebrae et almuezra balesque”। এই নামটাই পরে সংক্ষেপে অ্যালজেবরা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার অন্যমত মেনে মধ্যযুগে এক - জাতের লোক ছিলেন যাদের স্প্যানিস ভাষা-য় বলা হতো “অ্যালজেব্রিস্টা” বা হাড় জোড়া লাগাবার লোক। অঙ্কের খটমট চেহারার সঙ্গে কথাটার যোগাযোগ টেনে হিসাবের হাড়গোড় জোড়ার কথা ভেবেই নাকি তারা বীজগণিতের নাম দেন “অ্যালজেবরা”।